ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে স্বামীর আজ দ্বিতীয় বিয়ে

ফতোয়াবাজের কবলে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

ফতোয়াবাজের কবলে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ স্বামীর সঙ্গে মার্কেটে যেতে না চাওয়ায় বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে তিন সন্তানের জননী অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ সুমনা বেগমকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় চরমোনাই কওমী মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতির কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে সমাধান চান প্রবাসী স্বামী শাহীন সিকদার। শরিয়ত মোতাবেক তিনজন মুফতি লিখিতভাবে অভিযোগকারী স্বামী শাহিন সিকদারকে জানান, তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে যাওয়ায় একে অপরের জন্য তারা হারাম হয়ে গেছেন এবং তাদের বৈবাহিক কোন সম্পর্ক নেই। ওই ফতোয়ার কারণে সৌদি প্রবাসী স্বামী শাহিন সিকদার তিন সন্তানসহ গর্ভবর্তী প্রথম স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে আজ দ্বিতীয় বিয়ে করছেন। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী পৌর এলাকার দিয়াশুর মহল্লার। চরমোনাই জামেয়া রশীদিয়া আহসানাবাদ কওমী মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতির কাছে স্বামী শাহিন সিকদারের দেয়া লিখিত আবেদন ও ফতোয়া বিভাগের মুফতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানসহ তিনজন মুফতির স্বাক্ষরিত সমাধানপত্র অনুযায়ী মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, দিয়াশুর মহল্লার নুরুল ইসলাম সিকদারের সৌদি প্রবাসী পুত্র শাহীন সিকদারের সঙ্গে দীর্ঘদিন পূর্বে পার্শ¦বর্তী চরদিয়াশুর গ্রামের দিনমজুর আইউব আলী হাওলাদারের কন্যা সুমনা বেগমের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একে একে দুটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই গৃহবধূ সুমনা বেগম সবসময় পর্দানশীন হয়ে চলাফেরা করতেন। শাহীনের লিখিত আবেদনে জানা গেছে, অতিসম্প্রতি তার স্ত্রীকে নিয়ে তিনি মার্কেটে যেতে চাইলে সুমনা মার্কেটে যেতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে শাহীন রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে মৌখিকভাবে দু’তালাক দিয়ে তিন তালাকের হুমকি প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রী মার্কেটে গেলেও কোন দোকানে প্রবেশ না করে বাড়ি ফিরে আসেন। শাহীন বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে শ্বাসিয়ে বলেন, তার কোন মালামাল ধরলে তিন তালাক হয়ে যাবে। তার এ হুমকি উপেক্ষা করে ঘরের মালামাল স্পর্শ করায় সুমনা বেগম তিন তালাক হয়ে গেছে বলে শাহীন এলাকায় প্রচার করে। একপর্যায়ে দেড় মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুমনা বেগমকে তার বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দিয়ে শাহীন তার মৌখিক তালাকের বিষয়ে সমাধান চেয়ে চরমোনাই জামেয়া রশীদিয়া আহসানাবাদ কওমী মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতির কাছে লিখিত আবেদন করেন। নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ও ফতোয়ার অভিযোগ সম্পর্কে সৌদি প্রবাসী শাহীন সিকদার বলেন, রাগের মধ্যে আমি আমার গর্ভবতী স্ত্রী সুমনা বেগমকে তালাকের কথা বলেছি। পরবর্তীতে তার কাছে ভুল স্বীকার করা সত্ত্বে¡ও সে আমার ঘর করতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে আমি চরমোনাইর মুফতিদের কাছে লিখিত আবেদন করার পর জানতে পারি মুখের কথায় আমার স্ত্রী শরিয়ত মোতাবেক তালাক হয়ে গেছে। বিধায় মুফতিদের লিখিত সমাধানের ভিত্তিতেই আমি অন্যত্র দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় কোন আইনী প্রক্রিয়া মানা হয়নি। স্বামীর ভুল স্বীকারের অভিযোগ অস্বীকার করে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ সুমনা বেগম বলেন, শাহীন সিকদার প্রভাবশালী হওয়ায় সবকিছুই তাদের পক্ষে। আর আমার বাবা গরিব বলে সবকিছুই এখন আমাদের মুখবুঁজে সহ্য করে নিতে হচ্ছে। সুমনার মা রিনা বেগম জানান, বিয়ের পর থেকে পর্দানশীন হয়ে চলাফেরা করায় শাহীন ও তার পরিবারের লোকজনে প্রায়ই তার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে।
×