বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। অহরহই ঘটছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সুনামি, স্যান্ডি, এথিনা, মহাসেন ক্যাটরিনা, হাইয়ান, হুদহুদ, আইলার মতো প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দুর্যোগ নামছে বিশ্বে। হারিকেন-ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় বেশ পারদর্শিতার পরিচয়ও দিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘেও প্রশংসিত হয়েছে দুর্যোগ মোকাবেলার পারঙ্গমতা। কিন্তু হারিকেন-ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে আরও ভয়ঙ্কর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে তা কি মোকাবেলা করতে পারবে? কিংবা টানা বর্ষণ ও বন্যা সুনামি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কী আদৌ প্রস্তুত।
গত এক শতাব্দী ধরেই ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে। সম্প্রতি ভারত ও ফ্রান্সের গবেষকেরা জানিয়েছেন, ভারত মহাসাগরের এই উষ্ণতা বৃদ্ধির উচ্চ হারের কারণে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) প্রধান আস সাই বলেন, ‘জীবিকা ধ্বংস ও ক্রমবর্ধিষ্ণু নিরাপত্তাহীনতার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব বিশ্বকে নতুন ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে এখন নানা ধরনের দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে। যার বড় উদাহরণ সুনামি। এর প্রভাবে তাসের ঘরের মতো বাড়িঘর, সম্পদ-সাগরের পানিতে ভেসে যায়। ২০১১ সালে জাপানে স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে বিশ্বে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলার।
সুনামির মতো এমন ঘটনা যদি বাংলাদেশে ঘটে তবে তার পরিণতি কি হবে? উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়েও সুনামির ভয়াবহতা ঠেকাতে পারেনি জাপান। মৌসুমী বন্যায় ধসেপড়া ভারতের মহারাষ্ট্রের মালিনা গ্রাম একটি পুরো পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী ঝড় স্যান্ডি ছিল সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের ঘটনা । মোট ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরই ছিল ৬৫ শতাংশের কিছু বেশি। স্যান্ডির আঘাতে দেশটির ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার।
বাংলাদেশ বহুকাল ধরেই বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সে দুর্ভোগের পরিধি আরও বাড়িয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশের নাম। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপলক্রফট বিশ্বের ১৭০ দেশে জরিপ চালিয়ে বলেছে, আগামী ৩০ বছরে বিশ্বের যে ১৬ দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হবে তার শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশে যদি সুনামির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। হঠাৎ সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্পের কারণে যদি কক্সবাজার শহর কিংবা চট্টগ্রামের বাড়িঘর কাগজ টুকরোর মতো ভেসে যায়। কিংবা উজানের পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে পুরো একটি পাহাড়ই ভেসে এসে সীমান্তবর্তী কোন গ্রামের ওপর আছড়ে পড়ে। তখন কি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে? সেই ভয়াবহ অবস্থা মোকাবেলার প্রস্তুতি কি বাংলাদেশের আছে। একটি পাইপের মধ্যে পড়ে যাওয়া শিশু জেহাদকেই আমরা জীবিত উদ্ধার করতেন পারিনি। আর যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেটা কি আমরা কখনো ভেবে দেখছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: