ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহিংসতা গার্মেন্টসকে ফের আগের অবস্থায় নামাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

সহিংসতা গার্মেন্টসকে ফের আগের অবস্থায় নামাচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রানা প্লাজা ও তাজরীন ঘটনার পর যখন হারানো ভাবমূর্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের নামে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে আবারও আগের অবস্থায় টেনে নামাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে ১২ দিনে সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা ক্ষতির কথা জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, প্রয়োজনে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের সমস্যার কথা জানাব। সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে রাজনীতিবিদরা আমাদের বিনিয়োগকে জিম্মি করেছে। এতে গভীর সঙ্কটে পড়েছে পোশাক শিল্প। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাক শিল্পে এক উৎকণ্ঠাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই শিল্প এক রকম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার দায়ভার বহন করতে পারছে না তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা। তিনি বলেন, এক দিনের অবরোধে পোশাক খাতে প্রায় ৭ কোটি টাকার উৎপাদন ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়া গত ১২ দিনের অবরোধ, এয়ারপ্রেইট, ডিসকাউন্ট ও অর্ডার বাতিলের কারণে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অস্থিরতা চলতে থাকলে পোশাক শিল্পের অবস্থা ২০১৩ সালের চেয়েও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেরাই করুক। আমরা ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে মাথা ঘামাব না। ২০১৩ সালে আমরা সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান করার আহ্বান জানিয়ে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের এই নেতা বলেন, প্রয়োজন মনে করলে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাব। তাঁকে বুঝিয়ে বলব আমাদের এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, ক্রিসমাস শেষ হওয়ার পর বছরের শুরুতে এখন নতুন নতুন রফতানি অর্ডার পাওয়ার সময় হলেও ক্রেতারা অর্ডার দেয়ার জন্য এখন এখানে আসতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে আমরা যখন পোশাক শিল্পের আগামী দিনগুলোকে ঘিরে একটি স্বপ্ন রচনা করতে শুরু করেছিলাম, তখন রাজনৈতিক সহিংসতা একটি দানব আকারে আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছে। এ রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে ২০১৩ সালের মতো আবারও ক্রেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে এবং তারা বাংলাদেশে আসতে নিরুৎসাহিত হবেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ৪ জানুয়ারি থেকে দেশে লাগাতার অবরোধ চলছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগকে জিম্মি করে ফেলেছে। বিদেশীদের কাছে রেড সিগন্যাল পৌঁছে যাচ্ছে। যখন আমরা ক্রেতাদের বলছি, ‘আমরা ব্যবসায় ফিরে এসেছি’, তখন ক্রেতারা বলছেন, ‘গত ১২ দিন দেশে টানা অবরোধ চলছে, আমরাও তাই প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছি।’ ক্রেতাদের এই বার্তা পোশাক শিল্পের জন্য অশনি সঙ্কেত। ক্রেতারা যখন দেখেন, জানমালের নিরাপত্তা নেই, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই, তখন তারা বিপাকে পড়েন এবং অর্ডার দিতে নিরুৎসাহিত হন। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি এ খাতকে হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত করার জোর দাবি জানান। আমদানি ও রফতানি সচল রাখার স্বার্থে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোকে হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের জোর দাবি। আপনারা রাজনীতি করেন, আমরা অর্থনীতি সচল রাখার চেষ্টা করি। বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের শিল্পকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখুন। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আশঙ্কার বিষয় যে, ইতোমধ্যেই চলমান পরিস্থিতির কারণে কিছু কারখানা এয়ার ফ্রেইট, ডিসকাউন্ট, ক্যানসেলেশন, ডেফার্ড পেমেন্টের শিকার হয়ে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। গত বছরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার এয়ার শিপমেন্ট করতে হয়েছে। আর নয় হাজার কোটি টাকার পণ্য ডিসকাউন্ট হয়েছে। তার দাবি, যদি পোশাক উৎপাদন হরতাল বা অবরোধের কারণে ৫০ শতাংশও বিঘিœত হয়, তাহলে প্রতিদিন উৎপাদন ব্যাহত হয় অন্তত ২১৫ কোটি টাকার। রাজনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা রাজনীতি করেন আর আমরা অর্থনীতি সচল রাখার কাজ করি। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের শিল্পকে সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতামুক্ত রাখুন। পোশাক শিল্পের আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা, যেসব এলাকা থেকে শিল্পের বিভিন্ন এক্সেসরিজ আসে সেগুলো হরতাল ও অবরোধসহ সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমের আওতামুক্ত রাখুন, যাতে সাপ্লাই চেন অব্যাহত থাকে। আমদানি-রফতানি ও সাপ্লাই চেন ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার জন্য আমরা সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি দৃঢ় কণ্ঠে দাবি জানাচ্ছি।
×