ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনভর শিশুদের সঙ্গে কাটালেন রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

দিনভর শিশুদের সঙ্গে কাটালেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রবিবার বঙ্গভবনে একদল শিশুকে বলেছেন, ‘তোমাদের দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের গর্বিত নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে, কেননা ভবিষ্যতের রাষ্ট্রপতি তোমাদের মধ্য থেকেই হবে।’ খবর বাসসর। রাষ্ট্রপতির অতিথি হিসেবে এসব শিশু দিনভর বঙ্গভবনে অতিবাহিত করে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অতিথি হিসেবে সুবিধা বঞ্চিতসহ ২৬০ শিশু রবিবার বঙ্গভবনে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে এবং তাঁকে শিক্ষা থেকে শৈশব পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে নিজেদের সমৃদ্ধ করে। রাষ্ট্রপতি শিশুদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বলেন, ‘এখনও আমি ছাত্র এবং তোমরা সবাই আমার শিক্ষক।’ আজিমপুর শিশু বিকাশ একাডেমির দশ বছরের স্মৃতি বলে, ‘আমি আজ খুবই উদ্দীপ্ত ও আনন্দিত। আমি কখনোই দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা কল্পনা করিনি।’ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গবভবনে ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শিশুদের সাক্ষাৎ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শিশুরা রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সবুজ মাঠে দৌড়, বল নিক্ষেপসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য দর্শক-শ্রোতাদেরকে তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিমোহিত করে তোলে। শিশুদের পরিবেশিত রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, লালন গীতি, দেশাত্মবোধক ও লোকগান এবং নৃত্যনাট্য দর্শক-শ্রোতাদের ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমরা খুবই ভাগ্যবান যে, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তোমরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারছো। আমি মনে করি এটা তোমাদের জীবনের একটি স্মরণীয় ও ব্যতিক্রমী ঘটনা।’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা একটি পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম। বঙ্গভবনের মতো রাজকীয় প্রাসাদে আমরা প্রবেশের চিন্তাও করতাম না। আমাদের বাক্ স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না এবং সংস্কৃতির চর্চাও কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ ছিল।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু তোমাদের বাক্ স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা এখন সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।’ স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, আমি শৈশবের নস্টালজিয়ায় আপ্লুত হয়ে পড়েছি। তোমরা জানো আমি কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে এসেছি।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বেড়ে উঠেছি। হাওরের ঢেউ, প্রকৃতি ও পাখিরা ছিল আমার শৈশবের বন্ধু এবং সংগ্রাম ছিল দৈনন্দিন জীবনের অংশ।’ তিনি বলেন, ‘যদিও আমি এখন আমার কর্তব্য ও দায়িত্বের জন্য বঙ্গভবনে বসবাস করছি কিন্তু আমি সব সময় আমার জন্মস্থানকে অনুভব করি এবং সুযোগ পেলেই আমার গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাই।’ শিশুদেরকে তাদের গ্রামের বাড়িতে স্বতঃস্ফূর্তভাতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমাদের অধিকাংশই শহরে বেড়ে উঠছ, কিন্তু তোমাদের নানা-দাদা এবং নানী-দাদীরা গ্রামে বসবাস করেন। তোমরা দেখতে তোমাদেরকে পেয়ে তাঁরা কেমন খুশি হন!’ রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় চার বছরের শিশু জিহাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। শনিবার রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যক্ত পানির পাম্পের গভীর থেকে জিহাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি জিহাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শিশুরা তাদের আঁকা একটি ছবি রাষ্ট্রপতিকে উপহার দেয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন। কুনমিং-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগের ওপর রাষ্ট্রপতির গুরুত্বারোপ ॥ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ রবিবার দুই দেশের জনগণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বঙ্গভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ কথা বলেন। বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালনে চীনের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীনের বড় ধরনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ। দেশে শ্রমনির্ভর শিল্প-কারখানা গড়তে চীন সরকার তাদের দেশের আরও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ওয়াং ই বলেন, ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতার অংশীদারিত্ব তৈরি করতে হবে।’ পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, চীনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম এবং রাষ্ট্রপতির দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×