ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ জেএমবি সমন্বয়ক সাইদুর আটক

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ জেএমবি সমন্বয়ক সাইদুর আটক

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়কারী মুহম্মদ সাইদুর রহমান ও তার এক সহযোগী সালেককে রাজধানীর ধানম-ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ থেকে শতাধিক জেএমবি জঙ্গীকে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে গিয়ে সেখানকার কলকাতা, বর্ধমান, বীরভুম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়ায় জঙ্গী গোষ্ঠী গঠন করার সমন্বয় করেছে মুহাম্মদ সাইদুর রহমান। মুহম্মদ সাইদুর রহমান হচ্ছেন জেএমবির গায়েরে এহসার সদস্য। তার সঙ্গে ধরা পড়েছে তার অন্যতম সহযোগী জেএমবির সদস্য সালেক। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণে তদন্তকারী জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর দেয়া মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দারা। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়ের কারণে সেখান থেকে বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত জঙ্গীসহ অর্ধ শতাধিক জঙ্গী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জেএমবির সমন্বয়ক মুহম্মদ সাইদুর রহমানকে ঢাকায় গ্রেফতার করার খবরটি জানানো হয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ-কে। ঢাকার সাহায্যে মুহম্মদ সাইদুরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠা জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সদস্য কারা, পরিচয় কি, তা উদ্ধারের চেষ্টা করছে তদন্ত সংস্থা এনআইএ। এনআইএ বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের কাছ থেকে মুহম্মদ সাইদুর রহমানের মোবাইল ফোনের নম্বরটি পেয়েছে। এই মোবাইল ফোনের নম্বরে আড়িপেতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় তাকে। গত ২৪ ডিসেম্বর ধানম-ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বর্ধমান খাগড়াগড়ের তদন্ত সংস্থা এনআইএ তদন্ত করে জানতে পেরেছে, জেএমবির সমন্বয়কারী মুহম্মদ সাইদুর রহমানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের প্রথম শ্রেণীর কয়েক নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত পলাতক জঙ্গী তারিকুল ইসলাম সুমনের ভাই হচ্ছে আরেক জঙ্গী সালেক। এই সালেকই বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের পর গ্রেফতারকৃত সাজিদ ওরফে নারায়ণগঞ্জের মাসুদ রানার স্ত্রী ফাতেমা বেগমসহ প্রায় ১২ জনের একদল জঙ্গীকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে সাহায্য করেছে। যাদেরকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে সাহায্য করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণে ঘটনায় জড়িত আসামি তারিকুর রহমান সুমনও। সূত্র জানান, গত ১৭ ও ১৮ নবেম্বর ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসার পর বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের কাছে জঙ্গীর তালিকা ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট দেয় তারা। তারা কলকাতায় ফিরে যাওয়ার পর গত ২৩ নবেম্বরে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া সাজিদ ওরফে মাসুদ রানার স্ত্রী ফাতেমাকে। গত নবেম্বরেই নারীজঙ্গী ফাতেমার সঙ্গেই বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত জঙ্গীসহ প্রায় একডজন জঙ্গী পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটের ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশে আসার পর নারীজঙ্গী ফাতেমা ধরা পড়লেও বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত যেসব জঙ্গী বাংলাদেশে এসেছে তারা এখনও ধরা পড়েনি। ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ বর্ধমান খাগড়াগড়ের তদন্তে জানতে পেরেছে, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জেএমবির জঙ্গীদের যে কয়েকটি জঙ্গীগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে তার নেপথ্যে কাজ করেছে ‘সিøপার সেল’। প্রতিটি সিøপার সেলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জঙ্গী সদস্য, যারা বাংলাদেশী। এর মধ্যে একটি বড় সিøপার সেল পরিচালনা করত গ্রেফতারকৃত মুহম্মদ সাইদুর রহমানও। মুহম্মদ সাইদুর রহমান ও তার অন্যতম সহযোগী সালেককে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জেএমবির জঙ্গীদের নাম, পরিচয়, তৎপরতার বিস্তারিত বিবরণ জানতে চেয়েছে খাগড়াগড়ের তদন্তে নিয়োজিত তদন্ত সংস্থা এনআইএ। ঢাকার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের বাসিন্দা তিন রোহিঙ্গা জঙ্গীকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয় ঢাকায়। বর্ধমান খাগড়াগড়ের তদন্ত সংস্থা এনআইএর তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী রোহিঙ্গা তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জেএমবির জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ক জেএমবির ‘গায়েরে এহসার’ সদস্য মুহম্মদ সাইদুর রহমানের কাছে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা কলকাতার এনআইএ-কে তুলে দিয়ে সাহায্য করবে ঢাকা। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে যেসব জঙ্গী বাংলাদেশে ঢুকেছে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
×