ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেঁচেবর্তে থাকা মানুষ বিরোধী রাজনীতি থেকে দ্রুত মুক্তি চায়

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৫

বেঁচেবর্তে থাকা মানুষ বিরোধী রাজনীতি থেকে দ্রুত মুক্তি চায়

সমুদ্র হক ॥ আম জনতা আর কত জিম্মি হবে! স্বাধীনতার এত বছর পর বিরোধিতার নামে তাদের আর কত যাঁতাকলে পিষে মারবেন? মানুষ বিরোধী রাজনীতিকদের কৌশলী ভূমিকাকে কিছুতেই মানতে পারছেন না। বরং জিম্মিদশা থেকে এবার মুক্তি চাইছেন। বলছেন, অন্যথায় কড়ায়-গ-ায় হিসাব দিতে হবে।জীবনের পেছনে ছুটতে ছুটতে তারা এমনিতেই ক্লান্ত। চিৎকার করে ‘জনগণ জনগণ’ বলে রাজনীতিকরা মুখে ফেনা তুলছেন, সেই জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তারা কেউ কি দেখেছেন কেমন আছে মানুষ! চরম মাসুল দিতে হচ্ছে, দুর্ভোগের ফেরে পড়ে আপন জীবনটাকে হাতের মুঠোয় পুরে বেঁচে বর্তে থাকতে হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে শঙ্কা নিয়ে। সাধারণ মানুষের সরাসরি কথা, তাদের ভাবনাতেও আসেনি- এমন দুর্ভোগে পড়তে হবে। পাঁচ বছরের সরকারের একটি বছর গিয়ে কেবল দু’ বছরে পা দিল তাতেই এমন অধৈর্য বিরোধীরা। তাদের সাফ কথা, দেশে এমন তো কিছু ঘটেনি যে পাবলিককে জিম্মি করতে হবে! এ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়, শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই বিরোধীদের এই আন্দোলন। তাদের আর তর সইছে না। দেশ এবং দেশের মানুষকে যদি তারা ভালবাসে তাহলে পথঘাট বন্ধ করে দিয়ে দেশের সম্পদ নষ্ট করে জীবনের গতি কেউ রুদ্ধ করে দিতে পারে! লেখিকা হোসনে আরা মণি এক গল্পে লিখেছেন, ‘ওরা শামুকের মতো কৌশলী, নিশাচর ইঁদুর জানে পুরো দিনমান কিভাবে গর্তে লুকিয়ে থাকতে হয়। প-িত শিয়াল জানে এক কুমির ছানা ক’বার দেখাতে হয়। দাসেরা জানে কি করে আপন পিঠ বাঁচিয়ে চলতে হয়... সাধারণ জনগণ জীবনটাকে হাতের মুঠোয় ধরে কোন রকমে বেঁচে বর্তে আছে...।’ গণতন্ত্রের বর্তমানের অবস্থাটাও বোধকরি এমনই। জনগণের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা দেখেও বিরোধী দলের ‘বিজ্ঞ’ নেতারা বিদ্রূপের ক্রুর হাসিতে দম্ভ করে বলে, বেশ করেছি ভালই করেছি! নেতাদের এইসব কথা শুনে আতি নেতা, পাতি নেতা ফুঁচকে নেতা, নেতার হাতারা গ্রামীণ পালাগানের কোরাসের মতো করে বলতে থাকে, আহা বেশ বেশ বেশ...। বিরোধীদের রাজনীতি কি চমৎকার। কি শহর কি গ্রাম সাধারণ মানুষের একটাই কথা, এসব হচ্ছেটা কি? এই প্রশ্ন বা বিস্ময় বোধক কথার উত্তর তারা খুঁজে পাচ্ছে না। হাটে মাঠে ঘাটে দোকানে বাসাবাড়িতে অফিসে চায়ের আড্ডায় একটাই কথাÑ এরপর কি! স্বাভাবিকভাবে চলা দেশের মধ্যে বলা নেই কওয়া নেই কোন শৃঙ্খলা নেই হঠাৎ করেই বলা হলো টানা অবরোধ। অমনি অবরোধ। বিরোধীদের কথা দেশে গণতন্ত্র নেই। এই এক বছর কি তাহলে ঘুমিয়ে ছিলেন! রাজনীতিকদের একটা ধারা হয়েছে কথায় কথায় জনগণকে টেনে আনা। এই জনগণ মেনে নেবে না। কি নেবে না তা নিয়ে রাজনীতিকদের কোন ভাবনা নেই। এই সময়ে জনগণের একটাই কথা, অবরোধে সব কিছুই অসহনীয় হয়ে গেছে। মানুষের সহ্যের সীমা জানা ও বোঝা দরকার রাজনীতিকদের। গেল ক’ দিনে এই আম জনতা এতটাই ক্ষেপে আছে যে তারা এই আন্দোলনের নামে হঠকারিতা সহ্যই করতে পারছে না। প্রকৃত অর্থে এই বিষয়টিই তারা (জনগণ) মেনে নেবে না, তা কি রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন! এমনও বলাবলি হচ্ছে, ওরা যে কি করতে পারে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তারপরও সম্পদের যেন ক্ষতি না হয় এই ভয়ে ক্রিকেট খেলার ব্যাট ধরে রাখার মতো করে আছে তারা। তা না হলে কোন দিন বন্যার ঢলের মতো মাঠে নামত! কি জন্য এই অবরোধ তার সদুত্তরও মাঠ পর্যায়ের নেতারা দিতে পারছেন না। বলতে গেলে কার্যত তারা মাঠেই নেই। শামুকের মতো কৌশলী হয়েছেন। ইঁদুরের মতো দিনভর গর্তে লুকিয়ে থেকে রাতে বের হচ্ছেন। পাবলিককে বোকা মনে করে এক কুমিরের বাচ্চা দশবার দেখাচ্ছেন। এসব নেতা বুঝতে পারছেন না একবিংশ শতকের এই পাবলিকও এখন আর বোকা নেই। শিয়ালের কাছে কুমির তার ছানাকে পড়তে দেয় না। শিয়ালের কাছে মুরগি পালতেও কেউ দেয় না। এই ধূর্ত শিয়ালদের চিনেছে সাধারণ মানুষ। দেশের অস্থিরতার বিশ্লেষণও ঠিকমতো পাওয়া যায় না টিভি চ্যানেলগুলোতে। ক’ জন দর্শক তো অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, টিভি চ্যানেল খুললেই ওই একই চিত্র ‘আপনি কি আমাকে শুনতে পারছেন (এই বাক্যটি যে কিভাবে আবিষ্কার হলো!), ওখানকার অবস্থা কি। আপনি কিছু শুনেছেন। দুর্ভোগ কতটা তা বলুন (ছবিতে তো দেখাই যাচ্ছে)...।’ টিভির সচিত্র সংবাদের দিকে তাকিয়ে থেকেও মানুষ আঁচ করতে পারে না আসলেই হচ্ছেটা কি। এমনও শোনা যায় টিভি ক্যামেরা চলে গেলে আর কিছু নেই। এর নামই কি আম জনতাকে জিম্মি করে টিভি রাজনীতি! গণতন্ত্রের নামে দেশে এসব হচ্ছেটা কি! দেশ কতটা এগিয়ে যাচ্ছে তা তো সাধারণ মানুষ দেখতেই পারছে। মানুষকে অতটা বোকা ভাবা ঠিক নয়। ২ হাজার ১ সাল থেকে ২ হাজার ৫ সাল পর্যন্ত দেশে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে কি হয়েছে তা মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। সাধারণ মানুষ এখন ঠিকই হিসাব মেলায় কোন সরকারের আমলে কি হয়েছে। পাবলিক বখশিস চায় না হিসাবের পাওনা চায়। বর্তমানে পাবলিককে জিম্মি করে যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে এর জবাবদিহিতা কড়ায় গ-ায় দিতে হবে। ঠিক মতো উত্তর দিতে না পারলে নির্বাচনের ব্যালটে জনগণ তাদের ছুড়ে ফেলে দিতেও দ্বিধা করবে না।
×