ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৪৪ ধারা জারি;###; বিএনপি-ছাত্রলীগ অনড়;###;* ১৪৪ ধারা জারি * বিএনপি-ছাত্রলীগ অনড় * হরতাল ডেকেছে বিএনপি * বিজিবি মোতায়েন;###;0 ১৪৪ ধারা জারি * বিএনপি-ছাত্রলীগ অনড় ;###; ১৪৪ ধারা জারি;###;বিএনপি-ছাত্রলীগ অনড়;###;হরতাল ডেকেছে বিএনপি;###;বিজিবি মোতায়েন

টেস্ট কেস গাজীপুর

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

টেস্ট কেস গাজীপুর

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিএনপির গাজীপুরের সমাবেশ ঘিরে ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। বিএনপির জন্য গাজীপুর ইস্যু টেস্ট কেস হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। বিএনপি সকালে জনসভা করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে ছিল। প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির পরও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে। বিএনপি রাতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর শনিবার গাজীপুরে হরতাল ও সমাবেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। বৈঠক শেষে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন এ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। এদিকে একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচীর ডাক দেয় ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ শনিবার দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সংঘর্ষের আশঙ্কায় শহরজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। পথে পথে চলছে পুলিশী তল্লাশি। মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থানীয় নেতারা। অন্যদিকে গাজীপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনে অনড় অবস্থানে ছাত্রলীগ। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দলের নেতাকর্মীরা গাজীপুরমুখী হবে। যেখানেই খালেদা জিয়াকে বাধা দেয়া হবে সেখানেই সমাবেশের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বলছে, খালেদা জিয়ার গাজীপুর আসা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে। তিনিসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের টঙ্গী পার হতে দেয়া হবে না। সব মিলিয়ে সবার দৃষ্টি এখন গাজীপুরের দিকে। আলোচনা একটাই- আজ কি হবে গাজীপুরে? এদিকে বুধবার এতিমের টাকা আত্মসাত মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-ছাত্রদল বনাম ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আবারও রাজপথে প্রকাশ্যে দু’পক্ষের লাঠি ও অস্ত্রের মহড়া দেখা গেল। একে অন্যের ওপর হামলা করল। সংবাদ মাধ্যমে ছাত্রলীগসহ বিএনপি ছাত্রদলের সশস্ত্র হামলাসহ নেতাদের ছবি ছাপা হয়। যদিও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কেউ নন। হয়ত তিনি সমালোচনা ঠেকাতেই রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি-ছাত্রদলের পরিকল্পিত ও সশস্ত্র হামলার বিষয়টিও এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঘটনার পর পরই ক্ষমতাসীন দল ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। আগুনে ‘ঘি’ ঢালার মতো অবস্থা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বিভিন্ন জেলায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। আজ কি হবে গাজীপুরে ॥ সবার প্রশ্ন একটাই- আজ কি হবে গাজীপুরে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জনসভার ঘোষণা, অন্যদিকে ছাত্রলীগেরও বিক্ষোভ সমাবেশ। একই স্থানে একই সময়ে দু’পক্ষের কর্মসূচী পালনের ঘোষণার প্রেক্ষিতে শনিবার বেলা ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবু কর্মসূচী পালনে অনড় দু’পক্ষ। দু’পক্ষই পরস্পরকে প্রতিহত করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গাজীপুরের সঙ্গে পুরো দেশবাসীই উদ্বিগ্ন, কী হতে যাচ্ছে? সূত্র বলছে, গাজীপুর জেলা শহরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে জনসভা আয়োজনের জন্য মাঠসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিএনপি সমাবেশের কাজ শুরু করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। আর ছাত্রলীগও অনুমতির আবেদন করে সমাবেশের কাজ করছে। দু’পক্ষেরই একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশের প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়েছে ঘোলাটে পরিস্থিতির। গাজীপুর জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম ম-ল বলেন, খালেদা জিয়া গাজীপুরে আসবেন এটা নিশ্চিত। কোন বাধাই তাঁকে আটকাতে পারবে না। খালেদা জিয়া যথাসময়ে ঢাকা থেকে রওনা হবেন। তাঁর গাড়িবহরের সঙ্গে রাস্তায় যোগ দেবেন হাজারো নেতাকর্মী। গাজীপুর জেলার প্রবেশমুখ টঙ্গীতে খালেদার বহরের সঙ্গে যোগ দেবেন ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী। তাঁর গাড়িবহর টঙ্গী অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুর জেলার চারদিক থেকে হাজারো নেতাকর্মী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠের দিকে আসতে থাকবেন। বিএনপি সূত্র দাবি করে, খালেদার জনসভায় যোগ দিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ গাজীপুরের উত্তরাঞ্চলের নেতাকর্মীরা সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে জড়ো হবেন। গাজীপুরের পশ্চিম অঞ্চলের নেতাকর্মীরা কোনাবাড়ির আরিফ কলেজ মাঠে জড়ো হবেন। কালিগঞ্জ ও নরসিংদীসহ পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা পূবাইল কলেজ মাঠে জমায়েত হবেন। কিশোরগঞ্জসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেতাকর্মীরা রাজেন্দ্রপুরে জমায়েত হবেন। বিএনপির চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইং সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া গাজীপুরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশের নেতাকর্মীরা গাজীপুরের বিভিন্ন প্রবেশ পথ দিয়ে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে প্রবেশ করবেন। তবে খালেদা জিয়া যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হবেন সেখানেই সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবেন। অবশ্য, বিএনপির এমন প্রস্তুতিকে উড়িয়ে দিচ্ছে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীর আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গাজীপুরে শনিবারের সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে মাঠে নেমেছে শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। তিনি জানান, শনিবার গাজীপুর জেলার সকল ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে আসবেন। গাজীপুর জেলার প্রবেশদ্বার টঙ্গীতে খালেদা জিয়ার আগমন প্রতিহত করা হবে। তাঁকে গাজীপুরের মাটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এছাড়া, গাজীপুর জেলার সকল প্রবেশমুখে নেতাকর্মীরা অবস্থান করবেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, শনিবার ভাওয়াল কলেজ মাঠে কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। কোন সমাবেশ হবে না সেখানে। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে জনসভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে বলেও জানান পুলিশ সুপার। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গাজীপুর জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। খালেদা জিয়ার জনসভার দিন গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গাজীপুর জেলা প্রশাসন শুক্রবার দুপুর থেকে জেলায় সব ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, শনিবার বেলা ২টায় গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ দেয়ার কথা। এই জনসভা বানচাল করতেই সরকার পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ফখরুল দাবি করেন, তাঁরা জনসভার জন্য আগেই অনুমতি নিয়েছিলেন। সব নিয়ম মেনেই তা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার বিরোধী দলকে জনসভা করতে দেবে না। সেজন্য গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ যা কিছু করছে, তা সাজানো নাটকের বিভিন্ন পর্ব ছিল। সরকার শুধু ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে নয়, গোটা গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী রাখতে বিরোধী দল দমনে ‘শেষ মরণ কামড়’ হিসেবে নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। শুক্রবার বিকেলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়ে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তিনি বলেছেন, এই অবৈধ সরকার কোনভাবেই জনগণকে কাছে টানতে না পেরে বীভৎস প্রতিহিংসায় মেতে উঠেছে। গোটা দেশকে তারা একদলীয় অপশাসনের শৃঙ্খলে বন্দীশালায় পরিণত করেছে। এখন তারা শেষ মরণ কামড় দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই প্রতিহিংসার সর্বশেষ বহির্প্রকাশ হচ্ছে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার। গাজীপুরজুড়ে উত্তেজনা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর থেকে জানান, আগামী ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে চলতি বছরের শেষ রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসেবে গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে আগামী ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) ২০ দলীয় জোট জনসভা আহ্বান করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য রাখার কথা ছিল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনে জনসমর্থন আদায়ে দেশব্যাপী গণসংযোগের অংশ হিসেবে গাজীপুরে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তারেক জিয়ার কটূক্তির প্রতিবাদে ইতোমধ্যে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার আগমন ও জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে একই দিন একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করে গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশী অভিযান, আটক ৯ ॥ নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা পরিকল্পনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ গাজীপুর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বশির উদ্দিন, পূবাইল ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি হারুন অর রশিদ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ শাখার সদস্য আলমগীর হোসেন, শিশির চৌধুরী, ইজ্জত আলী ও রনি মিয়াসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৯ নেতাকর্মীকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতার খোঁজে তাদের বাসায় অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ মোতায়েন ॥ জেলা শহর, বিএনপি কার্যালয়, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে শুক্রবার সকাল থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠ এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই জলকামান ও অ্যাপাচিসহ পুলিশের বিভিন্ন যানবাহন টহল দেয়। জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা জানান, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় শুক্রবার সকাল থেকে কলেজ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে ৫ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মিছিল-সভা ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কটূক্তির প্রতিবাদে এবং ভাওয়াল কলেজ মাঠে বেগম জিয়ার জনসভা প্রতিহত করার লক্ষ্যে শুক্রবার সকাল হতেই ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী মহিলা লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ সংলগ্ন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, চান্দনা চৌরাস্তাসহ গাজীপুর শহর এলাকা প্রদক্ষিণ করে এবং সমাবেশ করে। কৃষক লীগের গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মঞ্জুর হোসেন খান, আলতাব হোসেন, আ. কাদির ম-ল, আফজাল হোসেন রিপন সরকার, হিরা সরকার প্রমুখ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছায়্যেদুল আলম বাবুল জানান, ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে আমাদের জনসভার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। আমাদের আন্দোলনকে ভয় পেয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে একই স্থানে ছাত্রলীগ দিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। ১৪৪ ধারা জারির পর আমাদের জেলা নেতাদের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বৈঠক থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে। গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দীপ বলেন, আমরা ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের কর্মসূচীর সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কৃষক লীগ যেহেতু একাত্মতা ঘোষণা করেছিল তাই আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। স্থানীয় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান গাজীপুরে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। শুক্রবার বিকেলে টঙ্গীতে গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সালাহ্ উদ্দিন সরকারের বাসায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশাসনের কাছে ওই অনুরোধ জানান। নিষেধাজ্ঞা পূর্ব-পরিকল্পিত ॥ খালেদা জিয়ার জনসভা স্থলে সভা-সমাবেশ করার নিষেধাজ্ঞাকে পূর্ব-পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার জনসভা বানচাল করতেই পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। জনসভার জন্য আগেই অনুমতি নেয়া হয়েছিল। আইন মেনেই জনসভা করা হচ্ছিল। কিন্তু সরকার বিরোধী দলকে জনসভা করতে দেবে না। সে জন্য গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরের স্থানীয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ যা কিছু করছে তা সাজানো নাটক ছিল। সরকার শুধু গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে নয়, সারাদেশেই ১৪৪ ধারা জারি করেছে। গাজীপুরে বিএনপির সমাবেশ স্থলে ১৪৪ ধারা জারির পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির গুলশাল কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাজীপুরে জনসভা করার জন্য আমরা অবশ্যই যাব। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে নিশ্চিত করা। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরও ২০ দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত জনসভাস্থল দুই দিন ধরে ছাত্রলীগ দখল করে নিয়েছে। এটাকে নৈরাজ্য অভিহিত করে বলেন, পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রলীগ মাঠ দখল করে নিয়েছে। বকশীবাজারের ঘটনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খানসহ দলের নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশির প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা দেশবাসী দেখেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া নিরাপত্তার স্বার্থেই বকশীবাজারের স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ আদালত জজকোর্টে বা যথাস্থানে স্থানান্তর করা হোক। খালেদা জিয়া আদালতের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই বকশীবাজারে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে হাজিরা দিতে যান। কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তার প্রাণহানির চেষ্টায় গাড়িবহরে হামলা চালায়। নেত্রীকে দেখার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর হামলা করে। গাজীপুরে আজ বিএনপির হরতাল আহ্বান ॥ গাজীপুরে আজ শনিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল এবং সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলন বৈঠক শেষে শুক্রবার রাতে এ ঘোষণা দেন। এর আগে শুক্রবার রাতে গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের পূর্ব-নির্ধারিত জনসভায় ১৪৪ ধারা জারির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। গুলশানে চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রাত আটটা ২৫ মিনিটে এ বৈঠক শুরু হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু, রুহুল আলম চৌধুরী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলার নেতা হাসান উদ্দিন সরকার ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ। এছাড়া গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, গাজীপুর জেলা বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন সরকার, এসএম শাহানশাহ আলম, হেলাল উদ্দিন আহমেদ (ভিপি হেলাল) প্রমুখ। গাজীপুরে বিজিবি মোতায়েন বাংলানিউজ জানায়, আজ শনিবার হরতালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গাজীপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আবদুল মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাত সোয়া দশটায় গাজীপুর শহরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বিজিবি পৌঁছেছে। রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহযোগিতা করবে।
×