ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাফল্য সামান্য কমেছে এবার

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

সাফল্য সামান্য কমেছে এবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গেল বছরের চেয়ে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা সামান্য কমেছে। তবে তার পরেও বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে পঞ্চম শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে এবার পাস করেছে ৯৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। সমমানের মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীতে পাস করেছে ৯৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত বছর প্রাথমিকে পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ আর ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। প্রাথমিক সমাপনীতে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৪১১, ইবতেদায়ীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৫৪১ জন। গত বছর প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৬১ জন আর ইবতেদায়ীতে পেয়েছিল সাত হাজার ২৫৩ জন। ষষ্ঠবারের মতো দেশের সাত বিভাগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার ফল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার দুপুর সাড়ে ১২ টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সারাদেশের ফলাফল প্রকাশ করেছেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আলমগীরসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দেশের সর্ববৃহৎ এ পাবলিক পরীক্ষার জন্য এবার অংশ নিয়েছিল মোট ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫৫ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৬ জন। প্রাথমিকে ২৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮১ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৩ জন। ইবতেদায়ী দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯৭৪ জনের মধ্যে পাস করেছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ২৭৩ পরীক্ষার্থী। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে এবার নিয়ে টানা তিনবারের মতো সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যেখানে পাস করেছে ৯৮ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী। সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বিভাগে ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। জেলার মধ্যে এগিয়ে এবার মুন্সীগঞ্জ। যেখনে পাসের হার শতভাগ। সবচেয়ে কম পাস চুয়াডাঙ্গায় ৮৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। দেশের ৫০৯ উপজেলা/থানার মধ্যে ২২টি উপজেলায় কোন শিশু ফেল করেনি। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী শিশু শিক্ষার্থী ঈর্ষণীয় ফল লাভ করায় পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের নিরলস প্রচেষ্টার কারণেই শিক্ষার্থীরা ভাল করছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। এবার অধিকাংশ পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে দেশের বহু স্থানে। ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়। এ বিষয়টি ভাল ফলে প্রভাব পড়ে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিকমন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া না গেলেও এটা তো ঠিক যে দেশের মানুষের একটি অংশ বিশ্বাস করে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এটাও একটা চিন্তার বিষয়। আমরা প্রশ্ন ফাঁসের কোন অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছি না। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। সে অনুসারে আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিও গ্রহণ করতে চাই। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আগামীতে পরীক্ষার আগের দিন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ করবে সরকার। সামনের বার ম্যানুয়ালি প্রশ্ন দেয়া হবে না, পরীক্ষার একদিন আগে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহ করব। আগামীতে প্রশ্ন ফাঁসের প্রসঙ্গ আসবে না বলেই আশা করেন মন্ত্রী। বিভাগওয়ারি ফল ॥ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বিভাগওয়ারি ফলে দেখা গেছে, রবিশালে ৯৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। রাজশাহীতে ৯৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, খুলনায় ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ঢাকায় ৯৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, সিলেটে ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে ৯৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। বিদ্যালয়ের ধরন অনুসারে ফল ॥ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের মতো এবারও পিটিআইসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের পাসের হার সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এছাড়া ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ের ৯৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেন ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, নতুন জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় দশমিক ৯৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, আনন্দ স্কুল ৮৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। বিষয় ভিত্তিক ফল ॥ প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক ফলে দেখা গেছে, বাংলায় পাস করেছে ৯৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ইংরেজীতে ৯৯ দশমিক শূন্য আট, গণিতে ৯৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৮৫ এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় পাস করেছে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের ফল ॥ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার সারাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) তিন হাজার ৯২৩ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেয় তিন হাজার ৭২৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন হাজার ৫৬৩ জন। পাসের হারে ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ভাল ফল প্রশ্নবিদ্ধ প্রশ্ন ফাঁসে ফল ॥ এবারের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা ব্যাপকহারে প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বেশ আলোচিত ছিল। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পুরো পরীক্ষা নিয়েই অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রশ্নের মুখে পড়ে পুরো পরীক্ষা। ফলাফলের পেছনে নানা ইতিবাচক কারণ থাকলেও বিভিন্ন বোর্ডের শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথারীতি খাতা মূল্যায়নে উদারতা ও পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হলেও এবার এসব বিষয়ে ভাল করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করাসহ আছে আরও বেশকিছু কারণ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও অবশ্য পরীক্ষার ফলাফলে এর কোন প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেছেন প্রাথমিত ও গণশিক্ষামন্ত্রী। তবে মন্ত্রী যাই বলুক না কেন, প্রশ্ন ফাঁস, সমালোচনা আর লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবকের ক্ষোভের মধ্য দিয়েই এবার শেষ হয়েছিল দেশের সর্ববৃহৎ এ পাবলিক পরীক্ষা। প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে পাওয়া প্রশ্ন শতভাগ মিলে গেছে বলে অভিযোগ এনেছেলেন অভিভাবকরা। তাঁরা অভিযোগ করতে থাকেন, সাজেশন আকারে পরীক্ষার আগে যেসব প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে এর সঙ্গে অনেকাংশে মিল রয়েছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের। ফল জানা যাচ্ছে যেভাবে ॥ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট, প্রতিষ্ঠানের মেইল নম্বর এবং মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (িি.িফঢ়ব.মড়া.নফ) এবং টেলিটকের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট (িি.িফঢ়ব.ঃবষবঃধষশ.পড়স.নফ) থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীর ফল জানা যায়। এছাড়া যে কোন মোবাইল ফোন থেকে উচঊ লিখে স্পেস দিয়ে থানা/ উপজেলার কোড নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৪ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানতে পারছেন যে কেউ। ইবতেদায়ীর ফল পেতে ঊইঞ লিখে স্পেস দিয়ে থানা/উপজেলার কোড নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৪ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠালেই ফল জানা যায়। উল্লেখ্য, পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। এবতেদায়ীতে এ পরীক্ষা শুরু হয় ২০১০ সালে। শুরুর বছরে প্রাথমিকে পাসের হার ছিল ৮৮ দশমকি ৮৪ শতাংশ, আর এবতেদায়ীতে এই হার ছিল ৭৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
×