ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তালিকা হচ্ছে চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের ॥ এ্যাকশনে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

তালিকা হচ্ছে চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের ॥ এ্যাকশনে পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ দেশব্যাপী চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কোন এলাকায়, কারা বোমা বানাচ্ছে, বোমা মারছে, যানবাহনে আগুন দিচ্ছে, এসব সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দেশব্যাপী চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে চোরাগোপ্তা হামলা করা অব্যাহত আছে। সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশের পর দেশের সকল মেট্রোপলিটন, বিভাগ, জেলা, থানা ও শহর পর্যায়ে চোরাগোপ্তা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্তদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ দিনের চোরাগুপ্তা হামলার আগুনে ঝলসে ও বোমার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৩ জন। আহত হয়েছে শতাধিক। দেড় শতাধিক যানবাহনে আগুন ও ভাংচুর হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের মানুষের সাড়া না পাওয়ায় সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তরা আকস্মিকভাবে চোরাগুপ্তা হামলা চালানোর কারণে এ ধরনের হতাহত ও ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সূত্র জানান, গত সোমবার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর চোরাগুপ্তা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান চালানোর মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এ জন্য স্থানীয় জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতা নিচ্ছেন পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে থানা, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সূত্র জানান, চোরাগুপ্তা হামলাকারীরা গত ৯ দিনে ৪ দফায় হামলা চালিয়ে নাশকতার আশ্রয় নিয়েছে রেলে। রেলের নিরাপত্তায় ৮ হাজার আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের সড়ক পথের হাইওয়েতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। টানা অবরোধ সফলে ব্যর্থ হয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালানোর কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি থানায় শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে ও নাম উল্লেখ ছাড়া অর্ধ লক্ষাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করেছে পুলিশ। ৫ জানুয়ারির নির্র্বাচনকে এক তরফা অভিহিত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পদত্যাগের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। তবে ৩ জানুয়ারিতে বিএনপির গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ ঘোষণা দিলে পরদিন ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় সহিংস সংঘাত। তারপর থেকে নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে রাস্তায় চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, পেট্রোল বোমা মেরে, যানবাহনে আগুন দিয়ে, ভাংচর করে হতাহত ও জানমালের ক্ষতি সাধন করা অব্যাহত আছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (মিডিয়া) মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীতে কারা চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানীর পার্শ¦বর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের সঙ্গে তার দফতরে আলাপ হলে তিনি জানান, কোন এলাকায় কারা চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে, বোমা বানাচ্ছে, বোমা নিক্ষেপ করছে তাদের চিহ্নিত করে তালিকা ধরে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক মানুষের সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। এজন্য ব্যাপক সাড়া মিলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি এ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, অবরোধ অনির্দিষ্টকালের হওয়ার কারণে চোরাগুপ্তা হামলাও অনির্দিষ্টকাল অব্যাহত থাকতে দেয়া যায় না। এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্ত কারা তাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয়সহ পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা কোন এলাকায় কারা সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তের কাজ করছে তাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয়সহ সার্বিক তথ্য পুলিশ প্রশাসনকে সরবরাহ করছি। বিশিষ্ট অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ডিসি সৈয়দ বজলুল করিম বলেছেন, টানা অবরোধ টেনে নেয়া অসম্ভব। অবরোধের নামে এখন যা চলছে, এটা একটা জোক বা তামাশা। দেশের কোথাও কোন অবরোধ নেই। আছে শুধু চোরাগুপ্তা হামলা। প্রয়োজনে যেসব সন্ত্রাসী, দুবর্ৃৃত্ত চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে হতাহত, জানমালের ক্ষতি সাধিত করছে তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিতে হবে।
×