ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখন জামায়াতের নাশকতা করছে বিএনপি ॥ প্রধানমন্ত্রী

দেশ ও মানুষের জন্য যে কোন ঝুঁকি নিতে আমি প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৯ জানুয়ারি ২০১৫

দেশ ও মানুষের জন্য যে কোন ঝুঁকি নিতে আমি প্রস্তুত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপির আন্দোলনকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসের ঘুমন্ত ড্রাইভারকে পোড়ানো, যাত্রীদের গায়ে আগুন দেয়া, মানুষ খুন করা- এগুলো কোনভাবেই গণআন্দোলন হতে পারে না। ‘খুন’ ও জানমালের ক্ষতি করে বিএনপি নেত্রী জামায়াতের কাজগুলো করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ায় গণতন্ত্র ‘সুসংগঠিত’ হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে ‘মর্যাদার আসনে’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যে কোন ঝুঁকি নিতে আমি প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইস্টিটিউশনে বাংলাদেশে অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে লক্ষ্য তাতে আমরা পৌঁছাতে পারব। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারব। তবে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কিছু কিছু ঝামেলা তো আছেই। জ্বালাও- পোড়াও জনগণের সম্পৃক্ততা না পেলে সন্ত্রাসী কর্মকা- বা জঙ্গীবাদী কর্মকা-ে লিপ্ত হয় অনেকে। সেই কাজগুলেইা এখন চলছে। এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশেও জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন একেবারে জঙ্গীদের যেন পুরো তা-ব ছিল। বাংলা ভাই টাই কতকিছু সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সরকারে আসার পরে সেগুলো কঠোরহস্তে দমন করি। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় ‘ব্যথিত হয়ে’ বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ নেয়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে তারা নির্বাচন বানচাল করার নামে মানুষ হত্যা, গাড়ি পোড়ানোসহ ‘তা-ব’ চালিয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, উনি একেবারে অবরোধের ডাক দিয়েছেন। ওনার অবরোধ কী? মানুষ খুন করা, বাস পোড়ানো, মানুষের ক্ষতি করা। অর্থাৎ জামায়াতের যে কাজগুলো সেগুলো করে দিচ্ছে তারা। আপনারা চিন্তা করে দেখেন, যদি নির্বাচন বানচাল হতো, তাহলে কে আসত? সেই ২০০৭ সালের মতো আবার ইমার্জেন্সি। আবার অগণতান্ত্রিক কোন শাসন ব্যবস্থা। সেখানে দেশের মানুষ কী পেত? ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ায় গণতন্ত্র ‘সুসংগঠিত’ হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে ‘মর্যাদার আসনে’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের লোক রাজনৈতিক ও আদর্শগত লড়াইয়ের পাশাপাশি আত্মত্যাগের মানসিকতার কারণে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে। তবে ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা একটি মহল তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হয়। যে মুহূর্তে দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই তাকে হত্যা করা হলো। ২০০১ সালে দেশে যখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বর্ণযুগ ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের উন্নয়ন মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হলো। ঠিক একই অবস্থায় এখন আবার দেশকে পিছে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি ‘বিদেশীদের’ গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল। এক সময় শোনা গেল গ্যাসের ওপর বাংলাদেশ নাকি ভাসছে। আপনারা জানেন আমার ওপর প্রচ- প্রেসার ছিল যে, বাংলাদেশে এত গ্যাস, গ্যাস বিক্রি করতে হবে। গ্যাসের মালিক বাংলাদেশ। গ্যাস উত্তোলন করবে এক দেশের কোম্পানি, কিনবে আরেক দেশ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমার এখনও মনে আছেÑতত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান লতিফুর রহমানের বাসায় আমেরিকা থেকে তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এসেছিলেন। সেখানে আমি আর জিল্লুর রহমান সাহেব এবং বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া আর মান্নান ভূঁইয়া। ওই বাসায় আমাদের লাঞ্চের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। সেখানেই এই বিষয়টার একটা ফায়সালা হওয়ার কথা ছিল। আমি সোজা বলে দিয়েছিÑআমার গ্যাস কত আছে আমি জানি না। আর গ্যাস যেটুকু থাকবে, প্রথম অগ্রাধিকার আমার দেশের মানুষের। তাদের চাহিদা মেটাব। আগামী প্রজন্মের জন্য অন্তত ৫০ বছরের মজুদ থাকবে। এর অতিরিক্ত যদি থাকে সেটা আমি বলতে পারি, তার বেশি না। শেখ হাসিনা বলেন, ওইটা ছিল একেবারে ফাইনাল স্টেজ। আমি সেখানে ওই কথা বলেছি। আর বিএনপি থেকে সোজা মুচলেকা দেয়া হয়েছিল যে, তারা ক্ষমতায় আসলে সমস্ত গ্যাস বিক্রি করে দেবে। আমি ওখান থেকে বেরিয়ে চলে এসেছিলাম। কারণ ওইটা আমার পক্ষে সম্ভব না এবং সেদিনই আমরা বুঝেছিলাম ইলেকশনে কী হতে পারে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, একটু হিসাব করে যদি দেখেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যাঁরা সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন তাঁদের মধ্যে শুধু বঙ্গবন্ধু আর আমি, আমরা দু’জনেই কিন্তু এই মাটির সন্তান, এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছি। কাজেই মাটির টান, মাটির প্রতি ভালবাসা, মানুষের প্রতি ভালবাসাÑএটা আমাদের থেকে বেশি কারো থাকতে পারে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। এ সময় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের ‘নেপথ্য কাহিনী’ নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এক পদ্মা সেতু নিয়ে কত নাটক। উদ্দেশ্য অন্যরকম ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বিদ্যুত, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও তার সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারাকাতের সভাপতিত্বে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (ইআইবি) মিলনায়তনে সমিতির সহসভাপতি ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সমিতির ‘আজীবন সম্মানীয় সদস্য’ ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য চারজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদকে অর্থনীতি সমিতি স্বর্ণপদক দেয়া হয়। পদকপ্রাপ্তরা হলেন-বিশিষ্ট ভারতীয় অর্থনীতিবিদ এবং অশোক মিত্র, অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম, ঢাকা ঢাবির সাবেক অধ্যাপক এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনা সেলের সদস্য অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন (মরণোত্তর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর লুৎফর রহমান সরকার (মরণোত্তর)।
×