ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১২ জানুয়ারি ২০১৫

শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

হ্যাটট্রিক হাতছাড়া হয়ে গেল। নির্বাচিত হতে পারলেন না রাজাপাকসে। ভোটের বড় ব্যবধানে হেরে গেলেন বন্ধুর কাছে। ঘনিষ্ঠ মিত্রটি রাজনৈতিক পক্ষ বদল করে নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং বিজয়ী হলেন। বলা হচ্ছিল, শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে এটি। হয়েছেও তাই। ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যেতেই রাজাপাকসে পরাজয় স্বীকার করে নেন। প্রেসিডেন্ট হন মৈত্রীপালা সিরিসেনা। রাজনীতিতে মৃদুভাষী ও নম্র স্বভাবের বলে পরিচিত সিরিসেনা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ভোটে জিতেই তিনি সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। একে অপরকে সম্মান দেখানোর কথাটি জানাতেও ভোলেননি ৬৩ বছর বয়সী নতুন প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনে তাঁর প্রধান যে কৌশলটি ছিল, প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগের বহুল প্রচার, সে বিষয়ে তাঁর সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিটিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন শুক্রবার শপথ নিয়েই। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের পুরনো বন্ধু। যে ক’টি দেশ প্রথমদিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় শ্রীলঙ্কা তার মাঝে অন্যতম। এক সময় শ্রীলঙ্কা ব্রিটেনের কলোনি ছিল। ১৯৪৮ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দেশটির পরিচিতি ছিল সিলন হিসেবে। শুধু ব্রিটিশরাই ওই দেশটি দখল করেনি, পর্তুগিজ এবং গ্রিকরাও এসেছিল। পর্তুগিজরা এ অঞ্চলটির নামকরণ করেছিল ঈবরষধড়, যা ইংরেজীতে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ঈবুষড়হ; দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশরা পর্তুগিজদের দেয়া নামই রেখে দেয়। অশোকের পুত্র ভিসু মাহিন্দ বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য ওই অঞ্চল অর্থাৎ আজকের শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন। ওই সময়ের এক রাজা দেভানাম (উবাধহধস) বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই থেকে শুরু। এখন দেশটির জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ ভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যোগসূত্র থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্কোন্নয়নে বেশ সময়ক্ষেপণ হয়েছে। ২০০৮ সালে দু’দেশের মাঝে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়। গত মাসে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে দুদেশের মধ্যে প্রস্তাবিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের অনুরোধ জানান। এটা ঠিক বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার ফলে দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। ‘নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি’ চালুর প্রবক্তা শ্রীলঙ্কার নতুন এ প্রেসিডেন্টের আমলেও দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবেÑ এটাই প্রত্যাশা।
×