ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানে রাজনীতিকদের সম্মতিতেই সামরিক আদালত

ফের চালকের আসনে সেনাবাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

ফের চালকের আসনে সেনাবাহিনী

পাকিস্তানের পেশোয়ারের একটি স্কুলে তালেবান বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে হত্যার পর দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাবান দুই ব্যক্তি সেনা সদর দফতরে জরুরি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের সরকার প্রকাশিত একটি ছবিতে তাদের ভিন্ন ধরনের দেহভঙ্গি দৃষ্টিগোচর হয়। ছবিতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে উদ্বিগ্ন ও বিমর্ষ এবং তার পাশের ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফকে দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। অনেক পাকিস্তানীর জন্য এটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার এক প্রতীক। গোলযোগপূর্ণ একটি বছরের পর প্রধানমন্ত্রী শরীফ সরকার এখনও টিকে আছে এবং প্রায় সাত বছর ধরে চলা বেসামরিক শাসন সম্প্রসারিত করতে পারে। নাহলে পাকিস্তানের জেনারেলরা আবার চালকের আসনে ফিরে আসতে পারেন। জেনারেল শরীফ ২০১৩ সালের শেষের দিকে সেনাপ্রধান পদে নিয়োগ পান এবং প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নন। তার অধীনে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে উপজাতীয় এলাকায় ইসলামপন্থী জঙ্গীদের বিতারিত করতে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। তাদের এই বিজয় দাবি দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পথ সুগম করে দিচ্ছে। সামরিক আদালতকে ক্ষমতা দিয়ে গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট একটি সংবিধান সংশোধনী পাস হয়। সন্দেহভাজন ইসলামপন্থী জঙ্গীদের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে এই সামরিক আদালতের নেতৃত্ব দেবেন সেনা কর্মকর্তারা। দুই বছরের জন্য এসব আদালতের কার্যক্রম চলবে। সামরিক বাহিনী এর কাজে দ্রুত এগিয়ে চলছে। তারা শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছে, নয়টি নতুন আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং শীঘ্রই সেগুলো কাজ শুরু করবে। বিশ্লেষক ও আইন বিশেষজ্ঞরা সামরিক আদালত সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এর ফলে মৌলিক অধিকার বিনষ্ট হবে, বেসামরিক বিচার ব্যবস্থা কোণঠাসা হয়ে পড়বে এবং দেশটিতে সেনাবাহিনী পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হবে। দেশটিতে সেনাশাসন চলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু এখন দেশটির জেনারেলরা রাজনীতিকদের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেনি। আসলে তাদের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলো ছাড়াও কিছু উদারপন্থী রাজনৈতিক দল এবং বুদ্ধিজীবীরা সামরিক আদালত গঠনের পরিকল্পনার সমালোচনায় সরব। সন্ত্রাসের বিচারে সামরিক আদালত গঠনের পক্ষে পিপিপির শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আইনপ্রণেতারা অখুশি। সিনেটে পিপিপির পার্লামেন্টারি দলের নেতা রাজা রাব্বানি সংবিধান সংশোধনের এ ঘটনাকে পার্লামেন্টের জন্য ‘মৃত্যু দিবস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের সামরিক স্বৈরশাসকদের অবৈধ কর্মকা-ের বৈধতা না দেয়ার একটা সুনাম ছিল পার্লামেন্টের। আজ সেই পার্লামেন্ট তার ‘শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ’ করল। তবে সামরিক বাহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা তাদের নতুন ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিচার করবে না। যেমনটি হয়েছিল ১৯৮০’র দশকে। তারপরও সবকিছু সেনাপ্রধান জেনারেল শরীফের ওপর নির্ভর করছে। তার সুখ্যাতি গত বছর সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে এবং জনগণের দৃষ্টি এখন তার ওপরই নিবদ্ধ রয়েছে। তার পূর্বসূরি জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানিকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তা তিনি দূর করেছেন। তিনি নিজেকে সৎ ও উদ্যোমী নেতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একটি উদ্দীপক শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাকে নিয়মিত দুর্গম সেনা ফাঁড়ি পরিদর্শন, হাসপাতালে আহত সেনাদের দেখতে যাওয়া এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায়। জেনারেল শরীফের জনপ্রিয়তার আরও কারণ রয়েছে। মূলত তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভুলগুলোকেই কাজে লাগিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায়ই ভুল করেছেন। সাবেক সেনাশাসক পারভেজ মোশারফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চালাতে গিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আর আগস্ট মাস থেকে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান খানের হুমকি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী কষ্টকর অবস্থায় পড়েন। কারণ ইমরানকে সেনাবাহিনীর কাছে প্রিয় বলে মনে করা হয়। পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক ডনের সম্পাদক জাফর আব্বাস বলেছেন, আমার মনে হয় না জেনারেল শরীফের সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের ইচ্ছা আছে। তবে তিনি অবশ্যই চান দেশ পরিচালনায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×