ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নোয়াখালীতে ২ ও উল্লাপাড়ায় ১ জন নিহত, যশোরে ২ জন অগ্নিদগ্ধ

অবরোধে ঢাকায় তীব্র যানজট, ছাড়ছে দূরপাল্লার বাস

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধে ঢাকায় তীব্র যানজট, ছাড়ছে দূরপাল্লার বাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সকাল ১০টায় শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তাজুড়ে যানজট। গাড়ি চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এদিকে বেলা ১২টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরের প্রায় দুই কিলোমিটার আগে থেকে ছিল তীব্র যানজট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ চিত্র ছিল সকাল থেকেই। ফার্মগেট ও বিজয় সরণিতেও ছিল যানজট। সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে বাস ছেড়ে গেছে। তবে দূরপাল্লার রুটে খুব একটা বাস চলাচল করেনি। এতে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকার নদীবন্দর সদরঘাটে লঞ্চ ভিড়তে দেখা গেছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ছিল যানজট। নগরজুড়ে কম করে হলেও সব ধরনের পরিবহন চলাচল করেছে। দোকানপাট, মার্কেট খোলা ছিল। অফিস আদালত চলেছে। অবরোধবিরোধী মিছিল সমাবেশ ছিল পাড়ামহল্লা থেকে শুরু করে রাজপথেও। বুধবার বিএনপির কর্মসূচীর সমর্থনে রাস্তায় তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। বড় নেতা তো দূরের কথা বিএনপির কোন কর্মীকেও রাস্তায় দেখা যায়নি- স্বাভাবিক দিনের চিত্রই ছিল রাজধানীর অবরোধ চিত্র। সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- এ কেমন অবরোধ? তবে কর্মসূচী সফল হোক আর না হোক গোপন জায়গায় অবস্থান নিয়ে এক ভিডিও বার্তায় অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রুহুল কবীর রিজভী। তবে এজতেমা উপলক্ষে যে কোন মুহূর্তে অবরোধ প্রত্যাহার করা হতে পারে। আজও রাজধানীতে বিজিবি টহল থাকবে। দ্বিতীয় দিনে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় ২০ জন। এ ছাড়া, অবরোধকারীদের হামলায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক অটোরিক্সা যাত্রী নিহত হয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে নিহতের সংখ্যা তিন। যশোরে বাসে আগুন, বগুড়ায় পুলিশকে লক্ষ করে হাতবোমা নিক্ষেপ করেছে শিবির। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিকেলে পুলিশের সঙ্গে শিবির ও ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ সিলেটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক এই কর্মসূচীর নামে যা হয়েছে তা হলো হাস্যরস। সাধারণ মানুষের কাছে প্রহসনে পরিণত হয়েছে বিএনপির এবারের অবরোধ কর্মসূচী। তাছাড়া ভোর থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বিল না দিয়ে মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসার বিষয়টি চাউর হওয়ার পর পরই বিভিন্ন মহলে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এরপর এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার পর সবার কাছে হাসি ঠাট্টার পাত্র হন তিনি। রিজভীকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ। হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করে কোন রাজনৈতিক নেতার রাতের অন্ধকারে পালিয়ে আসার নজির হয়ত এটাই প্রথম। স্বাভাবিক রাজধানীর অবরোধচিত্র ॥ দিনভর অন্য দশটা দিনের মতো কেটেছে রাজধানীর অবরোধ চিত্র। কোথাও তেমন কোন নাশকতার খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে বিএনপির কোন নেতাকর্মী ছিল না। ফলে রাজধানীতে যানবাহন প্রবেশে কোন বেগ পেতে হয়নি। নগরীর কয়েকটি স্থানে ছাত্রদল-বিএনপি ও শিবির কর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নয়া পল্টন অফিস ছিল নেতাকর্মীশূন্য ও তালাবদ্ধ। অফিসকে কেন্দ্র করে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড় থেকে বিশেষ নজরদারি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নয়া পল্টন অফিসের আশপাশে জলকামান, প্রিজন ভ্যান ও রায়টকার ছিল সকাল থেকেই। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশপাশে জলকামান ও প্রিজন ভ্যান রাখা হয়। কর্মসূচীর তৃতীয় দিনেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে ছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- তিনি অবরুদ্ধ। সকাল ১০টার দিকে নগরীর সূত্রাপুরে শিবির মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচ শিবির কর্মী আহত হন। অবরোধের সমর্থনে পূর্ব খিলগাঁও এলাকায় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ধাওয়া করলে দ্রুত সটকে পড়ে তারা। দুপুরে খামারবাড়ী এলাকায় ছাত্রলের মিছিল থেকে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনানো হয়। পুলিশ ধাওয়া দিলে অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। বিকেলে গুলশান ২ নম্বর কাঁচা বাজারের পাশে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেললাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৪০ জেলার ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রায় চার হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেললাইন উপড়ে ফেলা বা রেল চলাচলে নাশকতা প্রতিরোধ করতে এ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আনসার ও ভিডিপি অধিদফতরের মহাপরিচালককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে বুধবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সকালে যাত্রাবাড়ী গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে ঈশাখা সার্ভিস, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন সার্ভিস ও উৎসব সার্ভিস চলছে। গুলিস্তান থেকে মদনগঞ্জ, তারাবো রুটে বাস চলাচল করতে দেখা যায়। এছাড়াও ভুলতা-গাউছিয়া, আদমজি, গৌরিপুর-কুমিল্লা, সোনাইমুড়ি-লাকসাম, নরসিংদীতে মেঘলা সার্ভিস, সিলেট-সুনামগঞ্জে মেঘলা সার্ভিস চলাচল করতে দেখা গেছে। গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর পাঁচ বাসে আগুন ॥ বিএনপির অবরোধে বুধবার সারাদিন রাজধানী শান্ত থাকলেও সন্ধ্যার পর রাজধানীতে পাঁচটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। আজিমপুর, মতিঝিল, মিরপুর ও বায়তুল মোকাররম ও খিলক্ষেত এলাকায় সন্ধ্যার পর পরই এই পাঁচটি বাস পোড়ানো হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দেয়ার পর কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছিল। মঙ্গলবার আগুন দেয়া হয় ছয়টি গাড়িতে। বুধবার সারাদিনে ঢাকায় সড়কে কোন গোলযোগ ঘটেনি। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল আরও কমে যেতে থাকে। এর মধ্যেই এসব গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদুজ্জামান জানান, বাসে আগুন দেয়ার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। তবে কোন মানুষ হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, সন্ধ্যা ৭টার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ‘তানজিল’ পরিবহনের মিরপুরগামী একটি বাস, আজিমপুর মেটারনিটি এলাকায় মিরপুরগামী ‘সেফটি’ পরিবহনে আগুন দেয়া হয়। প্রায় একই সময় মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে প্রজাপতি পরিবহন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন ক্রীড়া ভবনের উত্তর পাশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি বাস এবং রাত সাড়ে ১০টার দিকে খিলক্ষেতের ঢাকা রিজেন্সির সামনে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। অবরোধকে কেন্দ্র করে রাতেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের পাশে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। তারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত রাজধানীর সড়কে বিজিবি টহলে থাকছে বলেও তিনি জানান। সোনারগাঁও হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ॥ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পশ্চিম পাশের গেটের ভেতরে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গেটের পাশে পার্কিং করে রাখা সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারওয়ার মিলনের গাড়ির ওপর ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ বিষয়ে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশের মোবাইল টিম গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। নোয়াখালীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ- নিহত ২ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীতে পুলিশ ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় মিজানুর রহমান রুবেল (৩০) ও মহিনউদ্দিন (২৮) নামের দুইজন নিহত হয়েছে। এছাড়া পুলিশের এস.আই সাইফুল সিকদার, দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত মিজানুর রহমান রুবেল সেনবাগ উপজেলার শীবপুর গ্রামের তোফায়েল আহমদের ছেলে। সে চৌমুহনীর মনোহারী ব্যবসায়ী ও মহসিন বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের খোরশেদ বাবুর্চির ছেলে। তবে নিহত ও আহতদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অপর দিকে হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসারতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে, একই গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মাকসুদুর রহমান, গণিপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে সাহাব উদ্দিন (২৬), সোনালী ব্যাংক চৌমুহনী শাখার আনসার সদস্য ঝিনাইদহ জেলার আমজাদ মোল্লার ছেলে কামাল হোসেন। অপরাপর আহতের নাম পরিচয় পাওয়া না গেলেও তারা বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে, এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) চৌমুহনীর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অবস্থা রয়েছে থমথমে। পুলিশ বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল সাড়ে ৪টায় ২০ দলীয় জোটের পূর্ব নির্ধারিত মিছিল শেষে অতর্কিতে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে তারা। এরপরই শুরু হয় তা-ব। প্রায় একঘণ্টা পর পুলিশ এ্যাকশনে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান দৌলা, সহকারী পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর ও বেগমগঞ্জ থানার ওসি আইনুল হকের নেতৃত্বে বর্তমানে চৌমুহনীতে অভিযানে রয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিজিবি এসে পৌছে। বেগমগঞ্জ থানার ওসি আইনুল হক জানান- পুলিশের গুলির হিসাব এখনো করা হয়নি। তবে এসআই সাইফুল শিকদারসহ ৩জন পুলিশ আহত হয়েছে। নিহতের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। যশোরে ৩টি বাসে আগুন-চালক দগ্ধ ॥ যশোরে অবরোধকারীরা তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে। এর মধ্যে পার্কিং করা বাসে ঘুমন্ত ট্রাক চালক মুরাদ হোসেন (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। বুধবার ভোরে উপশহর এলাকায় দু‘টি বাসে অবরোধ সমর্থকরা আগুন দিলে এ ঘটনা ঘটে। এর একটি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ট্রাক চালক মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার কানুটিয়া গ্রামের তোরাব মোল্লার ছেলে মুরাদ হোসেন মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুরাদের শরীরের ৪০-৪৫ ভাগই পুড়ে গেছে। যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, উপশহরে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ মুরাদকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। বগুড়ায় ট্রাকে আগুন, শিবির ক্যাডারদের ককটেল বিস্ফোরণ ॥ বগুড়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অবরোধ চলাকালে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি ও জামায়াত শিবির কর্মীরা ২টি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করেছে। এছাড়া বুধবার সকালে বাইপাস সড়কের ছিলিমপুর এলাকায় শিবির ক্যাডাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ এ সময় শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। অবরোধে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাত থেকে পুলিশ প্রহরায় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় ৩ শতাধিক যানবাহন বগুড়ার সীমানা পার করে দেয়া হয়েছে। রাতে বগুড়া-রংপুর সড়কের গোকুল এলাকায় জামায়াত বিএনপি একটি কাঠ বোঝাই ট্রাক ও চারমাথা এলাকায় সিমেন্টবাহী একটি ট্রাকে আগুন দেয়। ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়। সকালে বাইপাস সড়কের ছিলিমপুর এলাকায় শিবির কর্মীরা বাঁশ ও কাঠ ফেলে রাস্তায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ সেখানে গেলে শিবির ক্যাডাররা ৩টি ককটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়লে তারা পালিয়ে যায়। এদিকে অবরোধ চলাকালে শহরে অটোরিক্সাসহ হালকা যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সিরাজগঞ্জে নিহত এক ॥ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ইসমাইল হোসেন (৬০) নামের এক সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রী নিহত হয়েছে। নিহত ইসমাইল হোসেনের বাড়ি শাহজাদপুর উপজেলার জংগীদহ গ্রামে। অটোরিক্সা চালক বলেছেন, ইসমাইল অবরোধকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে নিহত হয়েছেন। নিহত ইসমাইলের সহযাত্রী ও পুলিশ বলেছে অটোরিক্সা ও রিক্সা ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিক্সা উল্টে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ইসমাইল নিহত হয়েছ্।ে সিএনজি চালক শিপন আলী জানান, বুধবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ রোড হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সাযোগে ইসমাইল শাহজাদপুর যাচ্ছিল। সিএনজিটি উল্লাপাড়া উপজেলার বাইপাস এলাকায় পৌঁছলে অবরোধকারীরা আকস্মিকভাবে ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় ইসমাইল গুরুতর আহত হলে তাকে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে নেবার পথে সে মারা যায়। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এস এম এমরান হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ইসমাইল হোসেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে অবরোধকারীদের হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জয়পুরহাটে রেললাইন উপড়ে ফেলার চেষ্টা ॥ বিএনপির ডাকা অবরোধের রাতে জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল এলাকায় রেললাইনে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে দুই কিশোরকে ধারাল অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রেফতারকুত দুজন উপজেলার জলাটুল গ্রামের বাসিন্দা। জয়পুরহাট সদর থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, এক দল কিশোর রেললাইন উপড়ে ফেলার চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়ে পুরানাপৈল এলাকায় যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই কিশোরকে ধারাল অস্ত্রসহ (হাঁসুয়া) গ্রেফতার করা হয়। নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ॥ নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী দু’দল আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় ৫ আইনজীবী আহত হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বুধবার দুপুর একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কটূক্তি এবং আদালত চত্বরে বহিরাগতদের নিয়ে মিছিল করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অন্যদিকে একই সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনার নিন্দা ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ এবং অবরোধ সমর্থনে মিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ সময় দু’পক্ষের আইনজীবীরা একে অন্যকে উদ্দেশে করে বক্তব্য দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। দু’পক্ষের হাতাহাতিতে ৫ আইনজীবী আহত হয়েছে। দু’পক্ষের আইনজীবীদের হাতাহাতিকালে মারধরের শিকার হয় ফতুল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেহান শরীফ। জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার অভিযোগ করেন, আমরা আইনজীবী, আমাদের আদালত চত্বরে মিছিল ও মিটিং করার অধিকার রয়েছে। আদালত চত্বরে আমাদের আইনজীবীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু বলেন, আমরা মানববন্ধন সভা সমাবেশ করি, তখন বহিরাগত যুবদল সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত জামায়াত শিবিরকে নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া হয়। যুবদলের ক্যাডারাই আইনজীবীদের মিছিলে প্রবেশ করে হামলা চালায়।
×