ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহকর্মী ও পথশিশু সমাচার

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

গৃহকর্মী ও পথশিশু সমাচার

শিশুকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী। সেই লক্ষ্যে যে কোন দেশের সার্বিক উন্নয়নে শিশুদের জন্য সুষ্ঠু কার্যক্রম রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের প্রতি সমাজ এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের জাতীয় নীতিতে শুরু থেকেই শিশুদের কল্যাণ চিন্তা স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (৪) ধারা অনুযায়ী শিশুদের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। শিশুদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন ও ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। শুধু তাই নয়, এর বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক কারণে এই শিশুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অল্প বয়সেই নানা ধরনের কায়িক শ্রমে নিয়োজিত। এদের মধ্যে গৃহকর্মী ও পথশিশুর কথা উল্লেখযোগ্য। শুক্রবার সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে চার লাখের মতো শিশু গৃহকর্মে নিয়োজিত। যাদের ৮৩ শতাংশই মেয়ে শিশু। এদের বয়স ৫-১৮ বছরের মধ্যে। গৃহকর্মে এই শিশুদের নিয়োজিত হওয়ার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, গ্রাম ও শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মসূচীর দূরত্ব, বাবা-মার শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব। জীবন ও শৈশবের বিনিময়ে অসংখ্য শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত। এর মধ্যে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা অধিক ঝুঁকিতে। এসব শিশু প্রায় সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে শিশু-কিশোরী মেয়েরা কাজ করে থাকে। সংসারের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা ছাড়াও সন্তান পালন, পানি তোলা, ঘর মোছা, হাঁড়ি-পাতিল-বাসন ও কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করা, সবজি কাটা, বাটনা বাটাসহ যাবতীয় কাজ তারা করে থাকে। বিনিময়ে তারা পায় খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ। সামান্য বেতনও দেয়া হয়। অনেক সময় গৃহে তাদের তালাবদ্ধ করে রেখে যাওয়া হয়। ফলে তারা বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। এই জীবনকে অনেকে ভাগ্যলিপি বলে মেনে নিয়েছে। তাদের কেউ কেউ যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়। তাদের ১২-১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। নেই ছুটি, নেই অবসর। অনেক ক্ষেত্রেই খাবার দেয়া হয় সবার শেষে, বসতে দেয়া হয় মেঝেতে, ঘুমাতে দেয়া হয় রান্না ঘরে। একই প্রতিবেদনে পথশিশুদের জীবনযাপনের দুর্বিষহ চিত্রটিও উঠে এসেছে। যারা অধিকাংশ সময়েই রাস্তায়, পার্কে, ট্রেন ও বাস স্টেশনে, লঞ্চঘাটে, সরকারী ভবনের নিচে ঘুমায়। যাদের কেউ কেউ প্রতিনিয়তই নাইটগার্ড কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। অধিকাংশ পথশিশু তিন বেলা খাবার পায় না। ফলে তারা বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের পচা-বাসি খাবার, এমনকি ডাস্টবিনের দুর্গন্ধযুক্ত খাবারও খেয়ে থাকে। ২০০৫ সালে পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে দেশের ৬টি বিভাগীয় শহরে পথশিশুর আনুমানিক সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ এবং একই জরিপে বলা হয় ২০১৪ সালে এই সংখ্যা হবে প্রায় ১২ লাখ। আমরা জানি সরকার শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বাস্তবে কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে তার পরিসংখ্যান চোখে পড়ছে না। আমরা মনে করি এই পথশিশুদের জন্য বাস্তবমুখী কিছু করা গেলে এরা হতে পারে দেশের অমূল্য সম্পদ। অসহায় শিশুদের ভাতা চালু করার বিষয়টি যদিও কঠিন, তবে একেবারে অসম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যায়। শিশু গৃহকর্মী এবং পথশিশু এরা এ দেশেরই নাগরিক। এই শিশুদের অধিকার এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
×