ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;ফজর আহম্মেদের জবানবন্দী

সিরাজ মাস্টারের ইশারায় রাজাকাররা ৫ জনকে গুলিতে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ জানুয়ারি ২০১৫

সিরাজ মাস্টারের ইশারায় রাজাকাররা ৫ জনকে গুলিতে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী শেখ ফজর আহম্মেদ জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আসামি সিরাজ মাস্টারের ইশারায় রাজাকাররা ৫ জনকে ধরে আনে। এরপর তাদের নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। আজ ১৩তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, একাত্তরের ২২ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে মওলানা একেএম ইউসুফ, মোজাম্মেল ডাক্তার, রজব আলী ফকির, ইসহাক মিয়া, আসামি সিরাজ মাস্টার, আকিজ উদ্দিন কচুয়া থানা সদরে আসে এবং টিটি সি হলের সামনে একটি সভা করে। আমিসহ আরও কয়েকজন সে সময় কচুয়া বাজারে ছিলাম এবং সভার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হই। মওলানা একেএম ইউসুফ ওই সভায় বলেন, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করা হবে এবং সকলকে তাদের যুবক ছেলেদের রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের জন্য বলেন। তিনি আরও বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করা, অগ্নিসংযোগ করা, ধর্ষণ করা জায়েজ। সাক্ষী আরও বলেন, ওই সভায় যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে চান তাদের নামের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেন। যারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করেন তাদের মধ্যে ছিলেন আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার, ইদ্রিস শেখ, আসামি আকরাম খান, হাশেম আলী শেখ, মনিরুজ্জামান, ইদ্রিস মোল্লা, রুস্তম মোল্লা। তারাসহ আরও ২০-২৫ জন খুলনায় গিয়ে রাজাকারের ট্রেনিং গ্রহণ করে ১০ দিনের মধ্যে কচুয়ায় ফিরে আসে। কচুয়ায় ফিরে আসার পরে রাজাকাররা কচুয়ায় একটি এবং দৈবজ্ঞহাটিতে একটি রাজাকার ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন। দৈবহাটি রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন আসামি আকরাম খান। রাজাকাররা ওই ক্যাম্প প্রতিষ্ঠাতা করার পরে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু করলে আমি তখন ভারতে চলে যাই। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, ভারতে কিছু দিন ট্রেনিং নেয়ার পরে ৯ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন উত্তর বাগেরহাট সাব সেক্টরের কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে আমি বাগেরহাটে ফিরে আসি এবং ধোপাখালী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগদান করি। ২২ নবেম্বর ১৯৭১ সালে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আমিসহ মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী শেখ, জাহিদুল ইসলাম মুন্নু, সুবোধ চন্দ্র করাতী, রেকি করার জন্য আসি। আমরা রাজাকার ক্যাম্পের পাশে ভৈরব নদীর অপর প্রান্তে একটি বাগানে আশ্রয় গ্রহণ করি। বিকেল আনুমানিক ৩টার দিকে সোর্সের মাধ্যমে খবর পাই যে, রাজাকাররা ৫ জন লোককে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে ধরে এনেছে। যাদের ধরে আনা হয়েছিল তারা হলেন সতীশ চন্দ্র ম-ল, হাশেম আলী শেখ, বাবু খান, নজরুল ইসলাম ও মনিন্দ্র নাথ সাহা। বিকেল ৫টার দিকে দেখি যে, আসামি সিরাজ মাস্টার হাত তুলে ইশারা দিলে ওই পাঁচজনকে আসামি আব্দুল লতিফ তালুকদার, হাশেম শেখ, আসামি আকরাম খান, ইদ্রিস মোল্লা, রুস্তম মোল্লা মনিরুজ্জামানসহ ৭-৮ জন রাজাকার নদীর পাড়ে নিয়ে আসে। ওই ৫ জনকে নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়। আমিসহ আমার সঙ্গীয় অপর তিনজন উপরোক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। এ সময় আমাদের সঙ্গে কোন ভারি অস্ত্র না থাকায় আমরা সে স্থান থেকে আমাদের ক্যাম্পে ফিরে আসি। আমি অত্র মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছি। সাক্ষী ডাকে তিন আসামিকে শনাক্ত করেন। বাগেরহাটের এই তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরিতসহ ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। কচুয়া থানা পুলিশ ১১ জুন পলাতক আসামি আঃ লতিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খাঁনকে রাজশাহী থেকে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করে। ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচা শ্বশুর) পরিত্যক্ত খুপরি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে। এরা তিনজনই কারাগারে আটক রয়েছেন।
×