ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে কাঁপছে দেশ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

শীতে কাঁপছে দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। আর ঘন কুয়াশার কারণে দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে হিমালয় থেকে বয়ে আসা হিমেল বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই হিমেল হাওয়া আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। পৌষের শুরুতে সারাদেশে শীত তেমনভাবে না পড়লেও এখন পৌষ যেন তার স্বরূপে ফিরেছে। আর পৌষের তীব্র শীতে এখন নাকাল গোটা দেশের মানুষ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশে কনকনে শীত পড়লেও মাত্র কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহে জেলা ও উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর নিচে নেমে এলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় পড়ে। সে হিসেবে যশোর, কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী, চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫, কুষ্টিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ও ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গলে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রী, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৫, বগুড়ায় ১০ দশমিক ৮, দিনাজপুরে ১০ দশমিক ৪, সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ৫, সাতক্ষীরায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশের কোন কোন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এখন যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। তবে এ অবস্থা আরও দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হতে পারে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফের দেশের কোন কোন অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কুয়াশা ও তাপমাত্রা কম হওয়ার কারণে শৈত্যপ্রবাহ মনে হচ্ছে। তবে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে না। শীতের বর্তমান পরিস্থিতি আরও দুই থেকে তিন দিন চলবে। কারণ হিমালয়ের গা ঘেঁষে সাইবেরিয়ান কনকনে শীতল বায়ুপ্রবাহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। শুক্রবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রী। আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আর শনিবারের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাজধানীতে কনকনে শীত ॥ চলতি শীত মৌসুমে রাজধানীতে এর আগে শীত নগরবাসীকে কাবু করতে পারেনি। তবে পৌষের প্রায় দুই সপ্তাহের মাথায় শুক্রবারের তীব্র শীতে ধরাশায়ী হয়েছেন নগরবাসী। প্রতি শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীতে মানুষের চলাচল কিছুটা কম হলেও গতকালের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, নিউমার্কেট, মহাখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ সব এলাকায় মানুষের চলাচল ছিল খুবই কম। একান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ বাইরেই বের হননি। আর শীতের কারণে নগরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোও ছিল ফাঁকা। এদিকে রাজধানীতে তীব্র শীত পড়ার কারণে হঠাৎ করেই চাহিদা বেড়েছে শীতের পোশাকের। শুক্রবার বিকেলে ফার্মগেটের বিভিন্ন দোকানে কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট কিনতে সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাথেও অনেককেই শীতের পোশাক কিনতে দেখা গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার খবর : কুড়িগ্রাম ॥ তীব্র শীত ও কনকনে ঠা-ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। হাঁড় কাঁপানো ঠা-ায় প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। নীলফামারী ॥ নীলফামারী ও দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের আট জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠা-ায় হাত-পা কুঁকড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঠা-ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। শুক্রবার দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। রাজশাহী ॥ উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বুধবার থেকে রাজশাহীতে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। ফলে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ পড়েছেন বেকায়দায়। শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম ॥ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং উপকূলীয় এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। পাহাড় ঘেরা এবং গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রকোপ কিছুটা বেশি। সন্ধ্যার পরই সেখানে তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি হ্রাস পায়। নওগাঁ ॥ শুক্রবার দিনভর নওগাঁর আকাশ ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। ক্ষণিকের জন্যও সূর্যের দেখা মেলেনি। গত দু’দিন ধরে জেলার সর্বত্র ঘন কুয়াশাসহ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে। উত্তরের হিমশীতল বাতাস শীতের প্রকোপ বাড়িয়ে দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ ॥ শুক্রবার দিনভর ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে সিরাজগঞ্জের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। কনকনে বাতাসে মানুষ রাস্তায় বের হতে পারছেন না। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। বরিশাল ॥ শৈত্যপ্রবাহের কারণে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। শুক্রবার সারাদিনেও সূর্যের মুখ দেখা মেলেনি। সকাল থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃদু শীতল বাতাস বয়ে যাওয়ায় শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা ॥ গত এক সপ্তাহ ধরে জেলায় শীতের মাত্রা বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরছেন মানুষজন। শুক্রবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঈশ্বরদী ॥ প্রচ- ঠা-ায় ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, বরাইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া, ভেড়ামারা প্রভৃতি এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ সব এলাকার শত শত চাতালে সারাদিনই সূর্য়ের আলোর অভাবে ধান শুকানোর কাজ বন্ধ থাকে। কলকাতায় মৌসুমের শীতলতম দিন ॥ শীতের কোন সীমানা নেই। তাই প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতা শহরেও শুক্রবার জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। আর চলতি শীত মৌসুমে শুক্রবারই সবচেয়ে তীব্র শীত পড়েছে কলকাতায়। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কলকাতার আলীপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতায় শুক্রবার যে শীত পড়েছে, সেটা স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে তিন ডিগ্রী কম। চলতি শীত মৌসুমে এই প্রথম এত কম তাপমাত্রায় পৌঁছে কলকাতা। শুধু কলকাতায় নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানেও পড়েছে তীব্র শীত। আর শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যম।
×