ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত-শিবিরের ফেসবুকে ধিক্কার দিয়ে স্ট্যাটাস

নেতারা এখন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত, উত্তরের ৮ জেলায় হরতাল ফ্লপ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ জানুয়ারি ২০১৫

নেতারা এখন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত, উত্তরের ৮ জেলায় হরতাল ফ্লপ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীর পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতালে বুধবার রাজপথে দেখা মেলেনি বিএনপি নেতাদের। তবে তারা সক্রিয় ছিলেন ফেসবুক নিয়ে। বিএনপির এমন কর্মকা-ে এ অঞ্চলের জামায়াত শিবিরের ফেসবুকে বিএনপি নেতাদের ধিক্কার দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া হয়। মাঠে নেতাকর্মী না থাকায় বুধবার হরতাল বা অবরোধ চলাকালে শহরের অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। ভারি যানবাহন ছাড়া হালকা যানবাহন এবং বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করেছে বিনা বাধায়। ফলে উত্তরের আট জেলার চিত্র ছিল ভিন্নতায়। বিএনপির অনেক সাধারণ কর্মীর অভিযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হলেও নেতারা রাজ পথে আসেন না। নেতাদের দেখতে না পেয়ে তাই মাঠ কর্মীরাও নিষ্ক্রিয়। তবে ফেসবুকে নেতাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। যা প্রকৃত আন্দোলনে কোন কাজে আসছে না। অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিএনপি নেতাদের ‘ফেসবুক’ এ্যাকাউন্ট সংখ্যাদিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে নেতাদের ফেসবুক-নির্ভর রাজনীতির কারণে ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। অনেক কর্মীই এ জন্য নেতাদের সমালোচনা করছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাজপথে আন্দোলন না করে অনেক নেতাই ফেসবুকে পড়ে থাকেন দিনের বেশিরভাগ সময়। কোন একটি ছবি তুলেই তা তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুকে আপলোড করে দিচ্ছেন। নানা রঙ লাগিয়ে তা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ জন্য নেতাদের বিব্রতও হতে হচ্ছে তৃণমূল কর্মীদের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার এক যুবদল নেতা বলেন ঢাকার নেতারাই মাঠে নেই। আন্দোলনের ডাক দিয়ে তারা আত্মগোপনে কেউবা গ্রেফতার হয়েছেন। আর আমাদের ডিমলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি তার মোবাইল বন্ধ করে ঘরে তালা দিয়ে কোথায় যেন লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন নতুবা ফেসবুকে চ্যাটিং করছেন। এই যুবদল নেতা নিজেও ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত সেটিও স্বীকার করে বললেন আমাদের নেত্রী লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে বিএনপি অফিসে বসে আছেন। তিনিও রাস্তায় নামছেন না। তাহলে আমরা মাঠের নেতারা কিভাবে রাজপথে নামব। নামলেই তো গ্রেফতার হতে হবে। তার চেয়ে ঘরে বসে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকাই শ্রেয়। আরেক বিএনপি নেতা বললেন আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। কারণ আমাদের কোন পরিকল্পনা ছাড়াই আন্দোলনের ডাক দেয়া হচ্ছে হুটহাট করে। ফলে জনগণ এসব আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে না। অপর এক বিএনপি নেতা বললেন, গত বছরের ৪ জানুয়ারি ও তার আগেও লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মাধ্যমে আন্দোলনে দেশজুড়ে এক ধরনের সুনামী বইয়ে দেয়া হয়েছিল। তারপরও আমরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন রুখতে পারিনি। আর এক বছর পর সেই আন্দোলন পুনরায় জাগিয়ে তুলে চাঙ্গা করা চাট্টিখানী কথা নয়। এছাড়া জামায়াত শিবিরের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে আন্দোলন বার বার ফ্লপ মারছে। এদিকে রংপুর শিবিরের ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে অবরোধ ও হরতাল ডেকে বিএনপি নেতারা কেন ঘরে বসে থাকে? অথবা তারা কেন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে ইচ্ছে করে অবরুদ্ধ হয়ে থাকে? কারণ তারা তো জানেই যে, কার্যালয়ে ঢুকলে তাদের আর বেরোতে দেবে না পুলিশ। অথচ তারা সেখানে গিয়ে গেটের সামনে আরাম করে চেয়ারে বসে বসে পুলিশের চেহারা দেখে। কিন্তু তারা তো হরতালের আগের দিনই বৈঠক করে ঠিক করতে পারে কে কোথায় হরতালের দায়িত্বে থাকবে এবং হরতালের দিন সকাল বেলায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে না গিয়ে সরাসরি নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় গিয়ে হরতালে নেতৃত্ব দিতে পারে... বহু জিজ্ঞাসিত এসব বিষয়ের জবাবে কিছুদিন আগে একটি টিভি টকশোতে আওয়ামীপন্থী পত্রিকা ‘আমাদের সময়’ এর স¤পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেছিলেন, বিএনপি আসলে আন্দোলন-সংগ্রাম করার মতো দল নয়। এই দলের নেতারা বাড়িতে আরাম-আয়েশ করতে বেশি পছন্দ করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো দাবি আদায়ের জন্য কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের লাঠির বাড়ি খাওয়ার ইচ্ছা বা সাহস কোনটাই তাদের নেই। তারা চার দেয়ালের ভেতর বসে রাজনীতি করেই বেশি আরাম পান। ‘অবশেষে বিএনপি নেতারা নিজের মুখেই তাদের এই অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন’। এদিকে খালেদা জিয়ার ডাকা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচীর পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতালে বুধবার ফ্লপ করেছে বলে বিএনপি নেতারাও স্বীকার করেছেন। তারা বলছেন মাঠে আন্দোলন করার মতো সাহসিকতা সকলে যেন হারিয়ে ফেলেছেন। এদিকে দেখা যায় নীলফামারীতে বুধবার বেলা ১১টায় হরতাল সমর্থনে শহরের বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে একটি মিছিল প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করার চেষ্টাকালে পুলিশ বাধায় আটকে যায়। ফলে তারা দলীয় কার্যালয়ে ফিরে সমাবেশ করে। এ সময় বক্তৃতা দেন পৌর বিএনপির সভাপতি জহুরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রঞ্জু, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোর্শেদ আজম প্রমুখ। এদিকে হরতাল চলাকালে শহরের অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। ভারি যানবাহন ছাড়া হালকা যানবাহন চলাচল করেছে বিনা বাধায়। উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে রংপুর বিভাগের আট জেলায় বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠন।
×