ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ আদালতে মোটা বই কেটে স্থাপন করা হয়েছিল ৩ বোমা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

উচ্চ আদালতে মোটা বই কেটে স্থাপন করা হয়েছিল ৩ বোমা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির লাগাতার অবরোধের মধ্যে দুই বিচারক ও আইনমন্ত্রীর বাড়ি লক্ষ্য করে নাশকতার চেষ্টার পর খোদ উচ্চ আদালতের দুইটি বিচার কক্ষে (এজলাস) তিনটি বোমা পাওয়া গেছে। দুইটি মোটা বই অভিনব কায়দায় কেটে বোমাগুলো স্থাপন করা ছিল। রবিবার এসব ঘটনার পর গোটা সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের জন্য চরম নিরাপত্তা ঝুঁকি বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, এসব ঘটনার পর সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এনেক্স ভবনের ৯ নম্বর এজলাসে মাইনর এ্যাক্টর্স নামের প্রায় দুই হাজার পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মধ্যে বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পান সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ অফিসার। পরে পুলিশে খবর দেয়া হলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের এক সদস্য এসে বালতিতে পানি ও বালির মধ্যে করে সেটি ডিএমপি কার্যালয়ে সরিয়ে নিয়ে যান। পরীক্ষা করার পর বস্তুটি বোমাই ছিল বলে জানিয়েছেন বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সহকারী কমিশনার রহমতুল্লাহ চৌধুরী। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে এনেক্স ভবনের ১৭ নম্বর এজলাসে মাইনর এ্যাক্টর্স বইয়ের মধ্যে বোমাসদৃশ আরও দুটি বস্তু পাওয়া যায়। পরের বস্তু দুটিও বোমা বলেই জানিয়েছেন রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, বিস্ফোরক অধিদফতরের লোক এসে বোমাগুলো পরীক্ষা করেছে। এগুলো ছিল টাইমবোমা। তবে খুব বেশি শক্তিশালী নয়। বিস্ফোরিত হলে আশপাশের ৪/৫ জন আহত হতে পারত বলে রহমতুল্লাহ জানিয়েছেন। মূলত আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যেই বোমাগুলো এজলাসে রাখা হয়েছিল বলে তার ধারণা। তবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে বলে তিনি জানান। এদিকে, আদালত কক্ষ থেকে তিনটি বোমা উদ্ধারের পর সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় তল্লাশি শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তল্লাশির এক পর্যায়ে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলার একটি পাবলিক টয়লেট থেকে ৫ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। তবে সন্ধ্যার দিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সুপারিনটেনডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাস জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ওই পিস্তলটি তারেক নামের এক ওয়ার্ড কমিশনারের। সম্প্রতি মামলা সংক্রান্ত কাজে আইনজীবী সমিতি ভবনে এসে তার পিস্তলটি খোয়া যায়। পরে তিনি এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন বলে নিমেশ জানান। অন্যদিকে, হাইকোর্টের এনেক্স ৯ নম্বর এজলাসে বোমা পাওয়া যাওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই আদালতের বেঞ্চ অফিসার আবদুল হাসিব খান জনকণ্ঠকে বলেন, রবিবার দুপুরের বিরতির পর তারা এজলাসের ভেতরে যান। এ সময় তারা আইনজীবীদের বসার টেবিলের ওপর একটি মোটা আইনের বই দেখতে পান। পরে তিনি বইটি খুললে ভেতরে পাতা কেটে বসানো অবস্থায় লাল টেপ দিয়ে মোড়ানো বোমাটি দেখতে পান। এ সময় তার চিৎকারে উপস্থিত আইনজীবীরাসহ অন্যরা আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। পরে সেখানে পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা গিয়ে বোমাটি দেখতে পান। বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি হাবিবুল গনির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৯নং আদালতটিতে বসেন বলে হাসিব জানিয়েছেন। গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় সমাবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে সারা দেশে লাগাতার অবরোধের এই কর্মসূচী দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তারপর থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে। তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হাইকোর্ট বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের ধানম-ির বাড়ির সামনে বৃহস্পতিবার বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। একই দিনে ভোরের দিকে ফেনীতে ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের গ্রামের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনানীতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসার সীমানার ভেতরে ছুড়ে দেয়া একটি হাতবোমা বিস্ফোরিত হলে একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে তিনি সে সময় বাসায় ছিলেন না।
×