ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছেন

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদা জিয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছেন

খালেদা জিয়া দেশের সরলপ্রাণ মানুষগুলোকে ‘ভানুমতীর খেল’ দেখাচ্ছেন। ভদ্র মহিলা একজন রাজনীতিবিদ এবং ‘তিনবার’ প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন বাংলাদেশের। তিনি আমাদের ‘অহঙ্কার’! সেদিন তাঁর গুলশান কার্যালয়ে সুদীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলনে কত যে কথা পুনরাবৃত্তি করলেন তার ইয়ত্তা নেই। তবে তাঁর দীর্ঘ কথনের এক পর্যায়ে সাত দফা দাবি উত্থাপন করে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এই না হলে ‘দেশনেত্রী’? দেশের জন্য তাঁর দরদ উতলে পড়ে, সে কথা তো আমরা হাড়ে হাড়ে জানি। জানি বলেই বলতে পারি, ‘কী অসাধারণ দেশপ্রেম তাঁর?’ তাইতো তিনি পূর্ববাংলার আপামর জনগণের প্রাণপণ যুদ্ধের সময় তিনি- মাদাম খালেদা জিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ওদের ক্যান্টনমেন্টে বিশেষ ব্যবস্থায় বিশেষভাবে নিযুক্ত সেনা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থেকে ৯ মাস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী- প্রাণঘাতী দিন অতিবাহিত করেছেন পরম পরিতোষে। তিনি- মাদাম জিয়া স্বামী মেজর জিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন কারণ স্বামী মেজর জিয়া পাকিস্তানী অস্ত্রবাহী বাঙালী নিধন অস্ত্র বোঝাই জাহাজ ‘সোয়াত’ খালাস করতে গিয়েছিলেন। তাই বোধহয় বোম্বে সিনেমার জবর সিকোয়েন্সের মতন মস্তানরা বেগম সাহেবাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সেনানিবাসে। সেখানে তাঁকে বিশেষ যতনে রাখবার জন্য সবিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল একজন সামরিক কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দিয়ে। কী মহানন্দেই না তিনি দিনরাত্রি যাপন করছিলেন? তা না হলে স্বামী তাঁর মেজর জিয়াউর রহমান বার বার তাঁকেÑ বেগমকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। লোকলস্কর ও টাকা পয়সাও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বেগমজী এমনই ‘আনন্দে’ ছিলেন যে তিনি তাঁর স্বামীর আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেদিন। শুধু কি তাই শোনা যায়, তিনি ‘স্বাচ্ছন্দ্যেই আছেন’ বলে নাকি ফিরে যাবার ডাককে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিজয় অর্জনের পর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ গাজীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন স্বামীর খোঁজে। ফরিদ গাজী মেজর জিয়ার খবর দিতে পারেননি। হন্যে হয়ে খুঁজেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত শোনা গেল, জিয়া খুবই ক্ষুব্ধ খালেদার ওপর, কারণ জিয়াকে বার বার প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশেষে বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করতেই বঙ্গবন্ধু তাঁকে বাড়ির ভেতর বসতে বলে জিয়াকে খবর দেন। মেজর জিয়া এলে তাঁকে বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ও আমার মেয়ে, ওকে তুই নিয়ে যা। তবেই জিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও খালেদাকে নিয়ে ঘরে তুলেছিলেন। এই পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে হলো এই জন্য যে, সেই খালেদা জিয়াই জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ‘রাজনীতি’ জগতে প্রবেশ করেন এবং জিয়াকে পুঁজি করে যে কার্যক্রম ও দল পরিচালনা করছেন, তাতে কেবলই মিথ্যাচার ও বিকৃতির আশ্রয় নিয়ে চলেছেন নিরন্তর। তিনি নিজে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংবর্ধনা নিয়েছেন এবং গালভরা বুলি আউড়ে বলছেন অনবরত, তারা এবং মুক্তিযুদ্ধ করে বিপুল রক্ত খরচেই নাকি এ দেশকে অর্জন করেছেন। কী নির্মম মিথ্যাচার। প্রতিটি বক্তৃতায় তিনি এই অসত্য ভাষণ দিয়ে তৃণমূল কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন। তাইতো তিনি ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কেন অন্যরা তাঁকে সমালোচনা করেন, এটাতো ঠিক নয়। কী অদ্ভুত, আশ্চর্যের বিষয়, একজন ‘নেত্রী তিন-তিনবার’ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি ‘মিথ্যাচার’ করেই চলেছেন অনবরত, কেন সরলপ্রাণ সাধারণ মানুষ তাঁর কথা বিশ্বাস করবেন না? দোষ তো জনগণের নয়, দোষ হলো এই নেতানেত্রীদের এবং যারা তাঁকে বাহবা দিয়ে নিরন্তর মিথ্যা বলাতে সহযোগিতা করছে সেইসব কপট চরিত্রের। প্রধানমন্ত্রীর আসন অলঙ্কৃত করেছেন নাকি তিন-তিনবার, তাহলে এই কপটতার আশ্রয় নিচ্ছেন কেন? এমন কপট না হতে পারলে যে তাঁর নেতৃত্ব এবং জিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দলীয় দাপট রক্ষা করা যাবে না। ভদ্র মহিলা যখন রাষ্ট্রপতির পতœী ছিলেন, তখন তাঁকে দেখেছি প্রেসিডেন্টের দাওয়াতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ যখন সাক্ষাত করতে গিয়েছি সস্ত্রীক তখন নিজেই তো দেখেছি, ‘লাজুক বধূ’ খালেদা জিয়া আমাদের স্ত্রী সহযাত্রীদের থেকে দূরে একা একা দাঁড়িয়েছিলেন। দেখে প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া এসে তাঁকে ডেঁটে গেলেন। তারপরও তিনি শোধরালেন না তবে জিয়া হত্যার পর যখন লাজলজ্জা ভেঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, তখন তিনি ‘ঘোমটা’ ফেলে দিলেন। প্রথমেই তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রিসভার অভিযোগে অপসারিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি এমএ, সাত্তারকে দলের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে খালেদা জিয়া আসনটি দখল করেন। এরই মাধ্যমে তিনি রাজনীতির দুষ্টনীতিতে সবক নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। হিংসা আর দখল তাঁর শুরু হলো ঘর থেকেই।... জেনারেল জিয়াউর রহমান যে ‘জাগো দল’ থেকে বিএনপি গঠন করলেন তাতে অনেক বরেণ্যজন ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কালক্রমে বেগম সাহেবার অটোক্রেসির জ্বালায় স্বচ্ছন্দবোধ করছিলেন না কেউ। তাঁরা একে একে নিভে গেলেন, বসে পড়লেন কিংবা সরে দাঁড়ালেন। এখন তো বিএনপি মাদামনির্ভর একটি দল যার নির্ভরতা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্ভরশীল। তবে ২০ দল মিলে নাকি জোট করেছে। তবে দল বলতে কর্নেল (অব) অলি আহমদ মেজর জেনারেল (অব) ইব্রাহিমের দলও আছে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বলে পরিচয় দেয় যারা, তারা তো ‘তালেবে এলেম’ অধ্যুষিত তাদের রাজনৈতিক দল বলা যাবে না কোনক্রমেই। এদের মধ্যে ক’টিইবা সক্রিয় এবং সদস্যবহুল। এদের পরিচয় নামসর্বস্ব। এদের কোন কার্যক্রম নেই। বিএনপি এদের কোন পাত্তাই দেয় না, কেন ২০ দল বল। সময় সংখ্যা হিসাবে এদের পণ্য করে মাত্র। বিএনপি ভয় পায় জামায়াতকে কারণ ওরা তো ধর্মের দোহাই দিতে রাজনীতিটাকে ঘোলাটে করে, তাছাড়া ওরা হত্যা, গুম খুন, রাহাজানি, ধ্বংসলীলা, লুটপাট এবং ধর্ষণে ওস্তাদ। বিএনপি তার নিজের শক্তিকে জোরদার করতে ওদের মুখাপেক্ষী। তাছাড়া জামায়াতকে দরকার, যেটুকু ভোটই তারা পাক না কেন, সেই সংখ্যক বিএনপির প্রয়োজন ক্ষমতায় যাবার জন্য। মানুষ যতই জামায়াতকে ঘৃণা করুক না কেন, জামায়াত তো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ধর্মের দোহাই পড়ে। কারণ দেশবাসী জনগণ অত্যন্ত ধর্মভীরু। তাঁরা ধর্মান্ধ নন, ধর্মবিরোধীও নন। তাঁদের সরল মনকে সহজেই ধর্মের নামে কাবু করে ফেলতে পাড়ে। একজন ভদ্রমহিলা, যিনি ‘দেশদেত্রী’ আখ্যায় অভিহিত, সেই ‘উর্বশী নারী’ প্রসাধনে উগ্র নান্দনিক, কেশ বিন্যাসে পটু, পরিধানে দুর্মূল্য বসন- তাবত অঙ্গ আভরণে সাধারণ মানুষ থেকে যোজন দূরত্ব বজায় রেখে যিনি ‘রাজনীতি’ (রাজনীতির সংজ্ঞায় এটি পড়ে কিনা বিচার্য) করার চেষ্টা করতে গিয়ে ভুলের পর ভুল করে, মিথ্যাচার করে রাজনীতিকে কলঙ্কিত, কলুষিত করেন নির্বিবাদে, আজ প্রমাণিত সত্য, তারই নাম মাদাম খালেদা জিয়া, যিনি বিগত তেত্রিশ বছর বৈরী স্বামীর সামরিক উপখ্যানকেই দলীয় পাথেয় করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার ঘোষকের দাবিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। (বাকি অংশ আগামীকাল)
×