ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পিএসসি-জেএসসির ফল হস্তান্তর ও নতুন পাঠ্যবই বিতরণ

নারী শিক্ষক হত্যার মতো সন্ত্রাস বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

নারী শিক্ষক হত্যার মতো সন্ত্রাস বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোয়াখালীতে নারী স্কুল শিক্ষকের হত্যাকাণ্ড এবং ঢাকায় অপর এক নারী শিক্ষক অগ্নিদগ্ধ হবার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের দায়ী করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার এ ধরনের ঘটনা আর সহ্য করবে না। প্রয়োজনে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের এ ধরনের অপরাধের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। নোয়াখালীতে স্কুল শিক্ষকের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতই দায়ী। তিনি এ ধরনের অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর সহ্য করব না এবং এ ধরনের অপরাধ বন্ধে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল হস্তান্তর করেন। খবর বাসস’র প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালের শিক্ষাবর্ষের জন্য পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তিনি প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আমিনা তসলিম করবির হাতে একসেট বই তুলে দিয়ে বই বিতরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী সকলের জন্য শিক্ষা কর্মসূচী নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই প্রথমবারের মতো মাল্টিমিডিয়া গ্রন্থের বিতরণ ও উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি শেখ হাসিনা সকল শিক্ষার্থীর জন্য উপযোগী মিডি ভারসনে পূর্ণাঙ্গ অডিও ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া গ্রন্থের একটি পূর্ণাঙ্গ টেক্স উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নোয়াখালী ও ঢাকায় যারা এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করেছে, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ যে মুহূর্তে শান্তিতে বসবাস করছে, ঠিক সে সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তিনি বলেন, সোমবারের বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ডাকার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে, আমার জানা নেই। তিনি হরতাল আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, তারা একজন স্কুল শিক্ষককে হত্যা করে এবং অপর একজন স্কুল শিক্ষককে পুড়িয়ে কি পেয়েছে। তারা একজন স্কুল শিক্ষকের জীবন কেড়ে নেয়া ছাড়া এবং অপর একজনকে আগুনে পোড়ানো ছাড়া আর কিছু তো পায়নি। তাহলে কেন এই ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানো হলো। মানুষ মারা এবং পোড়ানোই যদি তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাহলে এটি হবে খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, এখন শিক্ষার্থীদের ফলাফল অনুযায়ী বৃত্তি দেয়া হবে। এখন ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক সকলেই এই পরীক্ষার জন্য মনোযোগী। প্রধানমন্ত্রী দেশে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, মেয়েরা এখন ছেলেদের চেয়ে ভাল করছে। প্রধানমন্ত্রী বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশ ও বিতরণ করা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে যথা সময়ে এসব বই প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হোসেন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং প্রেস সেক্রেটারি এ কে এম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তাহলে আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করতে পারি ॥ বাংলানিউজ জানায়, ‘তাহলে এবার আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করতে পারি’। উপহার হিসেবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের একসেট বই হাতে পাওয়ার পর সে কথাই বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বই বিতরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ সকল শ্রেণীর বই থেকে তৈরি একটি সেট প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তুলে দেন। বই হাতে নিয়ে বিস্মিত প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এগুলো আমার বই! তাহলে তো এবার আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করতে পারি!’ এভাবেই প্রধানমন্ত্রী যেন ফিরে গেলেন তার ছেলেবেলায়। বক্তৃতায় ঘুরে ফিরে আসছিল স্কুলের কথা, ছেলেবেলার কথা। শিশুদের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, স্কুলের শিশুরা বই পেলে কত খুশি হয়, এখন বইয়ে নাম লিখতে হবে! মলাট দিতে হবে! কত কাজ! তাই না!’ শিশুরাও মাথা নাড়িয়ে, মুখে সলাজ হাসি ছড়িয়ে সায় দিচ্ছিল প্রধানমন্ত্রীর কথায়। প্রধানমন্ত্রী যেন বুঝতে পারছিলেন ওদের মনের কথা। আর তাই বলছিলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম এমনই ভাল লাগত। বই হাতে পেলেই শুরু হতো এতে নাম লেখা। মলাট দেয়া। ক্যালেন্ডারের সুন্দর সুন্দর পাতা ছিঁড়ে তা দিয়ে বইয়ের মলাট বানানো। এসবই আনন্দের। প্রধানমন্ত্রী জানান, এ বছর ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে। ১ জানুয়ারি বছরের প্রথম দিনটিতেই হবে বই উৎসব। দেশের স্কুলে স্কুলে আনন্দ ছড়িয়ে যাবে এটাই তার প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বই পাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যও বিনামূল্যে ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হচ্ছে। আর আজিমপুর গার্লস স্কুলের একটি মেয়ে যখন বই নিতে এলো, দু’বোনই তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। দু’জনেরই নিজের স্কুল ছিল সেটি। এভাবে ভালবাসা ছড়িয়ে বই বিতরণ করলেন।
×