ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু কাল, হরতাল অবরোধে মুসল্লি কম

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু কাল, হরতাল অবরোধে মুসল্লি কম

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী/গাজীপুর, ৭ জানুয়ারি ॥ টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পর্বের এ বিশ্ব এজতেমা শুরু হবে। শত বাধা উপেক্ষা করে বহু কষ্টে তবলীগ জামাতের অনুসারী মুসল্লিরা টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। চার দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা শুরু হবে ১৬ জানুয়ারি। এদিকে, হরতাল-অবরোধের কারণে এ বছর গত বছরের এই দিনের তুলনায় বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে আগত মুসল্লির সংখ্যা অনেক কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সূত্রগুলো। কারও কারও মতে, মুসল্লির সংখ্যা গতবারের তুলনায় এবার অর্ধেকের সামান্য কিছু বেশি হবে। তবে বৃহস্পতিবার এজতেমা শুরু হলে বোঝা যাবে হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও এবারের এজতেমায় আগত প্রকৃত মুসল্লির সংখ্যা আসলে কত? মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জামাত ৫০তম বিশ্ব এজতেমার প্রথমপর্ব তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও তবলীগ জামাতের কর্মীরা গত ১ নবেম্বর থেকে বিশ্ব এজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য এক বর্গ কি.মি. এলাকাজুড়ে বাঁশ-চটের বিশাল শামিয়ানা নির্মাণ, অজু ও গোসলের স্থান, টয়লেট নির্মাণসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বিএনপির ডাকা টানা সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কারণে গত ২-৩ দিন ধরেই মুসল্লিরা রিক্সা, টেম্পো ও এমনকি দীর্ঘপথ হেঁটেই এজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। জামালপুরের মেলান্দহের তবলীগ জামাতের মুসল্লি আলহাজ আব্দুল কাদির জানান, অবরোধের কারণে সরাসরি যানবাহন না পেয়ে সিএনজি, ট্রাক, টেম্পো ও হেঁটেই এজতেমা ময়দানে আসতে হয়েছে। প্রতিবছর এজতেমা মাঠে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তবলীগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য একত্রিত হয়ে আল্লাহর পথে দাওয়াতী কাজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেরিয়ে পড়েন। এজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা তবলীগের মুরুব্বিরা জানান, সব কাজ করা হচ্ছে মোশাআরার (পরামর্শ) মাধ্যমে। তাঁরা জানান, বিদেশী মুসল্লির সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পেতে পারে। গত বছর প্রায় ১৭ হাজার বিদেশী মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। এবার তা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। মুসল্লিদের যাতায়াতে তুরাগ নদী পারাপারের জন্য নদীর সাতটি স্থানে ভাসমান পণ্টুন ও সাতটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্রিগেড ওই ভাসমান সেতু নির্মাণ করেন। এজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের রন্ধনশালায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করেছে তিতাস গ্যাস। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ১১টি নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত ও সরবরাহের পদক্ষেপ নিয়েছে। অজু-গোসলের হাউস ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও সরকারীভাবে নির্মিত বহুতল পাকা দালানে চার হাজারের বেশি টয়লেট ইউনিট রয়েছে। নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু গোসলখানা এবং টয়লেট সংস্কার করা হয়েছে। তবলীগ জামাতের কর্মীরা এজতেমা ময়দানের পাশেই অস্থায়ী আরও সহস্রাধিক অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছেন। মশক নিধনে ২০টি ফগার মেশিন দিয়ে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ আ ক ম মোজাম্মেল হক, আলহাজ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, জেলা প্রশাসক মোঃ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ এ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, পুলিশ সুপার মোঃ হারুন-অর-রশিদ পিপিএম সর্বক্ষণিক এজতেমার সার্বিক কাজের তদারকি করছেন। এজতেমা এলাকায় সর্বক্ষণিক বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজতেমা এলাকায় চারটি জেনারেটর এবং পাঁচটি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফর্মার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি অস্থায়ী বিদ্যুতক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। এজতেমা ময়দানে বিদ্যুত ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সর্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। ইবোলা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ॥ জঙ্গী ও ইবোলা ভাইরাস ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল উদ্দিন। বিমানবন্দরগুলোতে অভ্যর্থনা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে অন এ্যারাইভাল ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যত স্থলবন্দর আছে সেখানেও অন এ্যারাইভাল ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে তারা মুসল্লিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিসা দেয়ার কার্যক্রম তদারকি করবেন। যাতে কোন জঙ্গী বা ইবোলা ভাইরাসবাহী মুসল্লি এজতেমা ময়দানে ঢুকতে না পারেন সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ॥ গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ পিপিএম বলেন, এজতেমার নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ, টহল পুলিশ, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্সও থাকবে। সর্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব-কন্ট্রোল রুম থাকবে। দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য তিনটি হেলিপ্যাড রয়েছে। নিরাপত্তায় সাড়ে নয় হাজারের মতো পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ফ্রি ওয়াইফাই ॥ সংবাদকর্মীদের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টার ও সেখানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের (ফ্রি ওয়াইফাই জোন) ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম ও এজতেমা ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতি কার্যক্রম সম্পর্কে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে নির্মিত গাজীপুর জেলা পুলিশ সেবা কেন্দ্র ও মিডিয়া ব্রিফিং প্যারেড মাঠে সাংবাদিকদের বিফিং করার কথা রয়েছে। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, এজতেমাস্থলে একটি কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হবে। যেখানে সর্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা সতর্ক অবস্থায় থাকবে। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান জানান, মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকল প্রস্তুতি রয়েছে। ৬০-৭০ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে টঙ্গীর মুন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারাখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ছয়টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ১৪টি এ্যাম্বুলেন্স সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপত্র বিতরণের জন্য বেসরকারী ও ব্যক্তি পর্যায়ের শতাধিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র এজতেমা ময়দানের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৩০০ বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে।
×