ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল ॥ স্বস্তির মূল্যস্ফীতি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুফল ॥ স্বস্তির মূল্যস্ফীতি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদায় ঘণ্টা দ্রুত বাজার যে কয়েকটি কারণ তার মধ্যে অন্যতম ছিল জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। সেসময় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। চারদিকে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত মানুষ হাঁসফাঁস করতে থাকে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা চলে কখন বিদায় হবে এই অরাজনৈতিক সরকারের আর আসবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার। পরবর্তীতে নির্বাচনে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করে। বর্তমানে অর্থনৈতিক সূচকগুলো অগ্রগতির ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে সরকার। ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত গত ৬ বছরের গড় সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্টে ৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের ৮ দশমিক ৩০ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এমনই চিত্র পাওয়া গেছে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য পর্যালোচনা করে। এই সাফল্যের পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, একটি বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং অন্যটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজারে বোরো, আমন ধান ও সবজি উৎপাদনসহ সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির প্রভাব। বর্তমান সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে বলেছেন যেহেতু ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট নেই তাই সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির প্রয়োজন নেই। সূত্র জানায়, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে গড় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছিল (১৯৯৫-৯৬ ভিত্তিবছর ধরে) ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল আট দশমিক ১২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে ওই মূল্যস্ফীতি ছিল তার আগের দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন এসেছে। শুধু ২০১০-১১ অর্থবছরে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। তারপর গত কয়েক বছর ধরেই মূল্যস্ফীতির এ ধারা নিম্নমুখী রয়েছে। এ পরিস্থিতিকে সরকারের একটি অন্যতম অর্জন হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যানবিদরা। তাঁরা বলছেন, বর্তমান সরকারের গত মেয়াদ এবং চলতি মেয়াদের বর্তমান সময় পর্যন্ত অনেকগুলো জায়গায় সাফল্য রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে রাখা। মূল্যস্ফীতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে এবং এক্ষেত্রে সফলতার কারণ হিসেবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, শাক, সবজি ও ফলমূলসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের ব্যাপক সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মূল্যস্ফীতি আমাদের হাতের মুঠোয় রয়েছে। তিনি জানান, আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরও কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে। কেননা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এখন শূন্য মূল্যস্ফীতি রয়েছে। আর ভারত থেকে আমরা ব্যাপক আমদানি করি। ফলে আমদানি ব্যয় কম হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায়ও আমদানি ব্যয় কম হচ্ছে। আমরা কিন্তু মূল্যস্ফীতিও আমদানি করে থাকি। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও আমাদের বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে হয়। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ছয় বছরের গড় মূল্যস্ফীতি হচ্ছে নতুন ভিত্তি বছর (২০০৫-০৬) ধরে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছিল পয়েন্ট টু পয়েন্টে সাত দশমিক ৬০ শতাংশ, খাদ্যপণ্যের সাত দশমিক ৯১ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছিল সাত দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছিল পয়েন্ট টু পয়েন্টে ছয় দশমিক ৮২ শতাংশ এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ছয় দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে হয়েছিল সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় দশ দশমিক ৯১ শতাংশে। ওই সময় খাদ্যপণ্যে অনেক বেড়ে গিয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্টে মূল্যস্ফীতি হয় ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ছয় দশমিক ২১ শতাংশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ২০১১-১২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে। এ সময় সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্টে কমে গিয়ে দাঁড়ায় আট দশমিক ৬৯ শতাংশে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে হয় সাত দশমিক ৭২ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে হয় দশ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখীর ধারা অব্যাহত থাকে। এ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশে, খাদ্যপণ্যে কমে হয় পাঁচ দশমিক ২২ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয় নয় দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে হয় সাত দশমিক ৩৫ শতাংশ, খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আট দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহিভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয় পাঁচ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর (২০১৪-১৫) এখনও শেষ না হলেও নবেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মুদ্রানীতির তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল। মূল্যস্ফীতি কমতির দিকে। অর্থবছর শেষে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা অর্জন সম্ভব হবে। যদিও মূল্যস্ফীতি খুব ধীরে ধীরে নামছে কিন্তু এটা নিম্নমুখী হওয়াটাই বড় কথা। দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার সম্পর্কে জানা গেছে, গত নবেম্বর মাসে সহনীয় পর্যায়েই রয়েছে দেশের মূল্যস্ফীতি। ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে এই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ২১ শতাংশে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ছয় দশমিক ৬০ শতাংশ। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৪৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল সাত দশমিক ১৬ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৩৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল সাত দশমিক ১১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৪৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ছয় দশমিক ৫১ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৭৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৬১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল সাত দশমিক ২৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৩৯ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ২৬ শতাংশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সফল। বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এটি পয়েন্ট টু পয়েন্টে মূল্যস্ফীতি কমার একটি অন্যতম কারণ। তাছাড়া সরকারের সঠিক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পণ্য সরবরাহ চেইন সঠিকভাবে কাজ করায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে পণ্যের কোন সঙ্কট নেই। এটিও মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র জানায়, সার্বিক মূল্যস্ফীতি হ্রাস বৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির ওপর। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। সেক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে উদ্বৃত্ত চালের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন (প্রায় ৪০ লাখ টন) চাল, যা ইচ্ছে করলেই রফতানি করা যায়। বলা হয়েছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ হবে চাল রফতানিকারক দেশ। ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় চাল রফতানি শুরুও করেছে বাংলাদেশ। ভারতে ৩০ হাজার টন চাল রফতানির বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, গত পাঁচ বছর মেয়াদকালে সরকার দক্ষতার সঙ্গে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করে। এ সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন মোট দেশজ আয়, কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস, সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। কৃষি খাতে সরকারে ভর্তুকি, কৃষকদের মাঝে কৃষি যন্ত্রপাতি হস্তান্তর, কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করে তোলাসহ নানা উদ্যোগের ফলই হচ্ছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ২৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। সরকার গত মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে চাল উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন মেট্রিক টনে। ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ উভয় অর্থবছরে ৩৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হয়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। কষি ক্ষেত্রে এ সাফল্য অর্জন করতে কৃষি উপকরণে বিপুল ভর্তুকি দিতে হয়েছে সরকারকে। এ সময়ে প্রায় ১ কোটি ৪৪ লাখ কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। মাত্র দশ টাকা ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলেছেন ৯৫ লাখেরও বেশি কৃষক। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেনি, বর্তমানে উদ্বৃত্ত চালের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বলা হয়েছে সদ্য সমাপ্ত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী লোকসংখ্যা ১৫৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন। এ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৪)। এর মধ্য থেকে ১২ শতাংশ হিসাবে ৪ দশমিক ১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল কৃষকদের বীজ, পশুখাদ্য ও নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বাদ দিতে হবে। এর পর নিট চালের উৎপাদন থাকে ৩০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এখান থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির খাবার জন্য ১৫২ কেজি (হাউজ হোল্ড ইনকাম এ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে ২০১০) করে ধরলে চাল লাগে ২৩ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত থাকে ৬ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল। সেখান থেকে কাবিখা, ভিজিডি, ভিজিএফসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে সরকারীভাবে রিজার্ভ বাদ দিয়েও রফতানিযোগ্য চাল রয়েছে দেশে, যা সরকার ইচ্ছে করলেই রফতানি করতে পারে। সূত্র জানায়, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল ২৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে বকেয়াসহ ৯ হাজার, বিদ্যুত খাতে সাড়ে ৫ হাজার, জ্বালানি খাতে ৭ হাজার ৯৫০, খাদ্য খাতে ১ হাজার ৭৫৯, রফতানি খাতে ২ হাজার ৭৫০ ও অন্যান্য খাতে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত চার পাঁচ বছরে কৃষি খাতে মোট ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বর্তমানে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন, কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন নেটওয়ার্ক গঠন ও কৃষি গবেষণার কাজে জোর দেয়া হচ্ছে। অবশ্য বর্তমান ৪৯০টি কৃষি বিপণন দল ১৮ হাজার কৃষক ক্লাব ও ৬০টি উপজেলায় গ্রোয়ার্স মার্কেট ও ২১টি জেলায় পাইকারি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন করে এসব খাত সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতি হবে ৭ শতাংশ, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
×