ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তরুণ প্রজন্মকে সান্তাক্লজ থেকে ফেরাতে কৌশল

বড়দিন এলে চীনে পশ্চিমা প্রভাব নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ে

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

বড়দিন এলে চীনে পশ্চিমা প্রভাব নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ে

ইংরেজী ‘হামবাগ’ বা কৌশলপূর্ণ প্রতারণা শব্দের হয়ত কোন চীনা প্রতিশব্দ নেই। তবে গত কয়েকদিনে সরকারীভাবে নিরীশ্বর ঘোষিত দেশটিতে বড়দিন পালন নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটে গেল তা ওই শব্দকে যেন সামনে নিয়ে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস। সৈকত শহর ওয়েনঝুর স্কুলগুলোতে বড়দিন পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিক্ষা কর্মকর্তারা যে ডিক্রি জারি করেছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রসমাজের মুষ্টিমেয় অংশ। বুধবার মধ্যাঞ্চলীয় হুনান প্রদেশে ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে তারা যে ব্যানার প্রদর্শন করে তাতে লেখা ছিল, বেজিংয়ের উচিত হবে না কোন বিদেশী উৎসব পালন করা। এর আগে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিয়ান শহরের ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের তিন ঘণ্টার একটি মুভি দেখতে বাধ্য করা হয়। যেখানে প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াসের গুণকীর্তন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যেন বড়দিনের উৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারে সে জন্য ক্লাসরুমে আটকে রাখতে তাদের ছবিটি দেখতে বাধ্য করা হয়। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা ছবিটি দেখছে কি না তা নজরদারি করতে ফ্যাকাল্টি সদস্যরা ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়িয়েছিলেন। এরই প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে কর্মসূচী পালন করে। তাদের ব্যানারে বিদ্রƒপ করে লেখা ছিল, ‘ভাল চীনা ছেলে ও মেয়ে হও। বিদেশী উৎসব বর্জন কর।’ বড়দিনকে কেন্দ্র করে কমিউনিস্ট শাসিত দেশটিতে বিভিন্ন রকম কৌশল অবলম্বন করা নতুন কোন ঘটনা নয়। ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সব সময়ই তাদের ভাষায় পশ্চিমা মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরব রয়েছে। তারা মনে করে উৎসবকে কেন্দ্র করে চীনের তরুণ সমাজের মধ্যে হলিউডের অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর আগেও বড়দিনের সময় চীনা ছেলেমেয়েরা যেন সান্তাক্লজকে দেখতে না পারে সে জন্য কর্তৃপক্ষ নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে। তবে এবার দেশটির খ্রীস্টান কমিউনিটির দিক থেকে উদ্বেগ করা হয়েছে যে তাদের ধর্ম পালনের বিরুদ্ধে বছরজুড়ে কর্তৃপক্ষের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের ৪শ’ চার্চ এখন কর্তৃপক্ষের তোপের মুখে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ওয়েনঝু শহরের খ্রীস্টান উপসনালয়গুলো সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে। বেশি সংখ্যক চার্চ থাকায় প্রদেশটি চীনের জেরুজালেম হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। এসব কিছুর পরও চীনে বড়দিনের বাণিজ্যিক গুরুত্ব কমে যায়নি। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশটিতে বেচাকেনার হার উর্ধমুখী হয়েছে। যদিও ধর্মীয় উৎসবকে কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করে থাকে তার পরও এই মৌসুমে চীনের তরুণদের উপহার আদান প্রদানের হার যথেষ্ট বেড়েছে। চীনের প্রধান বাণিজ্যক কেন্দ্র সাংহাইয়ের একজন পাইকারি বিক্রেতা জানিয়েছেন, এবারের বড়দিন উপলক্ষে তাদের বিক্রি ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
×