ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার ডাকে সাড়া না দেয়ায় জনগণকে আ’লীগের অভিনন্দন

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদার ডাকে সাড়া না দেয়ায় জনগণকে আ’লীগের অভিনন্দন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধ কর্মসূচী সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলের পক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার ধ্বংসাত্মক প্রতিহিংসার রাজনীতি জনগণ আজ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁর লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা, ভাংচুর, বাসে অগ্নিসংযোগ, বোমা, ককটেল নিক্ষেপ করে সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করলেও জনগণ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে। হানিফ বলেন, অবরোধের নামে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাজধানী ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনা উস্কানিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরপরাধ নাগরিকদের যানবাহনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে অনেককে গুরুতর আহত করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রাজনীতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য দিশেহারা খালেদা জিয়া নিরপরাধ শান্তিকামী জনগণের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যেই দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, খালেদা জিয়া দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেন না। তাঁর লক্ষ্যই হলো যে কোনভাবেই হোক ক্ষমতার মসনদ দখল করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা। সাংবাদিক সম্মেলনে মাহবুবউল আলম হানিফ আরও বলেন, খালেদা জিয়া এ পর্যন্ত দেশের গণমানুষের অধিকার ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবি নিয়ে কোন আন্দোলনের কর্মসূচী দেননি। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, নারী ধর্ষণ-হত্যা, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতার বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করেছে তাদের রক্ষায় এবং দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়া লাগাতার বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী দিচ্ছেন। দেশবাসীকে জিম্মি করে উনি গণতন্ত্র হত্যা ও মানুষের ভাতের অধিকার হরণের ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছেন, যা দেশবাসী কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শত উস্কানির মুখেও ধৈর্য্যরে সঙ্গে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে। কোন প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি নেত্রীকে হত্যা, খুন, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসাত্মক প্রতিহিংসার রাজনীতির পথ পরিহার করে গণমানুষের কল্যাণে তাদের পাশে থেকে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই পর্বে বিশ্ব এজতেমা টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হবে। আজ (মঙ্গলবার) বিশ্ব এজতেমার উদ্যোক্তাদের মুরব্বি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করার চেষ্টা করেছিলেন। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচী না থাকার অজুহাতে তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো খালেদা জিয়ার ধর্মীয় বিশ্বাস একেবারেই ঠুনকো। এটা ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনীতিকে কলুষিত করারই নামান্তর। খালেদা জিয়া ঘোষিত তথাকথিত অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুস্থ রাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অবরোধে জনগণের সাড়া নেই- বিমানমন্ত্রী মেনন ॥ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবরোধ কর্মসূচীতে জনগণ সাড়া দেয়নি। ঢাকায় তাঁর দলের নেতাকর্মীরা আগের মতোই আন্দোলনের হুমকি-ধমকি দিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত-শিবির চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে। মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডের শহীদ আসাদ মিলনায়তনে জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভায় মেনন আরও বলেন, খালেদা জিয়া ও তাঁর মিত্র জামায়াত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা করে অসাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে দম হারিয়েছিলেন। একবছর পর আবার দম নিয়ে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ কর্মসূচী পালনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছেন। কিন্তু তাদের চক্রান্ত জনগণ সফল হতে দেয়নি। বিমানমন্ত্রী আরও বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আবারও যে বক্তব্য দিয়েছে, তা চরম বেয়াদবী। এই অর্বাচীন ছাত্রজীবনে কোন রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত ছিল না। যার রাজনৈতিক উত্থান আকস্মিক, সে ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ ও মূর্খই হবে। সে কেবল বেয়াদবই নয় বিশ^বেয়াদব। তার পক্ষেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও স্বাধীনতার স্থপতি সম্পর্কে এ ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য রাখা সম্ভব। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির যেকোন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র জনগণকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ করবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আক্তার নাহারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আবুল হোসাইন, মোস্তফা আলমগীর রতন, সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, কিশোর রায়, আমেনা বেগম, আঞ্জুমান আরা, মুঞ্জু আরা, শাহানুর প্রমুখ। খালেদা জিয়া নিজেই অবরোধ তুলতে বাধ্য হবেন- সুরঞ্জিত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবরোধ কর্মসূচী দুই-একদিনের মধ্যেই জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে কিংবা তিনি নিজেই অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হবেন। মঙ্গলবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী’ আয়োজিত ‘চলমান রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে সংঘাত-সহিংসতার পথ বাদ দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব অন্যায় আচরণ ও সহিংস কর্মকা- ত্যাগ করে আইনের পথে আসুন। নিজেকে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাববেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার হরতাল জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তার অবরোধও জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। একটি নির্বাচিত সরকারকে দুই-একটি হরতাল কিংবা অবরোধ দিয়ে সরানো যায় না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সোমবার গাড়িতে বসে নাটক করেছেন। গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় যেতে চেয়েছিলেন? তাঁর মিটিং, জনগণ ও নেতাকর্মীরা কোথায়? খালেদা জিয়া কর্মসূচী দিলেন, কিন্তু তাঁর দলের কোন নেতাকর্মীকে তো মাঠে দেখা যায়নি। খালেদা জিয়া দেখেছেন, তার দলের নেতাকর্মীরাই তাঁকে ত্যাগ করেছেন। কেউ রাস্তায় নামেননি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী যথাসময় আরেকটি নির্বাচন দেয়া হবে। সব দলের অংশগ্রহণে সে নির্বাচন হবে। তিনি পারলে নির্বাচনে আসবেন। সংগঠনের উপদেষ্টা হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপির সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, শিরিন নাঈম পুনম এমপি, সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী, আবদুল হাই কানু প্রমুখ।
×