ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনুমতি না পেলেও সমাবেশ করবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

অনুমতি না পেলেও সমাবেশ করবে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। কিন্তু এখনও অনুমতি পায়নি। অনুমতি না পেলেও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ হবেই বলে দলের নেতারা বলেছেন। শুক্রবার বেলা ১১টায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, পুলিশের অনুমতি না পেলেও ৫ জানুয়ারি আমরা রাজপথে নামব এবং ঢাকায় সমাবেশ হবেই। বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনুমতি না পেলেও যেকোন মূল্যে ৫ জানুয়ারি আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবই। উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে আগেই ঢাকায় সমাবেশ ও সারাদেশে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জনসভা করতে পুলিশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এজন্য ২২ ডিসেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনুমতি পাওয়া যয়নি। মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ স্বৈরচারী একনায়কতন্ত্র বিশ্বাস করে বলে ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। বিরোধী দলের সভা সমাবেশ করতে দেয় না। দেশে গণতন্ত্র এখন মৃত। গণতন্ত্রের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ সরকার মানুষের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নামতে দেয় না। এটা আওয়ামী লীগের নিজস্ব গণতন্ত্র। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হবে। মঈন খান বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস। এই দিনে সরকার ভোটবিহীন নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। তাই আমরা সেদিন ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, ওইদিন জনসভার অনুমতি দেবে কি দেবে না তা সরকারের বিষয়। আমাদের করণীয় যা তা আমরা করব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। তারা বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। তাই গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে। গণতন্ত্রের সব জায়গা তারা বন্ধ করে দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ ধ্বংসের রাজনীতি করে। তাই সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় বিএনপি আন্দোলন করছে না। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। বিএনপি তার নিজস্ব কৌশলে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আর সে আন্দোলনের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীনদের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। মঈন খান বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সরকারকে সংলাপের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রস্তব গ্রহণ না করলে আন্দোলনের মাধ্যামেই গণতন্ত্রের দাবি আদায় করা হবে। তিনি গণতন্ত্র উদ্ধারে অতীতের মতো ছাত্রদলকে রাজপথে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। মঈন খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় ও হয়রানি করছে সরকার। অথচ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নামে তথ্য প্রমাণ আছে এরকম মামলাও তুলে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা তুলে নিলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অসংখ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এ সময় ড. মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয় সহসম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ। ৫ জানুয়ারি জনসভা করতে না দিলে শেষ খেলা শুরু হবে-মাহবুব : ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন অভিযাত্রা শুরু হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ওইদিন ঢাকায় জনসভা করতে না দিলে শেষ খেলা শুরু হবে। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ইয়ুথ ফোরাম নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সরকার দ্রুত সংলাপের উদ্যোগ না নিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। খন্দকার মাহবুব বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি একতরফাভাবে নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বুধবার খালেদা জিয়া সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। সরকারকে বলব, আর বিলম্ব নয়, ৭ দফা প্রস্তাব মেনে নিন। দ্রুত আলোচনায় বসুন। নইলে ৭ দফা যখন এক দফায় এসে দাঁড়াবে তখন পরিণতি ভয়াবহ হবে। মাহবুব বলেন, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচীর সমর্থনে জনগণ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। খালেদা জিয়াকে তার বাসায় বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, এ সরকার ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে। তারা বুঝতে পারছে না, জোর করে বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় বেশি দিন থাকা যায় না। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা আতিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান প্রমুখ। এরশাদ রাজাকার- রিজভী ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পাষ- ও রাজাকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। শুক্রবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সমাবেশের অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আমরা বলতে চাই, অনুমতি না পেলেও যেকোন মূল্যে ৫ জানুয়ারি আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবই। রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারির সমাবেশ আমাদের পূর্বঘোষিত একটি কর্মসূচী। আশা করি ক্ষমতাসীন সরকার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপিকে ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি দেবে। কারণ, সভা সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। কাজেই আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই জোর করে ক্ষমতায় বসে থাকা সরকার ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না দিলেও আমরা করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে। তিনি বলেন, আমরা বার বার অঙ্গীকার করছি, ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের জনসভা হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। আমরা এই জনসভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা চাই। তবে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে সরকারকেই এর দায় নিতে হবে।
×