ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ারেন্ট অব প্রিসীডেন্স সুপ্রীমকোর্টের গাইডলাইন

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

ওয়ারেন্ট অব প্রিসীডেন্স সুপ্রীমকোর্টের গাইডলাইন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহের পদমর্যাদা নির্ণয়ে ১৯৮৬ সালে জারি করা পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসীডেন্স) অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। পর্যবেক্ষণে পদমর্যাদাক্রম প্রণয়নে একটি গাইডলাইনও দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার আপীল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন। এই গাইডলাইন অনুসারে নতুন পদমর্যাদাক্রম প্রণীত হলে সাংবিধানিক পদ অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ এবং এ্যাটর্নি জেনারেল, ন্যায়পাল, নির্বাচন কমিশনার ও সংসদ সদস্যগণ পর্যায়ক্রমে উপরে দিকে স্থান পাবেন। রিটকারীর আইনজীবী জানিয়েছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুসারে প্রধান বিচারপতির পদমর্যাদা ও স্পীকারের পদমর্যাদা থাকবে একই অবস্থানে। বর্তমান পদমর্যাদাক্রম অনুসারে স্পীকারের অবস্থান তিন এবং প্রধান বিচারপতির অবস্থান রয়েছে চার নম্বরে। মন্ত্রীদের সঙ্গে একই পদমার্যাদায় থাকবেন আপীল বিভাগের বিচারপতিগণ, প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে একই অবস্থানে থাকবেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, সচিবদের ওপরে পদমর্যাদা হবে সাংবিধানিক পদ অর্থাৎ এ্যাটর্নি জেনারেল, ন্যায়পাল, নির্বাচন কমিশনার ও সংসদ সদস্যগণসহ অন্য পদসমূহের। এরপরের অবস্থানে থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা। এ ছাড়া জেলা জজদের অবস্থান হবে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই স্তরে। বর্তমান পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স সংশোধিত ২০০৮) তালিকায় তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ, বিমান) প্রধানরা মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ১২ নম্বর অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে জেলা জজসহ এ মর্যাদার কর্মকর্তাদের স্থান রয়েছে ২৪ নম্বরে। রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুর রব চৌধুরী। ফিরে দেখা ॥ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে তৎকালীন মহাসচিব ও জেলা জজ মোঃ আতাউর রহমান ২০০৬ সালে হাইকোর্টে ১৯৮৬ সালের পদমর্যাদাক্রম এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র্রের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ নিয়ে তিনটি অঙ্গ রয়েছে। শাসন বিভাগ পদমর্যাদাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদসহ সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। এছাড়া আইন বিভাগে থাকবেন সংসদের স্পীকার ও সংসদ সদস্যগণ। অন্যদিকে বিচার বিভাগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক ভাগে থাকবেন উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ এবং অপরভাগে অধঃস্তন আদালতের বিচারপতিরা। কিন্তু ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্সে সংবিধানের বর্ণিত এ বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এতে সংবিধানের মূল চেতনা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাই ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স বাতিলের জন্য রিটে বলা হয়। ওই রিটে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০০৬ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করে রায় দেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরদিন আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। দীর্ঘদিন পর শুনানি শেষে আপীল বিভাগ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
×