ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেলবোর্ন টেস্ট ড্র, সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

মেলবোর্ন টেস্ট ড্র, সিরিজ অস্ট্রেলিয়ার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মেলবোর্নে ড্র হয়েছে ‘বক্সিং ডে’ টেস্ট। মঙ্গলবার শেষ দিন সকালে ৯ উইকেটে ৩১৮ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন অসি সেনাপতি স্টিভেন স্মিথ। জবাবে ৩৮৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে নামা ভারত ৬৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান সংগ্রহ করলে সময় শেষ হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৩০ রানের জবাবে ৪৬৫ রানে অলআউট হয় ভারত। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন বিজয়ী দলের রায়ান হ্যারিস। ফলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০তে চার টেস্টের সিরিজ নিশ্চিতের পাশাপাশি ‘বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি’ নিজেদের কাছে রেখে দিল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই টেস্টে তারা জিতেছিল যথাক্রমেÑ ৪৮ রান ও ৪ উইকেটে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ তৃতীয় টেস্টে ড্র করলেও, সিরিজ হারের গ্লানি মাথায় নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সিডনিতে ৬ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া আনুষ্ঠানিকতার চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন বিরাট কোহলি। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অজিঙ্কা রাহানে যখন সাজঘরে ফেরেন ম্যাচের তখনও ১১ ওভার বাকি। ভারতের শেষ চার উইকেট তুলে নিতে অস্ট্রেলিয়া প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতেই পারত। অন্তত অসিদের আগ্রাসী ক্রিকেটের অতীত তাই বলে। কিন্তু অধিনায়ক স্মিথ সেই পথে হাঁটেননি, কারণ ম্যাচ ড্র হলেও যে সিরিজ নিশ্চিত ছিল অসিদের! এমনকি দিনের শেষ পাঁচ ওভার আগেই ড্র মেনে নিয়ে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে স্মিথের হাত মেলানোটাও ছিল দৃষ্টিকটু! সোমবার শেষ দিনে ৩২৬ রানে এগিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শেষ করা অস্ট্রেলিয়া কাল পঞ্চম দিনের শুরুতে যোগ করে আরও ৫৭ রান। এ জন্য অবশ্য তারা ২৩ ওভার নষ্ট করে! ম্যাচের ভাগ্যে ড্র-টা তখনই লেখা হয়ে যায়। ৯ উইকেটে ৩১৮ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৩৮৩ রানের লিড নেয় স্বাগতিকরা। ৬২ রানে অপরাজিত শন মার্শ আজ সেঞ্চুরির খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৯৯ রানে তিনি শিকার হন দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের। মেলবোর্নের ইতিহাসে তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯৯ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এর আগে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দীর্ঘ নয় ইনিংস পর পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের দেখা পান মার্শ। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ভারতীয়রা সবাই ছিলেন সফল। তিন পেসার উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামী ও স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন প্রত্যেকেই দুটি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। জয়ের জন্য ম্যাচ ও দিনের শেষ ৭০ ওভারে ৩৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ভারতের সামনে। কিন্তু যাচ্ছেতাই শুরুর পর এই লক্ষ্যের পেছনে ছোটার মতো বোকামি করেনি ভারত। বিরাট কোহলি আর অজিঙ্কা রাহানে দারুণ ব্যাটিংয়ে স্বস্তি এনেছিলেন শিবিরে। কিন্তু এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর হঠাৎ?ই ভারতীয় ব্যাটিং হারের শঙ্কা জাগায়! ব্যক্তিগত ৫৪ রান করে কোহলি চা বিরতির পর প্রথম বলেই ফিরে যান। রাহানে ফেরেন ৪৮ রানে। চেতেশ্বর পূজারা ফেরেন তেমন কোন প্রতিরোধ সৃষ্টি না করেই। শেষের দিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর মহেন্দ্র সিং ধোনি পরাজয়ের শঙ্কাটা দূর করে দেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। অশ্বিন অবশ্য নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। হ্যাজেলউডের বলে সিøপে তাঁর ক্যাচ শেন ওয়াটসন ফেলে না দিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত! বড় টার্গেট সামনে রেখে অবশ্য শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে সফরকারী ভারত। ইনফর্ম মুরলি বিজয় এলবিডাব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন হ্যাজেলউডের বলে। হার্ডহিটার শিখর ধাওয়ান অবশ্য দলীয় ২ রানের মাথায় রানের খাতা খোলার আগেই হ্যারিসের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। ‘বক্সিং ডেতে’ অভিষিক্ত লোকেশ রাহুল প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থতার ঘানি টানেন ১ রানে আউট হয়ে। তাঁকে শেন ওয়াটসনের ক্যাচে পরিণত করেন পেস তারকা মিচেল জনসন। মাত্র ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় ধুঁকতে থাকা ভারতীয় দলকে প্রাথমিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন বিরাট কোহলি আর অজিঙ্ক রাহানে। চতুর্থ উইকেটে ৮৫ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি ভালোভাবেই সামাল দেন এই দুই ব্যাটসম্যান। চা বিরতির ঠিক পরপরই কোহলি স্কয়ার লেগে জো বার্নসের ক্যাচে পরিণত হন। এরপর চেতেশ্বর পূজারাকে বোল্ড করেন জনসন। রাহানে হ্যাজেলউডের বলে শন মার্শের হাতে ধরা পড়লে পরাজয়ের আশঙ্কা আবার চেপে বসে ভারতের ওপর! তবে নিজেদের মধ্যে ৩২ রানের জুটি গড়ে সেই শঙ্কা দূর করেন ধোনি আর অশ্বিন। ধোনি ২৪ আর অশ্বিন ৮ রানে অপরাজিত থাকেন। পূজারার ব্যাট থেকে আসে ২১ রান। অস্ট্রেলীয় বোলারদের মধ্যে মিচেল জনসন, রায়ান হ্যারিস ও জশ হ্যাজেলউড প্রত্যেকেই নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। দুই ইনিংস মিলিয়ে ব্যাট হাতে ৯৫ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৬ উইকেট নিয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচের নায়ক বনে যান হ্যারিস। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টানা ১৩ ম্যাচ পর দুই দলের কোন টেস্ট ড্র হলো! এবং এই ১৩ টেস্টেই জয় পেয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ২০০৮ সালে দিল্লি টেস্ট সর্বশেষ অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছিল। আর মেলবোর্ন সর্বশেষ ড্র দেখেছিল ১৯৯৭ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে। মেলবোর্নে গত ১৭ বছরে অস্ট্রেলিয়াকে কেউ হারাতে পারেনি, সেই ধারা অব্যাহত থাকল এবারও। ম্যাচ শেষে স্বাগতিক অধিনায়ক স্মিথ বলেন, ‘মেলবোর্ন ছিল দারুণ ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশন। সুতরাং একদিনেরও কম সময়ে ভারতকে অলআউট করে জয় পাওয়াটা দূরহ। সব মিলিয়ে বক্সিং ডে টেস্টে নিজেদের পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট আমি।’ অন্যদিকে ড্র করেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘শেষদিকে অহেতুক উইকেট হারিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের ওপর চাপ তৈরি করেছি। তবে সর্বোপরি মেলবোর্ন টেস্টে আমাদের পারফর্মেন্স ইতিবাচক। আশা করছি পরের ম্যাচেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
×