ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিমান বাহিনীকে আরও দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১ জানুয়ারি ২০১৫

বিমান বাহিনীকে আরও দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বিমানবাহিনীর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য ক্যাডেটদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার সকালে যশোরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। কুচকাওয়াজে মহিলা ফ্লাইট ক্যাডেটদের অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটি তাঁর সরকারের দৃঢ় নীতিরই প্রতিফলন। যশোরে বিমানবাহিনী একাডেমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে বিমানবাহিনীর ৭০তম ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের কমিশন প্রদান উপলক্ষে শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই শুধু একটি এ্যালুয়েট হেলিকপ্টার, একটি ডিসি-৩ এবং একটি অটার বিমান নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুঃসাহসিক বৈমানিকরাই প্রথম বাংলার আকাশ সীমানায় প্রবেশ করে শত্রুর স্থাপনার ওপর সফলভাবে আঘাত হানেন। এই সামান্য অস্ত্র নিয়ে বিমানবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ৪০টিরও বেশি সফল আক্রমণ পরিচালনা করে, যা ছিল আমাদের বৈমানিকদের অসাধারণ দক্ষতার স্বাক্ষর। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাগণ সেক্টর কমান্ডারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কোন জাতির জন্য একটি শক্তিশালী, পেশাদার ও আধুনিক বিমানবাহিনী অপরিহার্য। এ কথা অনুধাবন করে জাতির পিতা স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি দক্ষ ও চৌকস বিমানবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিমানবাহিনীর জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বিদেশ থেকে আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক এমআইজি-২১ সুপারসনিক ফাইটার স্কোয়াড্রন, এমআই-৮ (এমআই-এইট) হেলিকপ্টার, এএন-২৪ পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে সংযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা, সমুদ্রসীমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি ও দুর্যোগ মোকাবেলার বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে জাতির পিতা চট্টগ্রামে জহুরুল হক ঘাঁটির গোড়াপত্তন করেন। গত ৮ নবেম্বর আমরা এ ঘাঁটিকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে। ১৯৯৬ সালে আমরা বিমানবাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯, সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার সংযোজন করি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসুচী বাস্তবায়ন করেছি। বিমানবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে এফ-৭ বিজি-১, এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসোবে আত্মপ্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজার বিমানঘাঁটি। সংযোজন করা হয়েছে বিমানবাহিনীর জন্য প্রথম বারের মতো সারফেস টু এয়ার মিশাইল সিস্টেম। সমুদ্রসীমার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন পর্যবেক্ষণের জন্য কক্সবাজারে স্থাপন করা হয়েছে নতুন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ঢাকায় হেলিকপ্টার ওভারহল প্লান্ট স্থাপন করেছি। পাঁচটি নতুন এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, ৯টি বেসিক ট্রেইনার বিমান, তিনটি ট্রান্সপোর্ট ট্রেনার বিমান, দু’টি মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার এবং ১৬টি কমব্যাট ট্রেনার বিমান কেনার জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। যা অচিরেই বিমানবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে ‘বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ বছর চীন থেকে আনা জেট ট্রেইনার কে-৮ ডব্লিউ বিমান যা ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, তিন বাহিনীর সদস্যদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চাকরির সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জাতিসংঘ বাহিনীতে বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিমানবাহিনীতে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপনের ফলে জনবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই কুচকাওয়াজে মহিলা ফ্লাইট ক্যাডেটদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত। তাদের এই কমিশন প্রাপ্তি নারী অধিকার রক্ষা ও সামাজিকভাবে নারীকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের দৃঢ নীতিরই প্রতিফলন। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম ২০০০ সালে সশস্ত্র বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার পদে নারীদের অন্তর্ভুক্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুইজন মহিলা কর্মকর্তা প্রথম সামরিক বৈমানিক হিসাবে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শেষ করে এককভাবে ফ্লাইং করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের বিমানবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় নতুন নতুন বিমান এবং হেলিকপ্টার যুক্ত হওয়ার ফলে এসকল কর্মকা- পরিচালনায় বিমানবাহিনীর সামর্থ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা কার্যক্রমের অধীনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রতিবছর প্রায় চার হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে যাচ্ছে। শান্তিরক্ষা মিশনে পরিবহন বিমানের কন্টিনজেন্ট বৃদ্ধি এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আমাদের বিমানবাহিনীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার আগে শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০১৪ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ এবং ফ্লাইট ক্যাডেটদের মাঝে পদক, সনদপত্র এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন। শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০১৪-এ ৭০তম ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের ২৭ জন, ১৪তম এসএসসি ও এসপিএসএসসি কোর্সে ১৫ জনসহ মোট ৪২ জন ফ্লাইট ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। এদের মধ্যে ছয়জন মহিলা ফ্লাইট ক্যাডেটও কমিশন লাভ করেছেন। ফ্লাইট ক্যাডেট উইং আন্ডার অফিসার ধ্রুব সরকার ৭০তম ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের সেরা চৌকস কৃতিত্ব এবং সেরা জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণ কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ এবং ‘কমান্ড্যান্টস্ ট্রফি’ লাভ করেন। উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ফ্লাইট ক্যাডেট মোঃ ইশতিয়াক নাফিজ চৌধুরী ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ লাভ করেন। গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চে সেরা কৃতিত্বের জন্য ফ্লাইট ক্যাডেট সার্জেন্ট সঙ্গীত তরফদার ‘বিমানবাহিনী প্রধান’-এর ট্রফি লাভ করেন। এছাড়াও সার্বিকভাবে বিমানবাহিনীর একাডেমীর ২নং স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমী পতাকা লাভ করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী ও বিমানবাহিনী একাডেমীর কমান্ড্যান্ট এয়ার কমোডর মোঃ সাঈদ হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, নৌবাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য, বৈদেশিক মিশনের কূটনীতিকগণ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনীর প্রধানগণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×