ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্র রাজনীতি হতে হবে আদর্শিক ॥ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

ঢাবির সমাবর্তনে উৎসবমুখর পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

ঢাবির সমাবর্তনে উৎসবমুখর পরিবেশ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ উৎসবমুখর উদযাপন আর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে কার্জন হলের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু এরপর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবর্তনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এবারের সমাবর্তনে ২৯ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক, ৪২ জনকে পিএইচডি, ২০ জনকে এমফিল, ৫৬৫ জনকে স্নাতকোত্তর এবং তিন হাজার ১৬০ জনকে স্নাতকসহ মোট ছয় হাজার ১০৪ জনকে বিভিন্ন ডিগ্রী দেয়া হয়েছে। সমাবর্তন বক্তা জেনেভাভিত্তিক মেধাস্বত্ব সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফ্রান্সিস গ্যারিকে দেয়া হয়েছে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রী। এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ছাত্র রাজনীতি এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদর্শের পরিবর্তে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ থেকে বের হয়ে এসে ছাত্র রাজনীতিকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে আদর্শিক ও গণমুখী করে তুলতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদের জন্ম দিয়েছে। মূলত ছাত্র রাজনীতির পথ ধরেই তাদের উত্থান ঘটেছিল। নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা হতে হবে আদর্শিক ও জনকল্যাণমুখী। ছাত্র জীবনের স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম, তাদের সবারই আদর্শ ছিল। সেই আদর্শ হলো দেশ ও জনগণের কল্যাণ। সেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের কোন স্থান ছিল না। মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ফ্রান্সিস গ্যারি বলেন, আমি তাদের স্বাগতম জানাতে চাই, যারা তাদের মেধা ও কষ্টের বিনিময়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রী লাভ করেছে। আমি তাদের ভবিষৎতের সফলতা কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, তারুণ্য, আশাবাদী ও শিক্ষা- এ তিনটি হচ্ছে পৃথিবীতে মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। তরুণরাই পারে আশাবাদী হতে এবং শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আসন অলঙ্কৃত করতে। শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা এগিয়ে যাওয়া মানে দেশ এগিয়ে যাওয়া, দেশ এগিয়ে যাওয়া মানে পৃথিবী এগিয়ে যাওয়া। ডিগ্রী দেয়ার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা এখনও একুশ শতকের সব পর্যায়ের শিক্ষাকে বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে পারিনি। আগামী ৫০ বছরে না হোক, অন্তত আগামী ২০ বছরে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী পরিমাণ বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন, সে রুপরেখা তৈরি করে তার বাস্তবায়ন আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনায় এখনও প্রাধিকার লাভ করেনি। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করো না, তোমাদের জাগ্রত সত্তায় এ বোধ যেন সব সময় সজাগ থাকে যে তোমরা এ দেশের সম্পদ, জাতীয় গৌরব বৃদ্ধি তোমাদের প্রতিজ্ঞা। দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতার পর শিক্ষার্থীরা সারা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েন। ক্যাম্পাসের সব প্রিয় জায়গাগুলোতে গিয়ে মাথায় থাকা কালো ক্যাপ শূন্যে ছুড়ে দিয়ে নিজেকে সফল গ্রাজুয়েট হিসেবে কল্পনা করার এক অনন্য প্রয়াস সবার মধ্যেই কাজ করছিল। আর একই সঙ্গে চলছিল ছবি তোলা, ক্লিক ক্লিক শব্দে আলোকিত হয়ে উঠছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা। সমাবর্তনের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, আজকের (গতকালের) এই দিনটি জীবনের স্মরণীয় একটি দিন। প্রতিটি মুহূর্তই যেন একেকটি নতুন প্রেরণার জন্মদাতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে মেধার স্বাক্ষর রাখার জন্য সনদ আর স্বর্ণপদক গ্রহণ করা জীবনের সবচেয়ে উপভোগ্য সময়। সত্যিকার অর্থে এমন উপভোগ্য সময় জীবনে বার বার আসে না। কলা ভবন থেকে ৪টি ককটেল উদ্ধার ॥ এদিন সকালে কলা ভবনের একটি শৌচাগার থেকে চারটি হাতবোমা উদ্ধার করে পুলিশ। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার দুপুরের আগে আগে কলা ভবনের নিচ তলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের টয়লেটে পরিত্যক্ত অবস্থায় চারটি ‘ককটেল’ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বোমাগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়।
×