ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিএসপি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে ১৬ শর্ত পূরণ

পোশাক রফতানির রোডম্যাপ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

পোশাক রফতানির রোডম্যাপ

এম শাহজাহান ॥ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানির রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের আওতায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ফিরে পেতে এ্যাকশন প্লানের ১৬টি শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তারপরও জিএসপি চালু হবে কি না-সেটা নিয়ে সারাবছর আলোচনা চলেছে। বিদায়ী বছরের পুরোটা সময় জিএসপি ও পোশাক রফতানির বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, জিএসপি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআরে একাধিকবার বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। আর মাত্র সাত বছর পর ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। দীর্ঘ এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ কী অর্জন করল এখন থেকেই কষা হচ্ছে সেই হিসেবে-নিকেশ। এই সময়ে জাতীয় বাজেট, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, রাজস্ব আহরণ, মাথাপিছু আয় এবং মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির সব সূচকে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পোশাক রফতানিতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর বছরে রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এক নম্বরে আসবে বাংলাদেশ। জানা গেছে, এ লক্ষ্য অর্জনে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ শিল্পের উদ্যোক্তারাও বলছেন, ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা, তাজরীনে ভয়াবহ অগ্নিকা- এবং যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর এ শিল্পখাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান-২০১৪ তথ্যমতে, গত ২০১৩ সালে বিশ্ব পোশাক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশ বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ওই সময়ে বার্ষিক রফতানি বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ৩৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের রফতানি বেড়েছে। যদিও গত দুই মাস ধরে পোশাক রফতানি সামান্য নেগেটিভ ধারায় রয়েছে। তবে অর্ডার বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণ হওয়ায় উদ্যোক্তারা আশা করছেন, বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পোশাক তৈরির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। ফলে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়া কেউই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পারছে না। এখন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। কিন্তু চীন এখন ৪০ বছরের নিচে কোনো শ্রমিক পাচ্ছে না গার্মেন্ট শিল্পে। সে কারণে চীনও প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকা থেকে সরে যাচ্ছে। জিএসপি পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার ॥ জানা গেছে, ২০০৫ সালে ডব্লিউটিও’র (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন) হংকং ঘোষণা অনুযায়ী উন্নত দেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রায় সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। ওই ঘোষণা অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এলডিসি (লেস ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি) বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়। সর্বশেষ বালি ঘোষণায়ও স্বল্পোন্নত দেশের রফতানিতে জিএসপি সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধায় রফতানির সুযোগ দিলেও সেই তালিকায় পোশাক ও বস্ত্রসহ কোন গার্মেন্টস পণ্য নেই। জিএসপি স্কিম কেন ॥ জানা গেছে, স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাণিজ্য সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি (জেনারাইলজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) স্কিম চালু করে ১৯৭৬ সালে। উদ্দেশ্য ছিল, এ সহায়তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা পেয়ে থাকে এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো অতিরিক্ত আরো ১ হাজার ৫০০টি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। পোশাক রফতানিতেই জিএসপি প্রয়োজন ॥ পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশ কখনও লাভবান হতে পারেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক। ফলে জিএসপি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সুবিধা বয়ে আনছে না। বাংলাদেশের বাজারে ২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমেরিকান পণ্য প্রবেশ করছে। অথচ আমেরিকার বাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক গুনতে হচ্ছে। টিকফা কার্যকরের মাধ্যমে পোশাকে জিএসপি ॥ টিকফা (ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) ফোরামের প্রথম বৈঠকে পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা চাওয়া হবে।
×