ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেস্ট ইতিহাসে থাকবে ধোনির নাম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১ জানুয়ারি ২০১৫

টেস্ট ইতিহাসে থাকবে ধোনির নাম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মঙ্গলবার আচমকাই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান মহেন্দ্র সিং ধোনি। সাধারণত বিদায়ের ঘোষণা বা আগাম ইঙ্গিত কোন খেলোয়াড় নিজেই দিয়ে থাকেন। যুগ যুগ ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। কিন্তু ধোনির ক্ষেত্রে ঘটল ব্যতিক্রম। মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে খেলতে নেমে তাকে একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয়। এমন কি টেস্ট ড্র হওয়ার পর ম্যাচের বাইরে একটি কথাও বলেননি, পরদিন বুধবারও নয়! অবসরের বিষয়টা এক প্রেস বার্তায় জানিয়েছে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। ঘটনার পেছনে তাহলে অস্বাভাবিক কিছু রয়েছে! স্থানীয় গণমাধ্যম ও ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ধারণা ক্রমাগত ব্যর্থতায় ভেতরে ভেতরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ফলে সহসা বিসিসিআই তাকে টেস্টের নেতৃত্ব থেকে ছেটে ফেলত। বরাবরই বিচক্ষণ ধোনি সেই সুযোগ না দিয়ে, নেতৃত্ব তো বটেই, বিসিআইকে টেস্ট-অবসেরর কথাই জানিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে যার নেতৃত্বে দীর্ঘ আটাশ বছর পর বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধার হয়েছে, প্রথমবারের মতো উঠেছিল টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়েল শীর্ষে সেই ধোনি কী সাদা পোশাকে এতটাই খারাপ? মোটেই তা নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ভারত তো বটেই ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সফল টেস্ট অধিনায়ক তিনি। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা ধোনির টেস্ট অভিষেক ২০০৫Ñএর ডিসেম্বরে। টি২০ ও ওয়ানডের পর ২০০৮ সালের এপ্রিলে পান টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব। ৩৩ বছর বয়সী ধোনি ৬০ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ২৭টিতে জিতিয়েছেন ভারতকে, হার ১৮ ও ড্র ১৫টিতে। পরিসংখ্যানে দেশটির ইতিহাসের সফল টেস্ট অধিনায়কও তিনি। তার আগে ২১ জয় নিয়ে এগিয়ে ছিলেন সাবেক তারকা সেনাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী। ধোনির এই ২৭ জয়ের ২১টিই এসেছে দেশের মাটিতে! দেশের মাঠে তাঁর চেয়ে বেশি জয় আছে কেবল তিন অধিনায়ক দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (৩০), অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (২৯) ও স্টিভ ওয়াহর (২২)। বোঝাই যাচ্ছে গত অর্ধযুগে স্বভূমে বিশ্ব ক্রিকেটকে কিভাবেই না শাসন করেছে ভারতীয়রা! ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠে তার দল। দুর্দান্ত সেই দাপটটা অব্যাহত ছিল ২০১১ পর্যন্ত। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে মোড়ল ক্রিকেটের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ শিরোমণি, চারিদিকে কেবলই ধোনি বন্দনা। টেস্ট পর্বটা ওখানেই শেষ, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে চরম ভরাডুবি ঠেকাতে পারেননি ধোনি। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, চলতি বছরের শুরুতে দুর্বল নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ খোয়ানো, গত ইংল্যান্ড সফরের হারের পর এবার অস্ট্রেলিয়ায় এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ২-০এ হার। এ সময় ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ঢলে পড়ে তারা। ২০১৪ সালে ব্যাট হাতে ১৭ ইনিংসে গড় ৩৩, দলের হার, ঘরে-বাইরে চাপÑ এসবই হয়ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করল। ঘরের মাটিতে যার রেকর্ড সাফল্য, বিদেশে সেই ধোনির অবস্থা খুবই নাজুক। সব মিলিয়ে বিদেশের মাঠে ২৮ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ১৫টিতেই হার, জয় ৬টিতে। বিদেশে ভারতের সবয়েয়ে নিকৃষ্টতম (বেশি হার) অধিনায়ক ধোনি! ২৮ টেস্টে ১১ জয়ে সেখানে রাজত্ব সৌরভের। তবে টেস্ট থেকে অবসর নিলেও ওয়ানডে এবং টি২০তে যথারীতি অধিনায়ক হিসেবেই চালিয়ে যাবেন ধোনি। তবে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের মতো সাবেক তারকার ধারণা বিশ্বকাপ শেষে সব ধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় জানাতে পারেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’! যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন, উইকেট কিপিং, ব্যাটিং, নেতৃত্ব মিলিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে মহেন্দ্র সিং ধোনির অর্জন কম নয়। উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ৬০ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড তার। ১৯ ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদের মুশফিকুর রহীম। উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে ধোনির মোট ডিসমিসাল ২৯৪টি (ক্যাচ ২৫৬, স্ট্যাম্পিং ৩৮টি)। টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ ডিসমিসালের মালিক তিনি। ৫৫৫ ডিসমিসাল নিয়ে এ তালিকায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে সাবেক প্রোটিয়া তারকা মার্ক বাউচার। মেলবোর্নে বিদায়ী টেস্টে তার ডিসমিসাল ৯টি, যা ভারতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে নতুন রেকর্ড এবং টেস্টের ইতিহাসে চতুর্থ। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ২২৪Ñ এান্ডি ফ্লাওয়ার (২৩২*) ও কুমার সাঙ্গাকারার (২৩০) পর কোন উইকেটরক্ষকের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এটি। চেন্নাইয়ে ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হয় ধোনির। ৯০ ম্যাচ খেলে করেছেন ৪৮৭৬ রানÑ উইকেটরক্ষক হিসেবে যা ইতিহাসের তৃতীয়সেরা, সেঞ্চুরি ৬ ও হাফ সেঞ্চুরি ৩৩টি।
×