ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ প্রিয়নবী (সা)-এর ইসলাম প্রচার

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২ জানুয়ারি ২০১৫

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ প্রিয়নবী (সা)-এর ইসলাম প্রচার

আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি করে। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করবার জন্য। মানুষকে তিনি দান করেছেন পথ চলার দিশা। হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম থেকে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রসুল পৃথিবীতে এসেছেন মানুষকে সঠিক পথে চলবার দিশা দিবার জন্য। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মানুষকে দান করেছেন দীন বা জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম আল্লাহ্র দেয়া একমাত্র জীবন ব্যবস্থা, যা হযরত আদম (আ) হতে প্রচারিত হতে হতে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হন সমগ্র মানবজাতির জন্য, তিনি আবির্ভূত হন বিশ্ব জগতের জন্য রহমত রূপে। তিনি আবির্ভূত হন সিরাজাম মুনীরা রূপে অর্থাৎ প্রদীপ্ত চেরাগরূপে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন, হে নবী, নিশ্চয়ই আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সাক্ষ্যদাতারূপে, সুসংবাদদাতারূপে, সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহ্্র দিকে তাঁরই অনুমতিক্রমে আহ্বানকারীরূপে এবং প্রদীপ্ত চেরাগরূপে। (সুরা আহযাব : আয়াত ৪৫) ৬১০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ রমাদান রাতে আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁর নিকট প্রথম ওহী প্রেরণ করেন। তিনি প্রথম ওহী পেয়ে অতি সংগোপনে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তিন বছর সংগোপনে ইসলাম প্রচার করার পর তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করবার জন্য ওহীপ্রাপ্ত হলেন। আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁকে নির্দেশ দিলেন : (হে রসুল) আপনাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে আপনি তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন আর মুশ্রিকদের পরোয়া করবেন না (সুরা হিজর : আয়াত ৯৪)। আপনার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দিন (সুরা শু’আরা আয়াত ২১৪)। এই নির্দেশ পেয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তিনি সাফা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মক্কার বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ধরে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করলেন। সবাই এসে পাহাড়ের পাদদেশে জড়ো হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : যদি আমি কোন কথা তোমাদের নিকট উপস্থাপন করি, তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে না? সবাই বলল, আপনি আল-আমিন, আমরা আপনার কথা বিশ্বাস করব। আপনি তো নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক। তিনি বললেন : আমি যদি বলি, এই পর্বত শ্রেণীর আড়াল থেকে একটি অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের আক্রমণ করতে ছুটে আসছে, তাও কি তোমরা বিশ্বাস করবে? সবাই সমস্বরে বলে উঠল : নিশ্চয়ই বিশ্বাস করব। আপনি যে আল-আমীন, আপনি তো আস্্সাদীক। তিনি তখন বললেন : তাহলে তোমরা শোনো, আমি তোমাদের কঠোর আযাবের সতর্কবাণী শুনাচ্ছি। তিনি একে একে একেকটি গোত্রকে সম্বোধন করে বলতে লাগলেন, হে বনু আব্দি মনাফ, হে বনু জাহারা, আমার আত্মীয়স্বজনকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এই কলেমায় তোমরা ঈমান আন। যদি তোমরা এতে ঈমান না আন তাহলে তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধন অসম্ভব হবে। প্রিয়নবী (সা) প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অবলম্বন করলেন, তাতে লক্ষ্য করা যায় যে, আসল কথা তুলে ধরবার পূর্বে তিনি সমবেত সকলের মনমানসিকতা এবং তাঁর প্রতি তাদের আস্থা যাচাই করে নিলেন। ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবীগণকে দারুণ কষ্ট-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই তাঁকে এই মহান কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। বরং তিনি ঘোষণা করেছেন, আল্লাহর কসম, আমার এক হাতে সূর্য এবং অন্য হাতে চন্দ্র এনে দেয়া হলেও আমি আমার কর্তব্য পালন করা থেকে বিরত হব না। তিনি হযরত যায়দ বিন হারিসা রাদি আল্লাহ তা আলা আনহুকে সঙ্গে নিয়ে তায়েফে গিয়েছেন। সেখানকার মানুষকে হিদায়াত দান করবার জন্য, তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচার করবার জন্য। তায়েফে তিনি প্রায় এক মাস অবস্থান করেন। এ সময় তিনি তায়েফের মানুষের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। তায়েফের মানুষ তাঁর দাওয়াত গ্রহণ তো করলোই না বরং তাঁকে কঠোর ভাষায় বিদ্রƒপ করতে লাগল, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করল, এমনকি দৈহিক নির্যাতন চালাল, পাথর মেরে তাঁর জিস্্ম মুবারক রক্তাক্ত করে দিল। তাঁর জিস্্ম ও কদম মুবারক থেকে পবিত্র খুন প্রবাহিত হলো। তিনি এমন অবস্থাতেও ধৈর্য ইখতিয়ার করলেন। তিনি তায়েফবাসীর অকথ্য জুলুম নির্যাতনের কথা ভুলে যেয়ে তাদের জন্য দু’আ করবেন এই বলে : আল্লাহ গো, আমার দুর্বলতা, উপায়হীনতা এবং মানবদৃষ্টিতে হেয়তার জন্য আপনার দরবারেই ফরিয়াদ করছি হে রহমানুর রহীম, হে পরম করুণাময় দয়ালুদাতা, সমস্ত দুর্বলের রব্্ আপনি এবং আপনিই আমার রব। যদি আপনি আমার ওপর ক্রুদ্ধ না হয়ে থাকেন তাহলে আমি কোন পরোয়া করি না। আপনার শাস্তি, আপনার আফিয়াত আমার আশ্রয়। আমি আপনার সেই নূরের আশ্রয় প্রার্থনা করছি যে নূর মুবারকে আসমান যমীন রওশন হয়েছে, যে নূরের ছটায় অন্ধকার বিদুরিত হয়। যে নূরের ছটায় দুনিয়া ও আখিরাতের কর্মসম্পাদন হয়। সেই নূর মুবারকের উসিলায় আপনি আপনার গযব নাযিল করবেন না, আপনার অসন্তুষ্টি নাযিল করবেন না। একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি সাধন করাই আমার কর্তব্য যতক্ষণ না আপনি সন্তুষ্ট হন। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিকা। সেদিন তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে অত্যাচার জর্জরিত অবস্থায় তিনি ধৈর্যধারণ করে যারা তাঁকে আঘাত করল তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করে ইসলাম প্রচারের কি নীতিমালা হওয়া উচিত তার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তিনি সেদিন ক্ষমার পথ বেছে নিলেন, তিনি তাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা চাইলেন। তিনি বললেন : হয়ত আল্লাহ্্ তা’আলা তায়েফবাসীদের কারও বংশে এমন মানুষ পয়দা করবেন যারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আল্লাহর সঙ্গে কারও শরিক করবে না। পরবর্তীকালে হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা প্রিয়নবীকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রসুল, ওহুদের চেয়ে আপনার জীবনে কি কোন কঠিনতর দুর্দিন এসেছে? প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন : তায়েফে আমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন দুর্যোগের দিন এসেছিল। মদীনায় হিজরতের পূর্বে হজ মওসুমে মক্কার আকাবাতে মদীনার বনী খাজরায ও বনী আউসের কিছু প্রধান ব্যক্তির সঙ্গে অতি গোপনে প্রিয়নবী (সা) মিলিত হন এবং তাদের বলেন : তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিফ করবে না। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কথা শুনবে ও মানবে, সুখে-দুঃখে আল্লাহর পথে ধন সম্পদ ব্যয় করবে। আল্লাহর আদেশ প্রচারে কোন নিন্দাকারীর নিন্দাকে পরোয়া করবে না। তোমাদের সঙ্গে সম্মিলিত হলে আমাদের সাহায্য করবে। যেভাবে তোমরা স্ত্রী, সন্তান ও নিজেদের রক্ষা কর ঠিক সেভাবে আমাকে রক্ষা করবে। একজন জিজ্ঞেস করলেন : আপনার কথামতো ওই কাজগুলো করলে আমাদের কী লাভ হবে? প্রিয়নবী (সা) বললেন : জান্নাত। অর্থাৎ তিনি বুঝালেন যে, তোমরা ওইগুলো যথাযথভাবে পালন করলে জান্নাতপ্রাপ্ত হবে। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কথা শুনে তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করলেন। ইশা’আতে ইসলামের জন্য ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ জাল্লা শানুহু নির্দেশ দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : তোমার রব-এর পথে আহ্বান কর হিকমতের সঙ্গে এবং সুন্দর সুন্দর উপদেশ দ্বারা আর ওদের সঙ্গে আলোচনা কর সদ্ভাবে আলোচনার মাধ্যমে (সূরা লহল : আয়াত ১২৫)। এখানে লক্ষ্য করা যায়, আল্লাহর পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করার তিনটি পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে : হিকমত, সদুপদেশ ও সদ্ভাবে আলোচনা। ইসলামের উপস্থাপন পদ্ধতির এ তিনটি মাধ্যম অনুসরণ করার নীতি আমরা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কাল থেকেই দেখে আসছি। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সাম্রাজ্যের সম্রাটদের কাছে, বিধর্মী শাসনকর্তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত সংবলিত যে সমস্ত পত্র দিয়েছিলেন, সেসব পত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাতে হিকমত, সদুপদেশ ও সদ্ভাব প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট প্রেরিত চিঠিতে বলা হয় : বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম। প্রেরক : মুহাম্মদ, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসুল। প্রাপক : হিরাকল, মহান রোম সম্রাট। সালাম বর্ষিত হোক তাঁদের ওপর, যারা সত্য পথের অনুসারী। অতঃপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ করে নিন, নিরাপত্তাপ্রাপ্ত হবেন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক প্রদান করবেন। আপনি যদি অগ্রাহ্য করেন, তাহলে আপনার প্রজাকুলের পাপ আপনার ওপরই বর্তাবে। হে আহলে কিতাব এসো আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একটি ঐকমত্য হয়ে যাক যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করব না, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে কেউ কাউকে রব বলে গ্রহণ করব না। আর যদি তাঁরা একান্তই মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থেক, আমরা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি, আমরা মুসলিম। এই একটি মাত্র চিঠির কথাগুলোর মধ্যে ইসলামের দিকে আহ্বান করার যে পদ্ধতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তাতে হিকমত সৎ উপদেশ ও সদ্ভাবে আলোচনা আবেদন সবই লক্ষ্য করা যায়। এতে আরও লক্ষ্য করা যায়, প্রেরকের নাম ও পরিচয় এবং প্রাপকের নাম ও পরিচয় প্রথমে প্রদত্ত হয়েছে। চিঠি লেখার এ রেওয়াজও প্রিয়নবী (সা) প্রবর্তন করেন। হিদায়েত শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ বহন করে। হিদায়েত হচ্ছে সত্য পথ। হিদায়েত প্রাপ্তির মাধ্যমে আল্লাহ্্ তা’আলার রিয়ামন্দি ও নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব হয়, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সাধিত হয়। আমরা সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর মহান দরবারে এই আরজি পেশ করিÑ আমাদের সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথ, যাদের তুমি নিয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি গযব নিপতিত হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্তগণের সর্বোচ্চ মকাম হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কেরামের। তাঁর পর নবীগণের। উম্মতগণের মধ্যে রয়েছেন সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালেহগণ। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে তারাই ওই সকল পুণ্যাত্মা, যাদের মহান আল্লাহ নিয়ামত ম-িত করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালেহীন (সূরা নিসা : আয়াত ৬৯)। সিদ্দীকগণের ও সালেহীনের অন্তর্গত হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে কেরাম ও মুত্তাকী দীনদারগণ। আর যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে জান কুরবান করে দেন, তারাই শহীদ। ইশা’আতে ইসলামের কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী তিনটি পদ্ধতির নানা মাধ্যমে প্রয়োগ হয়ে আসছে যেমন : কলমের মাধ্যমে ওয়াজের মাধ্যমে, বাহাসের মাধ্যমে, খিদমতের মাধ্যমে, তা’লীমের মাধ্যমে। ইশা’আতে ইসলামের পাশাপাশি খিদ্মতে খাল্্ক সমান গুরুত্ব দিয়ে চালু হয়েছে। কুরআন মজিদ ইরশাদ হয়েছে : ও হে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর (সূরা তাহ্্রীম : আয়াত ৬)। ইশা’আতে ইসলাম নিজের গৃহ থেকেই সূচিত করতে হবে, এটি এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানে লক্ষণীয় যে, প্রিয়নবী (সা)-এর নবুয়াত লাভের পরপরই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হযরত খাদীজাতুল কুব্্রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আন্্হা, হযরত আলী (রা) এবং হযরত যায়দ বিন হারীসা (রা)। এরা ছিলেন তাঁর পরিবার-পরিজনের অন্তর্গত। প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের যে নির্দেশ আল্লাহ তা’আলা প্রদান করেছিলেন তাতে ছিল নিকটতম আত্মীয়স্বজনের কথা। সূরা তাহ্্রীমের ৬ নম্বর আয়াতখানি সম্পর্কে হযরত উমর রাদিআল্লাহ তা’আলা আন্্হু প্রিয়নবী (সা) এর নিকট আরজ করেছিলেন : ইয়া রসুলুল্লাহ্্ নিজেদের দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বোধগম্য হয়, কিন্তু পরিবার-পরিজনকে কিভাবে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাব? এ কথা শুনে প্রিয়নবী (সা) বলেছিলেন : আল্লাহ্্ তা’আলা যেসব কাজ করতে নিষেধ করছেন, সেসব কাজ করতে নিষেধ করবে এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, যেসব কাজ করতে আদেশ করবে। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ঈশা’আতে ইসলামের যে পদ্ধতি স্থাপন করেন তা আল্লাহ্্ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট। তিনি শিক্ষিত সাহাবায়ে কেরামকে বিভিন্ন জনপদে প্রেরণ করেন। ইসলাম প্রচার করতে যেয়ে তাঁকে ভীষণ বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে, দান্দান শহীদ হয়েছে, কত সাহাবী শহীদ হয়েছেন, অনেকগুলো যুদ্ধে মোকাবিলা করতে হয়েছে, অতঃপর মক্কা বিজয় হয়েছে, ঘোষিত হয়েছে : সত্য এসেছে, মিথ্যা দূর হয়েছে, মিথ্যা দূর হবারই। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শান্তির হাওয়া প্রবাহিত হয় আরব ভূখ-ে। সেই সময় দলে দলে লোক তাঁর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) ও হযরত আমর ইবনুল আস (রা) এই সময়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর নির্দেশে সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্য থেকে বহু সাহাবী বিভিন্ন দেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যান। জানা যায়, কোন কোন সাহাবী চীন সুমাত্রা অঞ্চলে আরব বণিকদের নৌজাহাজে করে যাবার পথে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে সফর বিরতি করে এখানে কিছুকাল ইসলাম প্রচার করেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণের শেষ পর্যায়ে সকলের উদ্দেশে বলেন : যারা এখানে উপস্থিত আছ তারা শোন এবং যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিও। সেই নির্দেশের পথ ধরে ইসলাম প্রচারের গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। আজ সমগ্র বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ মুসলিম। তারা সবাই উচ্চারণ করে : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা) সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×