ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিন ॥ আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদার বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিন ॥ আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপির সঙ্গে কোন ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার জন্য অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, বিএনপি একটি অশুভ দল, তারা যে কোন সময় অঘটন ঘটাতে পারে। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। আগামী ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ না নিলে রাজনীতি থেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সোমবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় নেতারা এসব কথা বলেন। প্রবীণ নেতা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, খালেদা জিয়া অবরোধ ডেকে ঘরে বসে আরাম-আয়েশ করছেন, আর সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের রক্ত নিচ্ছেন। দেশের জনগণ খালেদা জিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ কারণে খালেদা জিয়া চান অবরোধের নামে গাড়িতে আগুন দিয়ে, মানুষ হত্যা করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের আরেক প্রবীণ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশ গড়ার জন্য কাজ করছেন। আর খালেদা জিয়া দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছেন। দেশকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য অবরোধ ডেকে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার মধ্য পার্থক্য এটাই। একজন বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে চান আরেকজন বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অবাঞ্ছিত ও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার পোলা লন্ডনে বসে বাজে কথা কয়। আজকের এই জনসভা থেকে ঘোষণা করতে চাই, জনগণ খালেদা ও তাঁর পোলাকে বাংলাদেশে চিরদিনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে চায়। অবরোধকে অবিলম্বে অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও কোন গণতান্ত্রিক অধিকার নয়। প্রধানমন্ত্রী এখানে আছেন, আমি বলব, অবিলম্বে এই অবরোধকে অবৈধ ঘোষণা করে খালেদা জিয়াকে আইনের আওতায় আনা হোক। সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন, সার্টিফিকেট, টেলিফোন সবই ভুয়া, তাঁর পা থেকে নখ পর্যন্ত ভেজাল। নাটক করতে অভ্যস্ত। বিজেপিপ্রধান ও মার্কিন সাত কংগ্রেসম্যানের নামে মিথ্যা বিবৃতি দেন, সামান্য লাজ-লজ্জা নেই খালেদা জিয়ার। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিজেপিপ্রধানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়ে থাকলে রেকর্ড জনসমক্ষে প্রকাশ করুন। দেশের জনগণ ওই ভুয়া ও ভেজাল নেত্রীকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই সরকারকে অনুরোধ করব, ইন্টারপোলের মাধ্যমে যদি তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা যায় তাহলেই বাংলাদেশের জনগণ শান্তি পাবে। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৯ সালে নির্বাচনের মাঠে ফাইনাল খেলা হবে। আপনার সাহস থাকলে সেই খেলার মাঠে অংশগ্রহণ করবেন। ওই নির্বাচনেও আপনি হেরে যাবেন। এর আগে নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাসে আগুন দিয়ে, মানুষ হত্যার মধ্যদিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কোন লাভ হবে না। বেগম জিয়া আপনি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছেন। নির্বাচনে না এসে সব হারিয়েছেন। আপনার ভুলের খেসারত জনগণ দেবে না। দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি একটি অশুভ দল। তারা যে কোন সময় অঘটন ঘটাতে পারে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনারা ঐক্যবদ্ধ, সজাগ ও সতর্ক থাকুন। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনটা কি কোন পিকনিক-বনভোজন যে দাওয়াত দিয়ে আনতে হবে? নির্বাচন কী গণভোজ যে যখন খুশি তখন দেয়া যাবে! কিছু পত্রিকা এমনভাবে খবর প্রচার করে যেন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দেয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ কাউকে কোন বাধা দেয়নি। বিএনপি স্বেচ্ছায় নির্বাচন বয়কট করেছে। এখন তারা পস্তাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখেই একটি নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে এবং শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখেই বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে- বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন আহমেদের এমন নিবন্ধের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত পরশু (১১ জানুয়ারি প্রকাশিত) এক বুদ্ধিজীবী একটি জাতীয় দৈনিকে বলেছেন, খালেদা জিয়া নাকি এখন শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে পারেন। এই বুদ্ধিজীবী কেন খালেদা জিয়াকে আগে (৫ জানুয়ারির আগে) এ প্রস্তাব ও পরামর্শ দিলেন না? আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে এবং সে নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল হয়ে থাকলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। তা না হলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না। আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে, এর কোন বিকল্প নেই। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, একাত্তর ও পঁচাত্তরের ঘাতকের দল বিএনপি-জামায়াত নতুন করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। খালেদা জিয়া অমিত শাহ ও মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের নিয়ে মিথ্যাচার করে গোটা জাতিকে অপমানিত করেছেন। এজন্য তাঁকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, টাউটামির একটা সীমা আছে। জনগণের সঙ্গে টাউটগিরির পর এখন বিদেশীদের নিয়েও টাউটামি করছেন খালেদা জিয়া। আন্দোলনের নামে যেখানে মানুষকে হত্যা করছেন, আপনার (খালেদা জিয়া) ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে। যতই ষড়যন্ত্র করুক, আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। রাজপথে থেকেই তাদের ষড়যন্ত্রের দাতভাঙ্গা জবাব দেব।
×