ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গ থেকে

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১৩ জানুয়ারি ২০১৫

পশ্চিমবঙ্গ থেকে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড দ-প্রাপ্ত জেএমবির তিন জঙ্গী ডেরা বেঁধেছিল পশ্চিমবঙ্গে। আবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই তিন জঙ্গী ফিরে এসেছে বাংলাদেশে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ বোমাবাজি, যানবাহনে আগুন লাগানো, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির তৎপরতার জন্য মাঠে নামানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসা জঙ্গীদের। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গী রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। পশ্চিমবঙ্গে তদন্ত সংস্থা এই বিষয়ে অবহিত করেছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাকে। মোস্ট ওয়ান্টেড জেএমবির দ-প্রাপ্ত তিন জঙ্গীর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধে নাশকতা ও নৈরাজ্যের তৎপরতায় থাকার খবর পেয়ে তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে ঢাকার গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, মোস্ট ওয়ান্টেড জেএমবির দ-প্রাপ্ত ওই তিন জঙ্গী হচ্ছে, জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ওরফে কওসর, সোহেল মাহমুদ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লাহ এবং তারিকুল ইসলাম ওরফে সুমন। বর্ধমান খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ঝাড়খ-ে জঙ্গী রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করা হয় গত শনিবার। ঝাড়খ- থেকে তাকে নিয়ে আসা হচ্ছে কলকাতার এনআইএ ক্যাম্পে। তাকে কলকাতার আদালতে হাজির করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এনআইএ’র জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড তিন জঙ্গী নাম বলেছে জঙ্গী রেজাউল করিম। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনিসংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে বোমা হামলা ও গুলি চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির জঙ্গীদের ছিনিয়ে নেয়ার অন্যতম আসামি বোমা মিজান। ঘটনার পর থেকেই পলাতক। ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে পর পর ধারাবহিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর মামলায় বহুসংখ্যক হতাহত হয়েছিল। এই মামলায় তার ৩০ বছর কারাদ- হয়। অপর জঙ্গী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লাহও ময়মনসিংহের ত্রিশালের প্রিজনভ্যানের হামলার আসামি। তারা ঘটনার পর পরই বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে এসে ডেরা বাঁধে। রাকিব হাসান ওরফে রাসেল, সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সজীবকে প্রিজনভ্যানে করে আদালতে নেয়া হচ্ছিল। মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গীরা প্রিজনভ্যনে হামলা করে তাদের ছিনিয়ে নেয়। প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গী ছিনিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত জঙ্গীদের মধ্যে রাকিব হাসনাত নামে এক জেএমবির জঙ্গী ক্রসফায়ারে নিহত হয়। অপর জঙ্গীরা পালিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গে। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গী রেজাউল করিম এই তথ্য দিয়েছে তদন্ত সংস্থা এনআইএকে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ময়মনসিংহের ত্রিশালের প্রিজনভ্যানে জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত জঙ্গীরা যে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে গেছে সেই বিষয়টি দিল্লীর গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছিল ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জঙ্গীরা ভারতের কোথায় লুকিয়েছে তার তথ্য দিতে পারেনি ভারতের গোয়েন্দারা। সম্প্রতি বাংলাদেশের গোয়েন্দারা কলকাতায় এবং কলকাতার গোয়েন্দারা ঢাকায় এসে মতবিনিময় করেন। দু’দেশের গোয়েন্দরা মতবিনিময়কালে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাউদ্দিন মাহিন, সোহেল মাহফুজ ও কওসর ভারতে লুকিয়ে আছে। এর মধ্যে জাহিদুল ওরফে কওসর পাকিস্তানের তেহেরিক-ই-তালিবানের কাছ থেকে বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে তদন্ত সংস্থা এনআইএ এর তদন্তে পাওয়া গেছে। তদন্ত সংস্থা এনআইএ গ্রেফতারকৃত জঙ্গী রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে, সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে মাহিন ও জাহিদুল ওরফে কওসরসহ পশ্চিমবঙ্গে যারা ডেরা বেঁধেছিল তারা আবার পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে। এর মধ্যে তারিকুল ইসলাম ওরফে সুমন এখনও পশ্চিমবঙ্গেই আত্মগোপন করে আছে। জঙ্গী রেজাউল করিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের পর সে প্রথমে পালিয়ে যায় মালদায়। তারপর মুর্শিদাবাদ হয়ে ঝাড়খ-ে যায়। ঝাড়খ-ে গিয়ে সে ও কওসর দু’জনে রাজমিস্ত্রির কাজ নেয়। কওসর, নাসিরুল্লাহসহ অন্যরা কোথায় লুকিয়েছে তা তার জানা নেই বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে জঙ্গী রেজাউল করিম। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গী রেজাউল করিমের দেয়া তথ্যানুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশের জঙ্গীরা আবারও ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে সে দেশের তদন্ত সংস্থা এনআইএ।
×