ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পাচ্ছে বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

ফেসবুক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পাচ্ছে বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে বিটিআরসি। ফেসবুকে অপরাধ প্রবণতা রোধ করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। বিটিআরসি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেছে। এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তারা বাংলাদেশ অংশের নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসির হাতে ছেড়ে দিতে চেয়েছে। এখন চুক্তির বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র। চুক্তি হলেই বাংলাদেশ অংশের ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ শুরু করবে বিটিআরসি। ফেসবুক ব্যবহার করে অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটছে। বিনষ্ট হয়েছে সামাজিক সম্প্রীতি। দেশে আঞ্চলিক দাঙ্গা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে অনেক আপত্তিকর বক্তব্য প্রকাশ করাসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেলেব্রিটি অভিনেত্রীদের চরিত্রহনন পর্যন্ত করা হচ্ছে। এখান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই বিটিআরসির এ উদ্যোগ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) জানিয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমাঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমঝোতা হলে ফেসবুকের বাংলাদেশ অংশের এ্যাডমিন প্যানেল (নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) বিটিআরসির হাতে চলে আসবে। এ্যাডমিন প্যানেল বিটিআরসির হাতে এলে ফেসবুকের বাংলাদেশ অংশের যে কোন এ্যাকাউন্ট বা পেজ বন্ধ করার পাশাপাশি যে কোন তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা পাওয়া যাবে। আইনগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের ই-মেলে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষর করবেন, তা জানাতে পারেনি বিটিআরসি। বিষয়টি পুরোপুরি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে অনেক দুর্বৃত্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তা নষ্ট করতে জঙ্গী ও সহিংসতামূলক কর্মকা-সহ সাইবার অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। রামু ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেসবুকের মাধ্যমে উস্কানি ছড়িয়ে সহিংসতামূলক কর্মকা- ঘটানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালের জন্য জামায়াত-শিবির ফেসবুকের মাধ্যমে নানা অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েতে (আইআইজি) পর্যাপ্ত এক্সপার্ট না থাকায় সাইবার ক্রাইম পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটার আশঙ্কায় বিটিআরসির পক্ষ থেকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ই-মেলে যোগাযোগ স্থাপনের পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়। বিটিআরসির সঙ্গে ফেসবুকের কোন চুক্তিপত্র নেই। ফলে বাংলাদেশে ফেসবুকের কোন এ্যাডমিন প্যানেল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকার এর আগে ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির দরজা খোলা বলেই বিভিন্ন লিংক দিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করা যেত। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। পরে বিটিআরসি ফেসবুক খুলে দেয়। তখন থেকেই যোগাযোগ শুরু করা হয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুকের সাইটগুলো ডাইনামিক ডোমেইন হওয়ার কারণে বিটিআরসির লাইসেন্স পাওয়া কোন অপারেটর ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ফেসবুকের এ্যাকাউন্ট, লিঙ্ক বা পেজ বন্ধ করা যায় না। এগুলো বন্ধ করতে গেলে বাংলাদেশে ফেসবুক সম্পূর্ণ ডোমেইন বন্ধ হয়ে যায়। তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইনগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। এতে সাইবার অপরাধ দমনসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এদিকে বিটিআরসির দেশের ভেতর মোবাইল অপারেটরদের কল আদান-প্রদানের হিসাব সরকারের কাছে নেই। এই তথ্য পেতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি এখনও চালু করা হয়নি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটি এ সম্পর্কিত দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিলম্বের জন্য বিটিআরসিকে দায়ী করেছে। কমিটি বৈঠকে সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেম (সিএমএস) সম্পর্কিত বর্তমান দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশ দিয়েছে। সিএমএস স্থাপন করা হলে অবৈধ ভিওআইপি কার্যক্রমও বন্ধ করা সম্ভব হবে। অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওবার ইন্টারনেট প্রটোকল) বন্ধের জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিলেও কোন ফল হয়নি। দুই বছর আগে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য ‘অবৈধ ভিওআইপি অনুসন্ধান’ নামে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় বিটিআরসি। এ কমিটি দীর্ঘ তিন মাস অনুসন্ধান করে (বিটিসিএল, মোবাইল অপারেটর, ভিস্যাট, পিএসটিএনসহ অন্যান্য যে সব ক্যারিয়ারের মাধ্যমে ভিওআইপি করা হয়) তারা বেশ কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে। কমিটি পরবর্তীতে এ কারণগুলোই সুপারিশ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্চ (আইসিএক্স), অত্যাধুনিক সফটওয়্যার, রেডিও লিং ব্যবহার, কললিস্ট মুছে ফেলাসহ মোট ১৩টি কারণ উদ্ধার করেছে তারা। এগুলো বন্ধ হলে অবৈধ ভিওআইপি বহু গুণে কমে যাবে।
×