ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এআইআইবির কাছ থেকে ২২শ’ কোটি ডলার গ্রহণের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

এআইআইবির কাছ থেকে ২২শ’ কোটি ডলার গ্রহণের সিদ্ধান্ত

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর অবকাঠামো উন্নয়নে এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) সহায়তা নেয়া হচ্ছে। বিসিআইএম’র অবকাঠামো নির্মাণে এআইআইবি’র কাছ থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিসিআইএম’র চারটি দেশই এআইআইবি’র অর্থসহায়তার বিষয়ে ইতোমধ্যেই একমত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। বিশাল অঙ্কের এই অর্থের সংস্থান না হলে বিসিআইএম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেও মনে করছে সদস্য দেশগুলো। বিসিআইএম সদস্য দেশগুলো মনে করছে, এই অর্থ সহায়তা দিতে পারে চীনের নবগঠিত ব্যাংক এআইআইবি। সে কারণে এআইআইবি’র সহায়তা নিতে সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে। এআইআইবি’র অর্থ সহায়তা পেলে বিসিআইএম গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিসিআইএম কার্যকর করতে সদস্য দেশগুলো ইতোমধ্যেই প্রাথমিক সমীক্ষা শেষ করেছে। বিসিআইএম’র সমীক্ষায় প্রতিটি দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ব্যবসা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সুবিধা, বিদ্যুত সহযোগিতা, বহুমাত্রিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি। সূত্র জানায়, বিসিআইএম করিডর চালুর লক্ষ্যে চারটি দেশের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন। অবকাঠামো উন্নয়নে নির্ধারিত ২ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের এই বিশাল অঙ্কের অর্থের সহায়তা চাওয়া হচ্ছে এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের কাছে। বিসিআইএম গঠনে এআইআইবি এই অর্থের সহায়তা দেবে বলেও আশা করছে চারটি দেশ। বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফ’র ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে সম্প্রতি এশিয়ায় পাল্টা ব্যাংক এআইআইবি প্রতিষ্ঠা করেছে ২১টি দেশ। এশিয়া অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দেবে এআইআইবি। ইতোমধ্যেই চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনকে এআইআইবি’র মহাসচিব নিযুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাংকের হেড অফিস বেজিংয়ে। ২০১৫ সালের প্রথম দিন থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিসিআইএম’র চারটি দেশ চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এআইআইবি’র সদস্য। সে কারণে বিসিআইএম গঠনে এই ব্যাংক থেকে সহজেই সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সদস্য দেশগুলো। বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সমীক্ষায় বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে কলকাতা থেকে কুনমিংয়ের মধ্যে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথের মধ্যে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া চারটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কপথের রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। কলকাতা থেকে কুনমিংয়ের সড়ক পথের দূরুত্ব ২ হাজার ৪৯০ কিলোমিটার। তবে রেল ও নৌপথের রুট এখনও চিহ্নিত করা হয়নি। সমীক্ষায় চার দেশের করিডর আওতাভুক্ত এলাকায় আঞ্চলিক অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই করিডরের সাথে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের উপযোগিতাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বিসিআইএম প্রক্রিয়ায় চার দেশের পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, ন্যায্য অংশীদারী ও পারস্পরিক স্বার্থের মূলনীতির ভিত্তিতে করিডর প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সমীক্ষায় চার দেশ বাস্তবসম্মত ও সহজে বাস্তবায়নযোগ্য যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গঠনের সুপারিশ করা হয়। সূত্র জানায়, বিসিআইএম’র চারটি দেশ ইতোমধ্যেই সড়ক যোগাযোগ রুটের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এই রুটটি হলো- চীনের কুনমিং থেকে মিয়ানমারের মান্দালায়-বাংলাদেশের চট্টগ্রাম হয়ে ভারতের কলকাতা। বিসিআইএম’র আওতায় সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। সে কারণে সমীক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে এই দুটি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চীনের সাংহাই ও চেংদুর পর কুনমিংকে অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে কুনমিংয়ে।
×