ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘গণবিরোধী আন্দোলনে ওরা এক সময় পরিত্যক্ত হবেন’

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

‘গণবিরোধী আন্দোলনে ওরা এক সময় পরিত্যক্ত হবেন’

সমুদ্র হক ॥ হাজারো মানুষের একটি প্রশ্ন : দেশে কী এমন ঘটল যে টানা অবরোধের কর্মসূচী এলো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের গত এক বছর ও আগের পাঁচ বছরসহ মোট ছয় বছরের খতিয়ানে দেশে এমন কিছু ঘটেনি যা সাধারণ মানুষের কল্যাণের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে ব্যত্যয় যে একেবারে নেই তাও নয়। ছোট বড় পরিবারই ভুল-ত্রুটি নিয়ে এগিয়ে যায়, আর দেশ পরিচালনা করা সরকারের সফলতা ব্যর্থতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে সফলতার পাল্লা অনেক বেশি হয়ে ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করে তা সফল করার পরিকল্পনা নিয়ে যখন সরকার এগিয়ে যায় তখন হুট করে আন্দোলনের ডাক দিয়ে কী ধরনের গণতন্ত্রের দাবি করে বিএনপি-জামায়াত! এই কথাগুলোই আলোচিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে বিশ্ব এজতেমার বিষয়টি। এই সময়টায় দেশের চারদিক হতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ বিশ্ব এজতেমায় যোগদান করার জন্য সমবেত হতে থাকেন। তুরাগ নদীর তীরে পৌঁছতে তাঁদের কত যে বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে তা ভুক্তভোগীরা কঠিনভাবে বুঝতে পারছেন। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বলতে শোনা যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতসহ যে রাজনৈতিকদলগুলো টানা অবরোধের ডাক দেয় তারা কি ইসলামের আদর্শ আদৌ লালন করে! তা না হলে দ্বিতীয় হজ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিশ্ব এজতেমার এই সময়টায় কেউ এভাবে হটকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজপথ, রেলপথ, নৌপথ অবরোধ দিতে পারে! এ কেমন রাজনীতি! এ কেমন গণতন্ত্রের কথা! জনগণকে নিয়ে যে গণতন্ত্র সেই জনগণকেই চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়ার নাম কী রাজনীতি! এ ধরনের রাজনীতিকে অপরাজনীতি বললে কী খুব ভুল বলা হবে! এক সূত্র জানাচ্ছে, বিশ্ব এজতেমাকে সামনে রেখে হয়ত অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচী নাও দিতে পারে বিএনপি-জামায়াত। এই বিষয়ে ক’জনের মন্তব্য, যারা কোমলমতি শিশু-কিশোরদের পাবলিক পরীক্ষার কথা বিবেচনায় আনে না, বিশ্ব এজতেমার দুই-তিন দিন আগে যারা রাজপথ অবরোধ করে তাদের কাছে কী আশা করা যায়! এই জনগণকে নিয়ে এদের কত মায়াকান্না। এ দেশের মানুষ এখন অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। একবিংশ শতকের এক দশক চলে গিয়ে দ্বিতীয় দশকেরও যখন অর্ধেক চলে যাচ্ছে, মানুষ যখন বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পেয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে তখন বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অনুসারী রাজনৈতিক দলগুলো এখনও বিংশ শতকের মধ্যভাগেই পড়ে আছে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কবলে পড়ে দেশে যে চরম ক্ষতি হয়েছে তার মাসুল আজও দিতে হচ্ছে এই নিরীহ মানুষকে। অনেকেই ধরে নিয়েছিল নির্বাচন হবে না, অন্য কিছু হবে। তা যখন হয়নি তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্তত এইটুকু আস্থা জমেছে ধ্বংসের রাজনীতি আর যাই হোক কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দিলেই তা হয় না। এই ধ্বংস ঠিকঠাক করে দেশের পূর্বের পাঁচ বছরের অর্জনের ধারাবাহিকতায় গেল এক বছরসহ মোট ছয় বছরের উন্নয়নের চিত্র চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) এক সূত্রের মতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ত্রিশ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই রিজার্ভ বাড়িয়ে দিয়েছে আমরা যাদের চাষাভুষা বলি সেই গাঁও-গেরামের কৃষকের সন্তানেরা। যাঁরা বিদেশ বিভূঁইতে পরবাসী হয়ে কঠিন শ্রম দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। গ্রামের নারী যাঁরা রাজধানীমুখী হয়ে দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। রানা প্লাজা ধসে পড়ার পরও যাঁদের মন ধসে পড়েনি এই নারী শ্রমিক গতর খেটে সেলাই মেশিন চালিয়ে বিদেশে পোশাক পাঠিয়ে দেশের সুনামের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিচ্ছেন। গ্রামের এই চাষাভুষা কৃষক যন্ত্র কৃষি শৈলী ব্যবহার করে ভর বছর নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এনে সবজি রফতানির পর চাল রফতানির পথ তৈরি করেছে। দেশের প্রায় বেশিরভাগ গ্রামের সড়ক পাকা হয়ে বিদ্যুত পৌঁছে প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক (ই) প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নয়নের অনেক ধারা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের এক সংস্থার রিপোর্ট, বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) সাতটির মধ্যে প্রথম চারটি শর্ত পূরণ করেছে। বড় অর্জন দারিদ্র্য বিমোচনে আশাতীত অগ্রগতি। বছর দশেক আগেও দেশের উত্তরাঞ্চলে আশ্বিন-কার্তিক মাসের তীব্র অভাবে (মঙ্গা নামে অধিক পরিচিত) মানুষের চরম দুর্ভোগের চিত্র মিডিয়ায় ছিল হট আইটেম। আজ মিডিয়ার লোকজন হাইডেফিনেশনের দামী ক্যামেরার অধিক দূরত্বের টেলিফটো লেন্স দিয়ে মঙ্গা খুঁজে পায় না। বিশ্বের অনেক মিডিয়া এখন বলাবলি করে বাংলাদেশে স্থিতিশীল সরকার আছে বলেই এত অর্জন হয়ে উন্নয়নের ধারায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থিতিশীল সরকারই এখন প্রয়োজন। গণতন্ত্রের ধারায় উন্নয়ন এগিয়ে দেয় শক্তিশালী বিরোধী দল। যারা জনগণের কল্যাণের কর্মসূচী দিয়ে গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। ধ্বংসাত্মক ও জনবিরোধী কর্মসূচীর কোন রাজনৈতিক দলকে সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে না। তাদের বর্জন করে। যে রাজনীতিকদের এই দায়িত্বজ্ঞান নেই তাঁরা এক সময় সাধারণ মানুষের কাছে পরিত্যক্ত হবেন।
×