ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

0 এক বছরের মাথায় তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন ;###;0 তবু বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে জোর লবিং চালাচ্ছে বিএনপি

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশীদের মাথাব্যথা নেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশীদের মাথাব্যথা নেই

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের এখন আর কোন মাথাব্যথা নেই। এই নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়টি এখন তাঁরা জনগণের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমান সরকার গঠনের এক বছরের মাথায় তাঁদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আর নতুন বছর সামনে রেখে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচীতে সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানিয়েছেন বিদেশী কূটনীতিরা। তবে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশী কূটনৈতিকদের সঙ্গে এখনও জোর লবিং অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। দশম জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন কোন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বর্তমান সরকারের টানাপোড়েন শুরু হলেও এখন আর সেটা নেই। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা এখন বর্তমান সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নেয়ার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের পরে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক ঢাকা থেকে বিদায় নিয়েছেন। আবার নতুন কূটনীতিকরাও ঢাকায় এসেছেন। তবে ঢাকা থেকে বিদায় নেয়ার আগে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে তাদের কোন মন্তব্য নেই। এখানকার জনগণই ঠিক করবে, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে। এ ছাড়া তাদের নিজ নিজ দেশের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচীতে সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সরকার গঠন করা হয় ১২ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী বর্তমান সরকারের প্রায় এক বছর হতে চলেছে। নির্বাচনের পরে কোন কোন দেশের কূটনীতিকরা দুই প্রধান দলের মধ্যে সংলাপের কথা বললেও এখন তারা সেই অবস্থান থেকে সরে গেছেন। এ ছাড়া নতুন বছর সামনে রেখে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁরা সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানিয়েছেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সরকার গঠনের এক বছরের মাথায় বিদেশী কূটনীতিকদের ইতোমধ্যেই বর্তমান সরকার বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণতন্ত্রের সহায়ক মুক্ত গণমাধ্যম, সক্রিয় সুশীল সমাজ ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, কার্যকরী সংসদ এবং একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনসহ গণতন্ত্র সহায়ক প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরও জোরদার ও স্বাধীন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে চলেছে। এ ছাড়া সব ধররের সহিংসতা বন্ধ করতেও সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এসব বিষয় ইতোমধ্যেই অনুধাবন করতেও সক্ষম হয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। সূত্র জানায়, বিদেশী কূটনীতিকরা একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছেন কোন ধরনের সহিংসতা তাঁরা পছন্দ করেন না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের সহিংসতা হয়েছে। সেই সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তবে সরকার সে বিষয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এসব নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কূটনীতিকরা পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকারকেই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। দশম জাতীয় নির্বাচনের পরে ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বিদায় নিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন ও দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ প্রশ্নে উইলিয়াম হানা অনেকটাই সরব ছিলেন। তবে উইলিয়াম হানার পরে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকায় এসেছেন পিয়েরে মায়াডোন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডোন ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা আগামীতে আরও বাড়বে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আগামী সাত বছরে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা আরও ৪০ শতাংশ বাড়বে বলেও জানান তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫ জানুুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা বর্তমান সরকারকে অবহিত করেছেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিতে ইচ্ছুক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক গড়েও তুলতে আগ্রহী তারা। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার নিবিড় যোগাযোগ, সংলাপ এবং নতুনতর পার্টনারশিপ তৈরি নীতি অব্যাহত রাখবে। এ সরকারের বর্তমান মেয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও জোরদার করা, উন্নয়ন সহযোগিতা বর্তমানের চেয়ে আরও সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নতুন যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করাই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিদায় নিয়েছেন কূটনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজেনা। তিন বছর ঢাকায় দায়িত্ব পালনের পরে গত ২২ ডিসেম্বর তিনি এখান থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের আগে ড্যান মজেনা জানিয়েছেন, নির্বাচনের বিষয়ে ঠিক করবে এদেশের জনগণ। ড্যান মজেনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গভীর ও বিস্তৃত হচ্ছে। এই সম্পর্ক আগামী দিনে আরও গভীর ও বিস্তৃত হবে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ঢাকা থেকে বিদায় নিয়েছেন কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন। ঢাকা থেকে বিদায় নেয়ার আগে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হবে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিদায়ী বৈঠকে বিএনপিকে সহিংসতামুক্ত রাজনীতি করার জন্য পরামর্শ দিয়ে গেছেন হিদার ক্রুডেন। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যেই ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি ঢাকা সফরকালে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি সুষ্পষ্ট করেছেন। ভারতের পরররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের কোন মন্তব্য নেই। এটা এখানকার অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে লবিং অব্যাহত রেখেছে। পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারকে চাপ দেয়ার জন্য বিদেশীদের সহায়তা চাইছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিএনপির নেতারা বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। তবে বিএনপির আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বর্তমান সরকার সম্পর্কে বিদেশীদের মনোভাবের বিষয়ে জানিয়েছেন, নির্বাচনের পরে ইতোমধ্যেই পশ্চিমাদের সুর নরম হয়েছে। এখন তারা আর আগের অবস্থানে নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গণতন্ত্রের উন্নয়ন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার, মানবাধিকার রক্ষা, নারী অধিকার রক্ষা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। এসব কারণেই তারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
×