ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেলবোর্নে তবু এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

মেলবোর্নে তবু এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্রিসবেনে হেরে ২-০তে পিছিয়ে পড়ার পর ভারতের প্রখ্যাত এক ক্রিকেট বিশ্লেষক বলেছিলেন, ব্যর্থতাই যদি হয় শেষ পরিণতি তবে এমন লড়াকু পারফর্মেন্সের মূল্য নেই। মন্দ বলেননি। তরুণ দল নিয়েও অস্ট্রেলিয়া সফরে এবার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল ক্রিকেট খেলছে ভারত। ‘বক্সিং ডে’ টেস্টেও অব্যাহত রয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের সেই ‘ফাইটিং স্পিরিট’। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, অতিথিদের সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে অসিরাই এগিয়ে! চতুর্থ দিন শেষে স্বাগতিকদের লিড ৩২৬ রানের, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২৬১ রান। ৬২ রান নিয়ে ব্যাট করছেন শন মার্শ। ব্যক্তিগত ৮ রানে তার সঙ্গী প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান রায়ান হ্যারিস। আজ শেষ দিনে হয়ত জমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। কিন্তু প্রকৃতির বাগড়া, ক্রিকেটের গৌরবময় অনিশ্চয়তা বা ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে, এখানেও ভারতীয়দের জন্য ম্যাচ বাঁচানো কঠিন, সঙ্গে সিরিজও! ইতিহাস বলে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গত ৩৩ বছরে জয় নেই ভারতের। তাছাড়া মেলবোর্নের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে তিন শ’র ওপরে রান তুলে জয়ের ঘটনা একবারই ঘটেছে, ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ড। মার্শ-হ্যারিস মিলে সকালে ঘণ্টাখানেক যে পেটাবেন, তা বুঝতে বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। লিডটা চার শ’ ছাড়িয়ে গেলে সেটি ধাওয়া করা ভারতের জন্য হবে আত্মহত্যারই সামিল। এ্যাডিলেডের প্রথম টেস্টে ঠিক পৌনে চার শ’ রান তাড়া করতে গিয়ে হেরেছিল বিরাট কোহলির দল। সুতরাং ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণে মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের এ পর্যায়ে নিশ্চিত করেই এগিয়ে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ৮ উইকেটে ৪৬২ রান নিয়ে সোমবার চতুর্থ দিনে ভারত প্রথম ইনিংসের খেলা শুরু করে। সফরকারীরা মাত্র ৩ রানের মধ্যে বাকি ২ উইকেট হারায়। অলআউট হয় ৪৬৫ রানে। ৬৫ রানে এগিয়ে শুরুর পর অস্ট্রেলিয়ার লিডটাকে ৩২৬Ñএ নিয়ে যাওয়ার রূপকার ক্রিস রজার্স ও শন মার্শ। দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ‘অনসাং-হিরো’ই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তৃতীয় দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের ২৬২ রানের দুরন্ত জুটি ভারতকে অন্য স্বপ্ন দেখিয়েছিল। ১৯২৫ সালের পর মেলবোর্নে কোন বিদেশী দলের সর্বোচ্চ রানের জুটির কাছে সফরকারীদের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। কিন্তু তাদেরই ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত লিডটা নেয়া হয়নি ধোনিদের। ওই জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর কোহলিই টেল-এন্ডার মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে তোলেন ২৮ রান। ভারতের শেষ ৩ উইকেটের পতন হয় মাত্র ৩ রানের মধ্যে! যবনিকাপাত ঘটে দুর্ধর্ষ মিচেল জনসনের হাত দিয়ে। সকালে উমেশ যাদবকে উইকেটের পেছনে ব্র্যাড হ্যাডিনের হাতে ক্যাপে পরিণত করার পর শামিকেও ফেরান অসি পেস-সেনসেশন। ৬৫ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা অস্ট্রেলিয়া সোমবার চতুর্থ দিনে তুলে নেয় ২৬১ রান। এ জন্য ৭ উইকেট হারালেও লিডটাকে ৩২৬Ñএ নিয়ে বেশ ভাল অবস্থায় তরুণ স্টিভেন স্মিথের দল। ক্রিস রজার্স আর ডেভিড ওয়ার্নারের পর শন মার্শÑ তিন ত্রয়ীর পর অস্ট্রেলীয় ইনিংসে যুক্ত হয় লোয়ার-অর্ডারে ব্যাড হ্যাডিন ও মিচেল জনসনের ১৩ ও ১৫ রানের ছোট দুটি কার্যকর ইনিংস। দ্বিতীয় ইনংসে বোলিংটা মন্দ করেনি ভারতীয় বোলাররা। সেই সঙ্গে কাল ধোনিদের ফিল্ডিংও ছিল দর্শনীয়। ফর্মের তুঙ্গে থাকা অধিনাযক স্টিভেন স্মিথকে দুর্দন্ত এক ক্যাচে ফিরিয়ে দেন ১৪ রানে। তারুণ তারকা ২৭ বলে ২ চারে সাহায্যে করেন এ রান। তবে ভেঙ্গে যাওয়া উইকেট বোলারদের দাপটের মুখে মার্শ অসাধারণ ব্যাটিং করেন। ১৩১ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬২ রান নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ১১তম টেস্টে দলটির বড় ভাই শনের (ছোট মিচেল মার্শ ইনজুরির জন্য ছিটকে যান) এটি দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ২টি করে উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও উমেশ যাদব। এর মধ্য দিয়ে অষ্টম ভারতীয় বোলার হিসেবে ইশান্ত শর্মা তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলিয়ে ৩০০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস আজ আর কতদূর যাবে, ভারতের সামনে কত রানের লক্ষ্য নির্ধরিত হয়, এসব দেখতে মুখিয়ে ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। তরুণ স্মিথ খুব সাহসী হলে হয়ত আজ সকালেই ইনিংস ঘোষণা করে দিতে পারেন। যেহেতু সিরিজে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই, সেক্ষেত্রে তাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে শেষবারের মতো জীবন-মরণ লড়াইয়ে ঝাঁপাবেন মহেন্দ্র সিং ধোনি-বিরাট কোহলিরা! ও হ্যাঁ মেলবোর্নে এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ৮ ব্যাটসম্যানকে আউটে সহায়তার মধ্য দিয়ে প্রথম ভারতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে এক টেস্টে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের নজির গড়েছেন ধোনি।
×