ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ও. কাদেরের প্রকল্প স্থান পরিদর্শন

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ উদ্বোধন করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ উদ্বোধন করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল আর স্বপ্ন নয়। এটি বাস্তবে রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে শুরু হতে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। আর ডিসেম্বরের মধ্যে টানেল নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। কাজ শুরু হওয়ার চার বছরের মধ্যে শেষ হবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই টানেল নির্মাণ কাজ। শুক্রবার সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে নেভাল এ্যাকাডেমি এলাকায় প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনকালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি জানান, প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য সরকার চীনের প্রেসিডেন্টকে আশা করছে। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। জবাবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিডিউল ঠিক হলে তাঁদের প্রেসিডেন্ট এসে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন বলে আশ্বাস দেন। টানেলের স্থান পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এমএ লতিফ এমপি ও শামসুল হক চৌধুরী এমপি। মন্ত্রী এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে টানেল বিষয়ে অবহিত করেন। চীনের অর্থায়নে কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১শ’ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ১০ জুন দুই দেশের এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের যোগাযোগ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের পরিবহন ও যোগাযোগ উপমন্ত্রী চি কু মাও। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর এমও (মোড অব অপারেশন) সই হয় টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে। মূলত ওই চুক্তির মধ্য দিয়েই টানেল নির্মাণের ক্ষেত্রে সকল অনিশ্চয়তার অবসান হয়। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে পরামর্শক নিয়োগের কাজ। সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চার বছরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে। চট্টগ্রামের নেভাল এ্যাকাডেমি এলাকা থেকে টানেলটি কর্ণফুলী তলদেশ দিয়ে ওপারে গিয়ে সংযোগ স্থাপন করবে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এতদিন অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হলেও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ অবকাঠামোয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হওয়ার পাশাপাশি এটি হবে ভ্রমণপিয়াসুদের জন্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর একটি স্পট। দুই লেন বিশিষ্ট এই টানেলের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার। দুই পাশে থাকবে প্রায় ৫ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে তুলে নিলাম। এরপর মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চট্টগ্রামকে ঘিরে গৃহীত হয় ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একের পর এক বাস্তবায়িত হয় ফ্লাইওভার, নতুন সড়ক ও পুরনো সড়কের সংস্কার কাজ। ইতোমধ্যেই উদ্বোধন হয়েছে বহদ্দারহাট এমএ মান্নান ফ্লাইওভার ও দেওয়ানহাট ওভার পাস। কদমতলী ওভার পাসের কাজটিও শেষের দিকে। নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার’ নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি চউক গ্রহণ করলেও এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নমূলক সড়ক ও সেতু বিভাগের কাজ। ফলে এটি ওই মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। তবে চউকের পক্ষ থেকে যে সহায়তাগুলো প্রয়োজন তা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাওয়ায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন আর অনিশ্চয়তা নেই। বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম ৫০ বছর এগিয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
×