ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধেও উপচে পড়া ভিড় ছিল বাণিজ্যমেলায়

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধেও উপচে পড়া ভিড় ছিল বাণিজ্যমেলায়

রহিম শেখ ॥ অবরোধের মধ্যেই দর্শনার্থী ও ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়ে ছুটির দিনে বেশ জমজমাট ছিল বাণিজ্য মেলা। শুক্রবার মেলায় সকালের দিকে দর্শনার্থী কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও ক্রেতা-দর্শনার্থীকে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ঝক্কিঝামেলায় ভয় ও আতঙ্ক ছিল ক্রেতার চোখে-মুখে। এদিকে মেলায় প্রচুর ক্রেতা-দর্শকের আগমনে সন্তেুাষ প্রকাশ করলেন বিক্রেতারা। মেলার নবম দিনে এসে ভাল বেচাকেনায় অনেকাংশেই অবরোধের ধকল কাটিয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মেলার সামনের দিনগুলো নিয়ে বড় ধরনের দুশ্চিন্তা ভর করছে আয়োজকদের মনে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচী না দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থী ও বিক্রেতা। শুক্রবার সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে মেলার প্রধান গেট খুলতেই ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় আসতে শুরু করেন। অবরোধের মধ্যেই কেউ সপরিবারে, কেউ বন্ধু-বান্ধবী, স্কুল-কলেজের সহপাঠীকে নিয়ে দলবেঁধে মেলায় এসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় দর্শনার্থীর স্রোতে মেলার মাঠে ফাঁকা জায়গা দেখা যায়নি। শুক্রবার ছুটির দিন বলেই সব স্টল-প্যাভিলিয়নে ক্রেতার ভিড় ছিল বেশি। এ কারণে বিকেলের দিকে মেলার আশপাশের সড়কে যানবাহনের জটলা লেগে যায়। এদিন টিকেট কাউন্টার ও মেলার মূল প্রবেশপথেও দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। এ প্রসঙ্গে মেলার ইজারাদার মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মীর শহীদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বাণিজ্যমেলা শুরুর পরেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় দর্শক উপস্থিতি কমে যায়। তবে শুক্রবার ছুটির দিনে অবরোধের মধ্যেই দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন। গত ছুটির দিনেও মেলায় আশানুরূপ ক্রেতা ছিল। এরপর অবরোধের ধাক্কায় মেলায় ক্রেতার সংখ্যা কমে যায়। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মেলার পরবর্তী দিনগুলোয় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সমাগম নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। এদিকে অবরোধের মধ্যে মেলা আসা ক্রেতার নিরাপত্তা দিতে আনসার, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও র্যাব ছিল সতর্ক অবস্থানে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে। মেলা প্রাঙ্গণে ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও ভেহিকল সার্চ মিরর দিয়ে সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ৮০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে। শুক্রবার মেলায় প্লাস্টিক, এ্যালুমিনিয়াম গৃহস্থালির উপকরণ, ইলেকট্রনিক্স, ইমিটেশনের গয়না, প্রসাধনসামগ্রী, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। শিশুদের খেলনার দোকানেও ক্রেতার উপচেপড়া ভিড় ছিল। মেলায় দর্শনার্থীর সরব পদচারণায় মুখরিত ছিল বিনোদন কেন্দ্র, ইকোপার্ক ও বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। রাজধানীর মিরপুর থেকে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় এসেছেন বেসরকারী ব্যাংক কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এতদিন মেলায় আসা হয়নি। তবে বেড়ানো এবং টুকটাক কেনাকাটার জন্য ছুটির দিনে অবরোধের মধ্যেই মেলায় এসেছি। গৃহস্থালি জিনিসপত্র ও বাচ্চাদের কিছু পোশাক কিনেছি। তবে গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি, এরমধ্যে খাবারের দোকানে গলাকাটা দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রাজধানীর আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা নোভা ইসলামের সঙ্গে কথা হয় কিয়াম এ্যালুমিনিয়ামের প্যাভিলিয়নে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় অবরোধের মধ্যে সকালেই দুই বান্ধবীসহ মেলায় এসেছি। কেনাকাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রান্নাঘরের টুকিটাকি জিনিসপত্র ও প্রসাধনসামগ্রী কেনা হয়েছে। বেঙ্গল প্লাস্টিক প্যাভিলিয়নে কথা হয় বনশ্রী থেকে আসা মিতু জাহানের সঙ্গে। তিনি জানান, ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিক ও এ্যালুমিনিয়া প্যাভিলিয়ন থেকে গৃহস্থালির উপকরণ কিনেছি। এবারের বাণিজ্য মেলায় বিদেশী পণ্যের চেয়ে দেশী পণ্যের আধিক্য বেশি। দেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওয়ালটন, রানার, মাইওয়ান, যমুনা, আরএফএলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান মেলায় তাদের নিজস্ব পণ্য প্রদর্শন করছে। শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীর বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে দেশীয় পণ্যের প্যাভিলিয়ন ও স্টলে। টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, মোটরসাইকেল, মোবাইল, হোম ও কিচেন এ্যাপ্লায়েন্স পণ্য দেখতে মেলায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে ক্রেতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। পারটেক্স প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ অশোক কুমার জনকণ্ঠকে জানান, অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিক্রি ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ছুটির দিনে ক্রেতা ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। এখন সামনের দিনগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টসের নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল আলম বলেন, বেশি ক্রেতা মানেই বেশি বিক্রি। রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে মাসব্যাপী বেচাকেনার ভবিষ্যত। বেঙ্গল প্লাস্টিক প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তা সানজিদ ইব্রাহিম বলেন, গৃহস্থালির পণ্য কিনতে আমাদের প্রধান ক্রেতা নারী। কিন্তু গত কয়েকদিনের অবরোধের কারণে নারী ক্রেতার সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এভাবে চলতে থাকলে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূরের কথা, মেলায় অংশগ্রহণ বাবদ যে খরচ হয়েছে, তাও অর্জন হবে না।
×