ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রচার

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রচার

অর্থনীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদরা গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত-বিশ্লেষণ তুলে ধরবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। গবেষণার বাইরে আগ বাড়িয়ে এমন কোন অভিমত বা মন্তব্য প্রকাশ সমীচীন নয় যাতে দেশের উন্নয়নের ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার অবকাশ থেকে যায়। অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য এবং তা গভীরভাবে অনুধাবন ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনে এর গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অর্থনৈতিক কর্মকা- পর্যবেক্ষণ, অর্থনীতির উন্নয়নের যাবতীয় সম্ভাবনাকে শনাক্তকরণ এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য সামগ্রিক গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। পরিতাপের বিষয় হলো, দেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাল্পতা রয়েছে। স্বীকৃত সংস্থা হিসেবে যে দু-একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার কোন একটির সামান্যতম পদস্খলন জাতির সম্মুখ পদযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে দেশের বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৪-১৫ : অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রতিবেদনে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনাকালে সিপিডির একজন ফেলো মন্তব্য করেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বাংলাদেশ যখন বাইরের বিনিয়োগ বাড়ানোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপও গৃহীত হচ্ছে সে সময়ে এ ধরনের মন্তব্য বহির্বিশ্বকে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নিকট অতীতের যে কোন বছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী বছরে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকাশকারী কর্মকা- কম হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশ এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। অনেকটা শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকার কারণেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল থেকেছে। দেশে অর্থনীতির এমন শক্তিশালী অবস্থান বিগত চার দশকে এ মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়নি। সুতরাং ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা’ বিষয়ে সিপিডির মন্তব্যে বস্তুনিষ্ঠতা উপেক্ষিত হয়েছে। কিছুদিন আগেও সিপিডির কাছ থেকে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে বিতর্কিত বক্তব্য পাওয়া যায়। জাতিসংঘের বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) তৈরি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশকে এক দশকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ সরকার ঘোষিত আগামী ৭ বছরের মধ্যে নয়। সিপিডির ওই বক্তব্যকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের প্রয়াস হিসেবে দেখেছিলেন রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা। ২০১৪ সালে রফতানি প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় গতিশীলতা পেয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বেড়েছে, বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে এবং মূল্যস্ফীতি স্বস্তিজনক পর্যায়ে রয়েছে। সিপিডির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও এসব স্বীকৃত। জনশক্তি রফতানি এবং প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বিষয়টিও সিপিডির প্রতিবেদনে রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় সিপিডির গবেষণাপত্র বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। সংস্থাটির গবেষণালব্ধ তথ্য জাতির উপকারেও এসেছে। এখন একই সংস্থার ভূমিকা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় দেখা দিলে সেটা হবে খুবই হতাশাজনক। দেশীয় কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেশের স্বার্থের বিপক্ষে শক্তিশালী অস্ত্র হোক- এটা কারোরই কাম্য হতে পারে না। গঠনমূলক পরামর্শই কাক্সিক্ষত, নেতিবাচক প্রচার নয়।
×