ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসন মেলা জমজমাট

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

আবাসন মেলা জমজমাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চতুর্থ দিনে এসে জমে উঠেছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) শীতকালীন আবাসন মেলা। শনিবার ছুটির দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর ছিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মেলা প্রাঙ্গণ। সকাল ১০টায় মেলার প্রবেশদ্বার খোলার আগেই ক্রেতার আগমন ঘটে। হাঁড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতিও বেড়ে যায়। শুধু রাজধানীবাসীই নন, ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও মেলাতে এসেছেন অনেক ক্রেতা-দর্শক। কেউ এসেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে, আবার কেউ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে। শেষ বেলায় মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীতে ভরে যায়। স্বপ্নের আপন ঠিকানার সন্ধানে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে বেড়ান ক্রেতা-দর্শনার্থী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে উপস্থাপন করছেন ভবনের নকশা আর প্লটের লোকেশন। তুলে ধরছেন মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তথ্য। এবারের মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন বিক্রয় কর্মীরা। ক্রেতাদের বিপুল আগ্রহকে কেন্দ্র করে আবাসন খাত দীর্ঘদিনের খরা থেকে বেরিয়ে আসবে বলেও মনে করেন রিহ্যাব নেতারা। শনিবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলাতে ক্রেতার সমাগম যেমন বেশি, তেমনি প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির পরিমাণও মন্দ নয়। আয়োজক রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) কর্তৃপক্ষ এবং মেলায় অংশ নেয়া হাউজিং কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় শুক্রবার সবচেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনাথীর উপস্থিতি আশা করেছিলেন আবাসন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। শনিবারও এসেছেন বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থী। অনেকেই আসছেন, ঘুরে দেখছেন। কেউ প্লট বুকিং দিচ্ছেন আবার ধারণা নিচ্ছেন কোথায় কোন প্রকল্প রয়েছে। মেলাতে ঢুকেই ক্রেতা বা দর্শনার্থীরা দলবেঁধে ঘুরছেন এক স্টল থেকে আরেক স্টলে। খোঁজ নিচ্ছেন কোন কোম্পানি কোন লোকেশনে কী প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে, কোন কোম্পানি কী ধরনের সুবিধা দিচ্ছে, প্রজেক্টগুলো রাজউকের অনুমোদন আছে কি-না ইত্যাদি নানা বিষয় জানতে চাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর মিরপুরের কাজিপাড়া এলাকা থেকে দুই মেয়েসহ মেলায় এসেছেন একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা শামিম আহমেদ। রাজধানীতে নিজের ও পরিবারের লোকজনের একটি মাথাগোঁজার ঠাঁই খুঁজতেই মেলায় এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী এবং সন্তানরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য। কিন্তু সামর্থ্যে না কুলানোয় কিনতে পারিনি। সংসারের খরচ মিটিয়ে ব্যাংকে কিছু টাকা জমেছে। এর সঙ্গে আরও কিছু ঋণ নিয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনা যায় কিনা, তা যাচাই করতেই মেলায় এসেছি। তিনি বলেন, ৮ থেকে ১০টি কোম্পানির স্টলে ঘুরছি। এদের বিভিন্ন প্রজেক্টের ব্রুশিয়ার নিয়েছি। ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। জানতে চেয়েছি কোন কোম্পানি কেমন দাম নিচ্ছে এবং কার প্রজেক্ট কোথায়। কথা বলে গেলাম, পরে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেব। রাজধানীর ধানমন্ডির শংকর এলাকা থেকে মেলায় ঘুরতে এসেছেন কবির হোসেন ও নীলিমা ইয়াসমিন পলি দম্পতি। ওই এলাকায় এখন ভাড়া বাসাতে থাকেন তাঁরা। এক ছেলে এবং এক মেয়ে লেখাপড়া করে ধানম-ি এলাকারই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ কারণে ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান তাঁরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে মেলায় ঘুরেছেন তাঁরা। কথা বলেছেন বসুধা বিল্ডার্স, রূপায়ন, কনকর্ড, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, নিউ ভিশনসহ আরও কয়েকটি ডেভেলপার কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তবে ওই এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম অত্যধিক বলে জানায় এ দম্পতি। কবির হোসেন বলেন, এককালীন টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য এ মুহূর্তে নেই। কিস্তিতে নিতে হবে। কিন্তু ধানমন্ডি এলাকার কোন ফ্ল্যাটই কোটি টাকার নিচে নেই। এত টাকা দিয়ে কীভাবে নেব। তাই আশপাশের কোন এলাকায় কম দামে ভালমানের ফ্ল্যাট পাওয়া যায় কিনা, দেখছি। আরও কিছুক্ষণ ঘুরে দেখি। সে রকম কোন ফ্ল্যাট পাওয়া যায় কিনা। তবে নীলিমা ইয়াসমিনের দাবি, ধানমন্ডিতেই নিতে হবে ফ্ল্যাট। তিনি অনেকটা আবদারের সুরে বলেন, আমি ধানমন্ডি ছাড়া অন্য কোথাও ফ্ল্যাট কিনব না। রিহ্যাব মেলায় কেউ আবার এসেছেন শুধু ঘোরার জন্যই। বনশ্রী থেকে আসা ইকবালুর রহমান বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় ছেলে এবং মেয়ে বায়না ধরল বেড়াতে যাওয়ার। চিন্তা করে দেখলাম বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব মেলা চলছে। এখান থেকেই ঘুরে আসা যায়। তাই চলে এলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে। ভালই লাগছে মেলায় ঘুরে। তবে মেলার প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা করা ঠিক হয়নি। এটি অনেক বেশি হয়ে গেছে। এদিকে মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির পরিমাণ প্রথম দুই দিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার বেশ ভাল হয়েছে। তবে প্রথম দুই দর্শনার্থীরা বুকিং দেয়ার চেয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছেন বেশি। বসুধার সিনিয়র এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার দেলোয়ার মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের ফেয়ারে বসুধা বিল্ডার্সের স্টলে যেমনি ক্রেতাদের ভিড় তেমিন প্রডাক্টের প্রতিও ব্যাপক চাহিদা। আমরা গ্রাহকদের কাছে এ পর্যন্ত অনেক প্রডাক্ট বিক্রয় করেছি এবং আরও প্রডাক্ট বিক্রির প্রক্রিয়াধীন। তাছাড়াও মেলা উপলক্ষে বসুধার অফিসেও বিক্রি বেড়ে গেছে। বসুধার স্টলে কথা বলে জানা যায়, ফেয়ারে বসুধার বিভিন্ন প্রডাক্টের পাশাপাশি আছে একটি চমকপ্রদ আবাসিক প্রকল্প ‘বসুধা সিটি’। বসুধার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথম প্রকল্প বসুধা আইল্যান্ডের বিশাল সাফল্যের পর বসুধার দ্বিতীয় আবাসিক প্রকল্প ঢাকার কাছেই সোনারগাঁওয়ে সবচাইতে খোলামেলা জায়গা। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েসংলগ্ন সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নগরায়ণ ‘বসুধা সিটি’। প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমি নিয়ে পরিকল্পিত নগরায়নে বিশ্বাসী বসুধা বিল্ডার্স তাদের সমস্ত মেধা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে বলে জানানো হয়। এছাড়া ঢাকার নিকটতম দূরত্বে হওয়ায় প্রকল্পটির প্রতি স্বভাবতই ক্রেতা সাধারণের আগ্রহ একটু বেশিই। নির্মল ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা ‘’ প্রকল্পটি। আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার (মার্কেটিং এ্যান্ড সেলস) এস এম জসিম উদ্দিন বলেন, নগরীর মধ্যবিত্ত মানুষের কথা চিন্তা করেই আমরা নওয়াব গ্রীন সিটি নির্মাণ করছি। ক্রেতারা মাত্র ৪০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, মাওয়া রোডের ঝিলিমিলি প্রকল্পসংলগ্ন স্থানে গড়ে তোলা হচ্ছে স্মার্ট ডুপ্লেক্স। যেখানে সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বসবাস করা যাবে।
×