ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

সন্দেহজনক লেনদেন বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মুদ্রাপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) বেড়েছে ৪৭.৩৮ শতাংশ এবং নগদ লেনদেন প্রতিবেদন (সিটিআর) বেড়েছে ১২.৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রকাশিত ‘বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৪’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন গবর্নর ড. আতিউর রহমান। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোতে সিটিআর’র সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ১ হাজার ৯২৯টিতে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৯টি। ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯১টি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসটিআর’র সংখ্যা ছিল ৬১৯টি। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪২০টি। ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১৭৫টি। নগদ লেনদেন প্রতিবেদন বা সিটিআর বলতে কোন একটি ব্যাংক হিসাব থেকে এক দিনে ১০ লাখ টাকা বা তার ওপরে নগদ জমা বা উত্তোলনকে বোঝায়। আর যে লেনদেনটি সাধারণ লেনদেন থেকে আলাদা করা যায় তাকে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন বা এসটিআর বোঝায়। বিশেষ করে কোন সম্পদ অপরাধ কর্মকা-ের মাধ্যমে অর্জন হলো কিনা বা লেনদেনকৃত অর্থ কোন সন্ত্রাসী কর্মাকা-ে ব্যয় হচ্ছে কিনা এ ধরনের সন্দেহ থেকে এই প্রতিবেদন করা হয়। এতে বলা হয়, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন ২০১২ এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন ২০০৯ অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি রিপোর্টিং এজেন্সি বিএফআইইউকে সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন জমা দিতে বাধ্য। ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, মানি চেঞ্জার, রেমিট্যান্স আদান-প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, জুয়েলারি ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রিপোর্টিং এজেন্সি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। জানা গেছে, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তের প্রয়োজনে এসব তথ্য সরবরাহ করে বিএফআইইউ। গত অর্থবছরে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে এমন অনুসন্ধানের জন্য সরবরাহ করা তথ্যের সংখ্যা ছিল ৭১টি। এর মধ্যে জালিয়াতি সংক্রান্ত তথ্য ছিল ১১টি, দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য ছিল ১৫টি। মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত তথ্য ছিল ৫টি, ঘুষ সম্পর্কিত তথ্য ছিল ২টি, জঙ্গী অর্থায়ন সম্পর্কিত তথ্য ছিল ৩টি, হত্য সম্পর্কিত ৪টি, মূল্য বাড়িয়ে দেখান সম্পর্কিত ৫টি, মাদক ব্যবসা সম্পর্কিত ২টি, অবৈধ সম্পদ আহরণ সম্পর্কিত ২টি, জাল কারবার সম্পর্কিত ৪টি, অপহরণ সম্পর্কিত ৯টি, চাঁদাবাজি সম্পর্কিত ১টি এবং অন্যান্য তথ্য ছিল ৮টি। প্রতিবেদনে সন্দেহজনক লেনদেনের ১০টি কেস স্টাডি দেয়া হয়। এতে দেখা যায়, মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট মুক্তিপণ লেনদেনে ব্যবহƒত হচ্ছে। বিএফআইইউ’র অনুসন্ধানে ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে, যেগুলোর মাধ্যমে মুক্তিপণের লেনদেন হয়েছে। এসব এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২১ লাখ ৫২ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ভুয়া চেকের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত হয়েছে, মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। কো-অপারেটিভ সোসাইটি তাদের সদস্যদের অর্থ আত্মসাত করেছে। উচ্চ সুদ দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে তা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে কোন কোন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সংঘবদ্ধ চক্র ইন্টারনেট ব্যবহার করে জনগণের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে। ওভার ইনভয়েসিং করে টাকা পাচার করেছে কেউ কেই। আবার পাচারকৃত সেই অর্থ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরও বেড়েছে। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ১৪৭টি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সংগঠন এগমন্ট গ্রুপের সদস্য পদ পায় বিএফআইইউ। এর পর থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ১০টি আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে এমওইউ করেছে বিএফআইইউ। ২০০৮ সালের আগস্ট থেকে ২০১৪-এর জুন পর্যন্ত মোট ২৫টি গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে এমওইউ করেছে বিএফআইইউ। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউ দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইনী কাঠামোর আওতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে যা দেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সুসংহতকরণসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এ সময় তিনি জানান, বিএফআইইউ ২০১৩-১৪ বছরকে অর্জনের বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
×