ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাষী নজরুলকে জানানো হলো শেষ বিদায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

চাষী নজরুলকে জানানো হলো শেষ বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মায়ের কবরের পাশে চির শায়িত হলেন বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের মরদেহ সোমবার সকালে ল্যাব এইড হাসপাতালের হিমাগার থেকে বিএফডিসিতে আনা হয়। সেখানে শেষবারের মতো তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিএফডিসির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এমডি হারুন অর রশিদ সরকার। এ ছাড়াও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, শিল্পী সমিতি, জাসাসসহ আরও বহু সংগঠন। এ সময় পুরো বিএফডিসিতেই নেমে আসে শোকের ছায়া। নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, সুচন্দা, ববিতা, কবরীসহ এসেছিলেন চলচ্চিত্রাঙ্গনের প্রবীণ ও নবীনরা। অসুস্থ শরীর নিয়ে হাজির হয়েছিলেন পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকন। চলচ্চিত্র জগতের নির্মাতা, অভিনেতা ও কলাকুশলীদের শোকাবহ আগমনে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। প্রয়াত এই পরিচালককে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জনানোর পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আজ এমন একজন গুণী চলচ্চিত্র পরিচালককে দেশ হারালো যার অভাব পূরণ হবার নয়। আগামীতে এমন পরিচালক আসবেন কিনা সে কথা বলা কঠিন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমাকে এক সাক্ষাতকারে চাষী ভাই বলেছিলেন, আমার কিছু বাসনা অতৃপ্ত থেকে গেল। আমি ঠিক যেভাবে ছবি তৈরি করতে চেয়েছি সেভাবে পুরোপুরি পারিনি। তার সে বাসনা পূরণ করতে পারেনি কিন্তু তিনি দেশীয় চলচ্চিত্রের যে আবহ সৃষ্টি করে গেছেন তার তুলনা হয় না। শ্রদ্ধা জানাতে এসে প্রয়াত পরিচালককে নিজের ‘ভাল বন্ধু’ বলে স্মরণ করেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে এখন খুব দুর্দিন চলছে। চাষী নজরুল ইসলামের মতো এমন একজন পরিচালকের মৃত্যুতে বড় রকমের ধাক্কা খেলাম আমরা। তার মতো এমন গুণী পরিচালকের অভাব কোনদিনই পূরণ হবে না। অভিনেত্রী সুচন্দা বলেন, চাষী ভাইয়ের মতো ‘স্পষ্ট করে’ দেশ, মুক্তিযুদ্ধ আর সমাজের কথা চলচ্চিত্রে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের জন্য উনি যেভাবে ছবি নির্মাণ করেছেন, তার মতো করে এমন ছবি আর কেউ নির্মাণ করতে পারবে না। চাষী নজরুল নির্মিত ‘বিষবৃক্ষ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা স্মরণ করে স্মৃতিকাতর হন অভিনেত্রী চম্পা। তিনি বলেন, ছবিতে আমার চরিত্র খুবই কঠিন ছিল। আমি ওই সিনেমার মধ্য দিয়ে ভাল কাজের হাতেখড়ি পেয়েছি। ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ ও ‘শাস্তি’ সিনেমায় অনেক মানসম্মত চরিত্র পেয়েছিলাম। চাষী নজরুলের শেষ দুটি ছবি ‘ভুল যদি হয়’ ও ‘অন্তরঙ্গ’-তে কাজ করেছেন আলিশা প্রধান। তিনি বললেন, চিকিৎসকের বারণ সত্ত্বেও চাষী নজরুল ইসলাম ‘কোথায় আছ কেমন আছ’ নামে আরেকটি সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, যদি সুস্থ থাকি তাহলে এই সিনেমার কাজ শুরু করব। সেটা আর হলো না। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আগতদের অংশগ্রহণে তার তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীনগর (বিক্রমপুর) থানার নিজ গ্রাম সমষপুরে। সেখানে জানাজা শেষে আসরের পর প্রায়াত চলচ্চিত্র পরিচালকের মা শায়েস্তা খানমের কবরের পাশে তাঁর লাশ সমাহিত করা হয়। প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামের ছোট ভাই চাষী সিরাজুল ইসলাম এ খবরটি টেলিফোনে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ১১ জানুয়ারি রবিবার ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। উল্লেখ্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়, কিন্তু তার পরিবার থেকে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এ খবরটি নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু চাষী নজরুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সফল চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তাই তার মরদেহ শহীদ মিনারে এনে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রস্তাব রেখেছিলাম, কিন্তু তার পরিবার থেকে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
×