ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেশোয়ারের ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

জনমতের চাপে পাকিস্তানে তালেবান দমন অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

জনমতের চাপে পাকিস্তানে তালেবান দমন অভিযান

পাকিস্তানে তালেবান জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে অভিযানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। জনমতের ব্যাপক পরিবর্তনের পর সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে এবং তারা উগ্রপন্থীদের প্রচারণাও নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। পেশোয়ারে চলতি মাসে সেনাবাহিনী পরিচালিত এক স্কুলে তালেবানের হামলার পর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান ব্যাপকতর হয়েছে। উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো যে পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে, এ হামলার পর এ বিষয়ে দেশটির জনমতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নতুন প্রচেষ্টায় দেশটিতে একটি রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। দেশটিতে সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলো ঐতিহ্যগতভাবেই দেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গীদের মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা গত সপ্তাহে রাজধানী ইসলামাবাদে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী নতুন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হন। এ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সব মাদ্রাসার নিবন্ধন ও উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর তহবিল বন্ধ করে দেয়া। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ সরকার ও দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলায় ২০ ধরনের পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসসংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি করতে সামরিক আদালত গঠন করা হবে। সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে এ বিশেষ আদালতের নেতৃত্ব দেবেন সেনা কর্মকর্তারা। আদালত চলবে দুই বছর। কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছেÑ সন্ত্রাসীদের অর্থসহায়তা বন্ধ, নতুন নামে নিষিদ্ধ সংগঠন পরিচালনা রোধ, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ বাহিনী গঠন, মাদ্রাসা পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়ন, প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন, গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীদের ঠাঁই না দেয়া ও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস। মার্কিন কর্মকর্তা ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় অভিযানের প্রতিশ্রুতি দেয়ার প্রায় দীর্ঘ এক দশকের ইতিহাস আছে, যা তারা রাখেনি বা রাখতে পারেনি। তবে পাকিস্তানের ইসলামী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একটি টেকসই অভিযান চালানোর সামর্থ্য কর্তৃপক্ষের আছে কিনা, সে ব্যাপারে তারা সন্দিহান। কারণ পাকিস্তানী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জঙ্গীদের সম্পর্ক আছে বলে দীর্ঘদিনের সন্দেহ রয়েছে। তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসন পাকিস্তানের দেরিতে হলেও এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। পাকিস্তানের নেতারা তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত এবং এই সমস্যা মোকাবেলায় তারা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। মার্কিন কর্মকর্তা ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তালেবান দমনের ক্ষেত্রে তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সমন্বয়ের উন্নতি লক্ষ্য করেছেন। কেননা আফগানিস্তানের মাটিতেই পাকিস্তানী তালেবান কমান্ডাররা আশ্রয় নেয়। দেশটিতে জঙ্গীদের ওপর চালানো ড্রোন হামলা নিয়ে জনগণের নিন্দার বিষয়টিতে এমন পরিবর্তন এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কিছু মাদ্রাসা ও মসজিদে, যেখানে উগ্রপন্থার বীজ রোপণ করা হচ্ছে- সেখান থেকে তা চূড়ান্তভাবে উৎপাটন করা সম্ভব হবে কিনা এবং আইনশৃঙ্খলাহীন উপজাতীয় এলাকায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবে কিনা, তা এখনও অস্পষ্ট। পাকিস্তান এখন তাঁর ক্রান্তিকাল অতিক্রমের চেষ্টা করছে। সন্ত্রাসী হামলা এবং উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানে গত এক দশকে ৫০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্য নিহত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ফলে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে পরমাণু শক্তিধর এ দেশটির সম্পর্ক হুমকির মুখে। দেশটিতে এর আগের হামলার অনেক ঘটনায় সামান্যই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে ১৬ ডিসেম্বরের হামলা পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
×