ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

চট্টগ্রামে আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুত কেন্দ্রের জ্বালানি সঙ্কট সমাধানে আরও একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণের জন্য পাঁচ কোম্পানির কাছ থেকে আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হচ্ছে। পেট্রোবাংলার পাশাপাশি এই এলএনজি টার্মিনালটি নির্মাণ করবে বিদ্যুত বিভাগ। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত চার বছর চেষ্টা চালিয়েও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। দেশে জ্বালানি সঙ্কটের বিষয়কে মাথায় রেখে তরলীকৃত জ্বালানি আমদানির প্রক্রিয়া ২০১০ সাল থেকেই শুরু করে সরকার। এর পরের বছর পেট্রোবাংলা আগ্রহপত্র চেয়ে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। বলা হয়েছিল ২০১২ এর ডিসেম্বরে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে দেশে এলএনজি আনা হবে। এজন্য ওইসময় কাতারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। কাতার দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহে করতে সম্মত হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল কাতার থেকে প্রতি ইউনিট ঘনফুট এলএনজি আমদানিতে ব্যয় দাঁড়াবে ১৪ ডলার। যদিও জ্বালানি বিভাগের এই প্রস্তুতির সঙ্গে বিদ্যুত বিভাগের ওই অর্থে কোন সম্পৃক্ততা নেই। পাওয়ারসেল সূত্র জানায়, মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বছরে ৩৫ লাখ টন এলএনজি আমদানি করা যাবে। বিল্ড ওন অপারেট ট্রান্সফার ভিত্তিতে টার্মিনালটি স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ৩০ জুন ছিল আবেদনের শেষ সময়। এ সময়ের মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্য থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এগুলো হলো ভারতের সর্ববৃহৎ এলএনজি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পেট্রোনেট এলএনজি, এ্যাংলো-ডাচ সুপার মেজর শেল, চীনা হুয়াংকিউ কনট্রাকটিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বেলজিয়ামের ট্র্যাক্টেবেল ইঞ্জিনিয়ারিং ও জাপানের মিতসুই। পাওয়ারসেলের একজন কর্মকর্তা জানান, এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠান এলএনজিকে ইউনিট প্রতি গ্যাসে রূপান্তরের জন্য কম দাম চাইবে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। বিদ্যুত জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সরকারের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলএনজি কিনে সরবরাহের জন্য। চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অঞ্চলটি একসময় গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে সাঙ্গু ক্ষেত্রে উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে জ্বালানি সঙ্কট শুরু হয়। গত বছরের অক্টোবরে দেশের একমাত্র সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু-১১ পুরোপুরি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে করে চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ করা কঠিন হচ্ছে। বছরের অধিকাংশ সময় এসব বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এছাড়া একই এলাকায় আরও এলএনজি নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় সরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখানে এলএনজি নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। যদিও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ নিয়ে বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগ পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে তাদের প্রকল্প পিছিয়ে দিতে এসব করা হচ্ছে। জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ছয় প্রকল্পের মধ্যে এলএনজি টার্মিনালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুত জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে অফিস করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ জ্বালানি বিভাগের কাজ। সুতরাং তারাই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবেন। পেট্রোবাংলা জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর জ্বালানি বিভাগ এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে বিশেষ নজরদারি শুরু করে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এ্যান্ড মাইন্স) মোঃ কামরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তীতে ইউএস এ্যাস্ট্রা ওয়েল এ্যান্ড এক্সিলারেট এনার্জির প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে এলএনজি টার্মিনাল বিষয়ে বৈঠক করেন। কোম্পানিটি গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠায় পেট্রোবাংলায়। এরপর তাদের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। এখন চূড়ান্ত চুক্তির অনুমোদনের জন্য সরকারের অনুমতি চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।
×