ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি

মোহতারেমা, ইংরেজী নববর্ষের খোশ আমদেদ! সবাই আপনাকে ‘বেগম’ বলে। আমি সেটা না বলে, বিবি সম্বোধনটাই পছন্দ করছি। বাঙালী নাই বা হলেন। বাংলাদেশী তো বটে! অনেকে বলেন, আপনাকে কেবল ঘসেটি বেগমের পাশেই মানায়। কিন্তু তার পিঁড়িটাও অনেক উঁচু। সেখানে ওঠাও আর এখন আপনার পক্ষে সম্ভব না। আপনি তৈমূর নন যে খোঁড়া পায়ে গিরি লঙ্ঘনে সক্ষম হবেন। লেডি ম্যাকবেথের সঙ্গে মিল আছে। হাতেও রয়েছে অনপনেয় রক্তের দাগ। লেডি মার্কসের সঙ্গেও মিল। লাস্যে ও বিলাসিতায়। তবুও ‘ম্যাডাম’ বলছি না। আপনার ভৃত্যরা ও নামে ডাকে। আপনাকে জীবনে দ্বিতীয়বার চিঠি লিখছি। কারণ আপনি আমার কাতারে নেমে আসার খায়েশ ব্যক্ত করেছেন। প্রথম চিঠির কথা আজ বলার মওকা হবে না। আমি রাজপথের মানুষ। আপনি মসনদের মুনিব। ফারাক আসমান জমিন। এই ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলা যে যায় না, তা বলব না। কিন্তু তার জন্য আপনার অনেক বিবর্তন ঘটাতে হবে। আমি পঁচাত্তর পার করছি। আমার আর এখন পাওয়ার কিছু নেই। হারাবারও কিছু নেই। জীবন হারাতে ভয় নেই। একাত্তরে জীবন যায়নি। এখন আমার এই তুচ্ছ জীবনটা দিয়ে একজন প্রিয় মানুষের জীবন বাঁচাব বলে বেপরোয়া হয়েছি। বয়সে চুল পাকে, জ্ঞানবুদ্ধি পাকে না, সেটা জানি। মসনদে বসার যোগ্যতা কোন দিনই আমার ছিল না। এরশাদ সাহেবও সেই সত্যটা স্বীকারে অকৃপণ হবেন বলেই আমার বিশ্বাস। আমি জীবনে একবারই মাত্র তার মুখোমুখি হয়েছি। সেটা তাঁরই বাড়িতে। সেদিন তিনি আমাকে মনে রাখার মতো দুটো কথা বলেছিলেন। কী বলেছিলেন সেটা পরে বলছি। আগে বলি আমি কী বলেছিলাম। আমি বলি, আমি প্রেসিডেন্ট, আপনি ক্ষমতায় থাকতে আমাকে কখনও দড়ি দিয়ে বেঁধে কিংবা পুলিশ দিয়ে ঠেঙ্গিয়েও আপনার দরবারে টেনে নিতে পারেননি। আপনার প্রধানমন্ত্রীও বিফল হয়েছেন। এসবি, এনএসআই, ডিজিডি এফআই পারেনি। আমাকে বৌবাচ্চাসহ বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। আমার গাড়ি হাইজ্যাক করালেন। তাতে সন্ত্রাসী বসিয়ে নাজিমুদ্দীন রোডে আলাউদ্দীন ছাতি কোম্পানির গাড়ি থেকে স্যালারি বিলের তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিনতাই করালেন। ডাকাতি কেসে ফাঁসাবার ফন্দি আটলেন। শিল্পব্যাংকের তৎকালীন এমডি বন্ধু ম খা আলমগীর সারাদিন নিজের অফিসে বসিয়ে রাখায় সে যাত্রায় রক্ষা পেলাম, চারবার জেলে পুরলেন। কিন্তু আমি আপনার শ্রী মুখ দেখতে রাজি হইনি। আজ আপনার সাবেক সাক্ষীগোপাল প্রধানমন্ত্রীর বন্ধু গোলাম কবির এক-দু’বার বলতেই আমি আসতে রাজি হয়ে গেলামÑ কেবল একটা কথা জানতে। আপনি জিয়ার বিবিকে এক টাকায় গুলশানের আলিশান মাকান লিখে দিলেন। যেন ওটা জনগণের নয়। আপনার বাপের সম্পত্তি। আপনি ক্যান্টনমেন্টের অত বিশাল বাড়িটাও তাকে মুফতে দিয়ে দিলেন। যেন সেটাও আপনার বাপের তালুক। অপ্রকাশ্যে আর কিছু দিয়েছেন কিনা, সেটা আপনিই ভাল জানেন। কিন্তু তারপরও কেন খালেদা বিবির সঙ্গে আপনার আপোস হলো না? এবার শুনুন এরশাদ কী বললেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহেব বললেন, ‘আরেফিন সাহেব, আপনি লেখেন ভাল, বলেন ভাল, জানেন ভাল কিন্তু একটা কথা মোটেই বুঝেন না। সেটা কী জানেন? সেটা এই যে নির্বাচন জিততে এখন কম করে একশ’ হু-া আর দুশো গু-া লাগে। তার সঙ্গে বস্তা ভরা টাকা! আপনি সাধা লক্ষ্মী পায়ে ঠেলেছেন। আর থাকল বেগম জিয়ার কথা। তিনি কেবলমাত্র টাকার ব্যাপারেই আপোস করেননি। ’৯৬-এর নির্বাচনের কথাই বলছেন তো? মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের সে রাতে আপনিও তো উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বাড়িতে। সেখানে ৭ দল বসিয়ে রেখে তিনি লোক পাঠিয়েছিলেন আমার কাছে। আমি বললাম, হ্যাঁ দু’জন। এরশাদ বললেন, ঠিক। আমি তিন কোটি দিতে চেয়েছিলাম। বেগম সাহেব সাত কোটি চেয়েছিলেন। আমি পাঁচ কোটিতে রাজি হতাম। তিনি নাছোড়বান্দা। আমি বললাম, কিন্তু আপনারই তো হার হলো। আপোসহীন নেত্রী হয়ে খালেদা বিবি তো শত শত কোটি টাকা ক্যাচ করলেন। আপোসহীন নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হলেন। তেনার গুণধর পুত্র তারেক রহমান যুবরাজ হলো। এরশাদ সাহেব বললেন, আত্মজীবনী লিখছি। কাগজে বের হচ্ছে। তাতেই সব কথার উত্তর পাবেন। মোহতারেমা, আপনি তরবা-তিল্লা করে, লেবাস পাল্টে আদল-বদলে, পরচুলা ফেলে ইসলামী লেবাসে বোরকা বা হেজাব নিয়ে যদি রাজপথে নেমে আসেন বা সত্যিই আসতে পারেন, তাহলে সেই প্রথম যেদিন আপনাকে রাজপথে দেখেছিলাম সেদিনের মতো আবার হয়ত আপনার পাশে আমি একাই থাকব। তবে আমার বিশ্বাস, আপনি কোন দিনও আর রাজপথে হাঁটতে পারবেন না। পারলেও আপনার আশপাশে আজ যারা ‘ভন ভন’ করছে। আপনাকে বন বন করাচ্ছে। তারা বেমালুম হাওয়া হয়ে যাবে। ফখরুল বলেন, দুদু বলেন, জয়নুল বলেন, টেকো উকিল বলেন, কেউ রবে না। ছাত্রদল নেতা কাশেম, জালাল রিপনের জার্সি বদলের কথা, মওদুদের ডিগবাজির কথা নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। আদর্শহীন চরিত্রহীনরা এমনটাই করে থাকে যুগে যুগে। পুরনো দিনের কথা কেউ সহজে স্মরণ করতে চায় না। যাদের অতীত গৌরবময়, আমি তাদের কথা বলছি না। আমি বলছি ১৯৮৩ সালের ২৮ নবেম্বরের কথা। ৩০ মে ৮১, অবৈধ সামরিক শাসক, আপনার ‘নারাজ-নাখোশ স্বামী’ খুন হলেন। তার লাশ গুম হলো। বিচারপতি সাত্তারের হাত ঘুরিয়ে এরশাদ ক্ষমতা দখল করার ১৮ মাস পরের কথা। স্মরণ করা ভাল, আপনার ‘কুইসলিঙ’ স্বামীও নব্য মীরজাফরের হাত ঘুরিয়ে বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে রাজমুকুট পরেছিলেন। নিম তেতো, উচ্ছে তেতো, বিয়ার তেতো, তারও চেয়ে তেতো ‘পঞ্চম বাহিনীর অধিপতি’ আপনার নাফরমান পতির বেইমানি আর তার বেরহম দেলে মুনাফেকির কথা। সেদিন রাজপথে আপনার বেহদ বাঙালী বিধবা চেহারা দেখে আমার মায়া হয়েছিল। জাপানের বিউটিশিয়ান তখনও আসেনি। বিলাত আমেরিকার বিধবাদের মতো আপনি তখনও নতুন সংসার পাতেননি বলেই মালুম হয়েছিল আপনার প্রসাধনহীন মলিন বদন ও ভদ্রোচিত মামুলি ভূষণ দেখে। আপনি একা। নিঃসঙ্গ বসে আছেন তোপখানা রোডে সচিবালয়ের দেয়াল ঘেঁষা ফুটপাথের ধুলামাখা পাষাণের ওপর। জিয়ার তৈরি আপনার দলের হাইপ্রোফাইল সামরিক বেসামরিক অরাজনৈতিক নেতারা তোপখানা চৌরাস্তার পিচের ওপর খবরের কাগজ বিছিয়ে চীনা বাদাম চিবোচ্ছেন। অতীত সুখের কথা ভাবছেন। নবাবী দিন, জমিদারি আমল ও ওজারতির সুখ স্মৃতির জাবর কাটছেন। সচিবালয়ের আর এক প্রান্তে, ওসমান গনি রোডের দিকে, ‘শেখের বেটি’ সাহস করে যেই না শাবল দিয়ে দেয়ালটা ভাঙতে শুরু করল অমনি লাঠিচার্জ শুরু হলো। টিয়ারশেল ফাটতে লাগল। মুহূর্তে আপনার লে. জেনারেল, মেজর জেনারেল, কর্নেল, লে. কর্নেল, মেজর, এমআরসিপি, পিএইচডি, বার এ্যাট ল’ অধ্যুষিত নব্য পঞ্চম বাহিনী কর্পুরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আমি তো ৮ বছর বয়স থেকেই সেই মোক্ষম জিনিসটার স্বাদ পেতে শুরু করেছি। সেটাও আপনার ভাঙ্গা সংসার জোড়া লাগানো মহান পিতা শেখ মুজিবের দুর্বুদ্ধির কারণে। আপনার পেয়ারা পাকিস্তানের জাতির পিতা জিন্নাহ বললেন, ভাত না পেলে উর্দু পোলাও খাও। রুটি না পেলে কেক খাও। উর্দু বাতচিত কর, আরবী হরফে উর্দুতে খত লেখ। উর্দুতে দাশখত লেখ। উর্দুতে মুহব্বত কর, উর্দু শাদি কর। মা মণিকে আম্মিজান ডাক। বধূয়াকে বেগম হুজুর বল। আব্বুকে আব্বা হুজুর। মন্ত্রীকে উজির, প্রধানমন্ত্রীকে উজিরে আজম। প্রেসিডেন্টকে সদর বলে বেহেস্তের টিকিট হাসিল কর। মুজিব বেঁকে বসলেন। জিন্না মহা খাপ্পা হলেন। তার আগে আপনার প্রিয় নেতা জিন্নার হুকুমে কলকাতার দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ ধনে-প্রাণে খতম হলো দেশভাগের সময়। আমরা কোন রকম প্রাণ বাঁচিয়ে যশোরে এসেছি। আমি শহরের মুসলিম একাডমিতে ৪ কেলাসে দাখিল হয়েছি। আব্বা লোটা কম্বল নিয়ে ঢাকায় হিজরত করেছেন চাকরি বাঁচাতে। সেদিন আমি রোজকার মতো এক ব্যাগভর্তি ইংরেজী বই নিয়ে স্কুলে গিয়েছি সকাল ৮টায়। কিন্তু স্কুলের দরজা খুলেনি। শুনলাম নতুন একটা কথাÑ ‘ধর্মঘট’। ফিরতি রিক্সা পেলাম না। ভয়ে ভয়ে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করলাম। নিয়াজ পার্কের কাছে আসতেই টিয়ারশেলের কালো ধোঁয়ার কু-লীর মধ্যে আটকে গেলাম। তারপর কী হলো? সেকথা মনে নেই। তবে ‘আল্লার মাল আল্লা নেননি। বড় হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি। এখনও ‘লুকিং ফর শত্রুজ’। অনেক দিন পর জ্ঞান-গম্মি পোক্ত হলে একজন জেল ফেরত প্রিয় মানুষের কাছে জানলাম সে দিনটা ছিল ১১ মার্চ ১৯৪৮। ভাষাযুদ্ধের প্রথম রাউন্ড। ঢাকায় সেদিনের উত্তাল দৃশ্যপটে উদিত হয়েছিলেন বাংলার রাজনৈতিক আকাশের শুকতারা শেখ মুজিব। সেই রাজবন্দী জেলে ছিলেন যেদিন বিএনপির পূর্বপুরুষ মুসলিম লীগ ২৪ এপ্রিল ১৯৫০, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালিয়ে রাতের অন্ধকারে কৃষকের তেভাগা আন্দোলনের ৭ নেতাকে হত্যা করেছিল। ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ও মনি সিং কারা শহীদ দিবসে খাপড়া ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছিলেন। ১২ বছর বয়সে পেলাম মহান একুশ। তাতেও কারারুদ্ধ মুজিব কা-ারী। সেদিন বগুড়ার যুদ্ধাপরাধী আলিমের দল, হান্নান শাহ, সা-কা-চৌধুরী ও ওসমান ফারুকের বাবার দল জালেম মুসলিম লীগ ভাষা শহীদের রক্তে বাংলার মাটি ভেজাল। ’৫৪, ’৬২, ’৬৬ ও ’৬৯ গেল। ’৭০-এ মুসলিম লীগের কবর হলো। মৃত বংশ লতিকার শেষ কুসুম আপনার স্বামী পঁচাত্তরে মুজিব হত্যার পর লাগ ভেলকি লাগ বলে ভানুমতির খেল দেখালেন। মুক্তীয় ৩ নবেম্বর জেলহত্যার শিকার হলেন জাতীয় চার নেতা। সে সব খুন যে আপনার স্বামী জিয়া করাননি, সে কথা এখনও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। পাকিস্তানে কালাবাগের আমিরকে জুলফিকার আলী ভুট্টো নিজ হাতে খুন করেনি। কিন্তু হুকুমের আসামি বলে ফাঁসিতে ঝুলেছে। ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের বিতর্কিত চরিত্র স্বৈরাচার অলিভার ক্রমওয়েলকে মৃত্যুর ২ বছর পর কবর থেকে তুলে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। জাতির জনক শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের ৪ কা-ারী হত্যার হুকুমের আসামিকেও ক্রমওয়েলের পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আর আমরা কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না। দুটোই ইতিহাসের শিক্ষা। ২৮ নবেম্বর কাঁদানে গ্যাস আচ্ছন্ন তোপখানা রোডের ফুটপাথে বসা আপনার মলিন বদন দেখে এ সব কথা আমি বেমালুম ভুলেই গেলাম। আমি সামনের হোটেল থেকে রুমাল ভিজিয়ে আনলাম। আপনি চোখ ধুয়ে আমার সঙ্গে হাঁটতে শুরু করলেন। বাসস অফিসের সামনের ফুটপাথে গিয়ে আবার একটা টুলে বসলেন। আমার দেলে রহম হলো। ছুটে গিয়ে ৪২-৪৩ পুরানা পল্টনে একটা রাজনৈতিক দলের অফিসে গিয়ে সেখানে অপেক্ষমাণ হাফটন ট্রাকে দুই চোঙ্গার মাইক এনে আপনার হাতে তুলে দিলাম। আপনি সরব ও সচল হলেন। দশ-বিশজন আমজনতা এলো। আপনি হাঁটছেন। ট্রাক নিয়ে আমি আপনাকে অনুসরণ করলাম। গুলিস্তান হয়ে ফজলুল হক হলের কাছে আসতেই কার্ফ্যু জারি হলো। বিডিআর পথরোধ করল। আপনার অনুসারী হাত গুনতি মানুষগুলো আবার উধাও হলো। লং স্টোরি শর্ট করি। আপনি এফএইচ হলে আশ্রয় নিলেন। আমি ছুটলাম মাইক ফেরত দিতে। আপনার একজন ব্যারিস্টার নেতা চকবাজারের দিকে ধাবমান আমার নিয়ন্ত্রণাধীন মিনিট্রাক থামিয়ে বললেন, ম্যাডাম আটকা পড়েছেন। গাড়ি দরকার। ট্রাকে আপনাকে তুলতে আমার সাহস হলো না। আমি সে রাতে রহমতগঞ্জের একটা জুতার কারখানার পাটি বিছানো ফ্লোরে কোটি কোটি ছারপোকার সঙ্গে বাসর রচনা করেছিলাম। আপনার খবর সেই ব্যারিস্টার হয়ত জানেন। ফালুও জানতে পারেন। সবচেয়ে ভাল জানেন আপনি। এটাই আপনার প্রথমবার রাজপথে নামার ইতিহাস। আপনি হয়ত ভুলেই গেছেন। কেউ ভোলে কেউ ভোলে না। আমি ১৫ বছর বয়সে ভাষাযুদ্ধে প্রথম জেল খেটেছি। বায়তুল মালের হেফাজতকারী উজিরে খাজানা শ্রদ্ধেয় সহবন্দী মুহিত ভাই সেটা মনে রেখেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ থেকে ধরলে আমার রাজনীতির বয়স প্রায় ৬৫ বছর। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বাতের রোগী, হার্টের মরিজ আর লুটপাট খুন-খারাবির আসামি এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আন্দোলন হয় না। আন্দোলনের আউট সোর্সিং চলে না। বোমা মেরে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে, পুলিশ মেরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হয় না। গ্রেনেড হামলা, জঙ্গী পালন, রাজাকার যুদ্ধাপরাধী ঘাতক ধর্ষক লালন তোষণের কালো ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে, জ্বালাও পোড়াও মানুষ মারো সেøাগান দিয়ে এবার খোঁড়া পায় রাজপথে নামলে আপনি আবারও নিঃসঙ্গতায় সুপার ফ্লপ হবেন। জামায়াত দিয়ে গুলি করলে মুক্তিযোদ্ধারাও ট্রিগার চাপতে বাধ্য হবেন। দেশে গণতন্ত্র মজবুত রাখতে একটা শক্ত বিরোধী দল দরকার। আপনি সাত দফা দিয়েছেন। কাকতালীয় ব্যাপার, আমার বড় বোনের নাম হাসিনা। ছোট বোন খালেদা। মুজিব জাতির পিতা। শেখ হাসিনা তাঁর বড় মেয়ে। আল্লার ইচ্ছায় ১৫ আগস্ট জিয়ার মৃত্যু ফাঁদ তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। ভুল করে হলেও জাতির পিতা আপনাকেও মেয়ে মেনেছেন। আমার রাজনৈতিক সত্তারও তিনি মহান পিতা। তাই মীমাংসার শেষ চেষ্টায় অভাজনেরও আছে ৭ দফা। মানুন না মানুন, শিডিউল পেলে সেটা আপনাকে আমি শীঘ্রই জানাব। নজর রাখুন ‘চতুরঙ্গে’। আজকের মতো খোদা হাফেজ। আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জয়বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। ইতি, একজন নগণ্য মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির তুচ্ছ খাদেম। লেখক : ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট
×