ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল

ক্রুইফের বাংলাদেশে আসা অনিশ্চিত!

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫

ক্রুইফের বাংলাদেশে আসা অনিশ্চিত!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের’ দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে, ততই এই আসর নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। দুই দফা তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে আসরটির। ষষ্ঠ দল চূড়ান্ত নিয়েও হয়েছে নাটক। এখন চলছে স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের বিদেশী কোচ যিনি হবেন, দলটির সেই সাবেক ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ এই আসরে বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আসবেন কি না এবং এলে সেটা কবে। বুধবার ক্রুইফের বাংলাদেশে আসা নিয়ে শোনা গেছে নানা কথা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানিয়েছেন, ‘ক্রুইফ আসবেন কি না, আর এলেও কবে আসবেন- পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন যিনি, তিনি বাফুফের সহ-সভাপতি এবং জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান তাবিথ আউয়াল। মঙ্গলবার ক্রুইফের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন তাবিথের কাছ থেকে আলোচনার সর্বশেষ আপডেট জেনে নিতে। তবে তাবিথ মঙ্গলবারই ব্যবসায়িক কাজে মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়ায় সেটা (কবে ক্রুইফ আসবেন) জানা সম্ভব হয়নি। তবে মঙ্গলবারই ক্রুইফের সঙ্গে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের ফোনালাপ হয়েছে। ক্রুইফ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত তাঁর বাবা মারা গেছেন ওইদিনই রাতে।’ তবে ক্রুইফ যে আসবেনই, এর নিশ্চয়তা দিতে পারেননি সোহাগ, ‘এখন বাবার মৃত্যুর কারণ দেখিয়ে বা অন্য কোন পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ক্রুইফ যদি বাংলাদেশে না আসে, তাহলে সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তাই আমরা এখনই চূড়ান্তভাবে বলতে পারছি না, ক্রুইফ আসবেনই। তবে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যুজনিত কারণে ক্রুইফ যদি দু’দিন পরেও আসেন, তাতেও কোন আপত্তি থাকবে না বাফুফের। ফলে টুর্নামেন্ট শুরু হতে ১৩ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে ঢাকায় এসে পৌঁছাননি ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। ক্রুইফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তিনি তাঁর বকেয়া পেলে তবেই ঢাকায় আসবেন। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ক্রুইফের বকেয়া পাওনার প্রায় ৭০ ভাগই তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে বাফুফে। বাকি ৩০ ভাগ পরিশোধ করতেও বাফুফের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক। এই ৩০ ভাগ টাকা আটকে আছে ব্যাংকের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে। এই টাকাও অচিরেই ক্রুইফ পেয়ে যাবেন বলে জানান সোহাগ। ফুটবলপ্রেমীরা অনেকেই বলছেন, ক্রুইফ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসবেন না। তিনি আসলে তার বকেয়া পাওনা টাকা আদায় করার জন্যই বাফুফেকে প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় দলের কোচ হবেন শুধু বঙ্গবন্ধু কাপের জন্য। বাফুফে যেহেতু তাকে তার পাওনা টাকার বেশিরভাগই পাঠিয়ে দিয়েছে, কাজেই বাবার মৃত্যুকে কাজে লাগিয়ে ক্রুইফ শেষ পর্যন্ত আর আসবেন না! লোগো উন্মোচন আজ ॥ আজ বুধবার দুপুর ১টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে উন্মোচিত হবে টুর্নামেন্টের লোগো। লোগো উন্মোচন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তাঁকে টুর্নামেন্টের সাংগঠিনক কমিটির প্রধানও করা হতে পারে। সেখানেই ঠিক হতে পারে টুর্নামেন্টের ড্র, সূচী ও অন্য বিষয়সমূহ। ড্র অনুযায়ী ৬ দলকে ২টি গ্রুপে বিভক্ত করা হবে। সিলেটে ৩ ম্যাচ এবং একটি সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে একটি সেমিফাইনালসহ মোট ৫ ম্যাচ। টুর্নামেন্ট শুরু হবে ২৯ জানুয়ারি। টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে ৮ জানুয়ারি। প্রাইজমানি ॥ বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের নানা দিক নিয়ে। এরপরই জানা যাবে টুর্নামেন্ট প্রাইজমানি থাকবে কি না এবং থাকলে সেটা কত। তবে বাফুফের একটি সূত্র জানিয়েছে এই আসরে প্রাইজমানি থাকারই সম্ভাবনা অনেক বেশি। শেখ হাসিনাকে টুর্নামেন্টের ‘চীফ পেট্রন’ করার সম্ভাবনাও আছে। ট্রফি ॥ বাফুফের প্রস্তাবনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ট্রফির উচ্চতা হবে ২২ ইঞ্চি, ট্রফিটি হবে সোনালি রংয়ের। রানার্সআপ ট্রফি হবে ২০ ইঞ্চি এবং ট্রফিটি হবে রূপালি রংয়ের। তবে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি কত পরিমাণ স্বর্ণ থাকবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে চূড়ান্ত হয়ে গেছে ট্রফি দুটির নকশা। এছাড়া টুর্নামেন্টের পরিচ্ছন্ন খেলা দলকে ‘ফেয়ার প্লে ট্রফি’ দেয়া হবে কি না, এটা জানা যাবে আজ। আমন্ত্রিত দল ॥ আমন্ত্রিত ৫ দলের মধ্যে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর ও বাহরাইন। দুটি দেশই তাদের জাতীয় অনুর্ধ-২৩ বা ‘এ’ দল পাঠাবে। বাকি তিনটি দেশ এখনও খেলার ব্যাপারে লিখিতভাবে কনফার্ম না করলেও তারা তাদের জাতীয় দল পাঠাবে বলে জানিয়েছে। ফিফার স্বীকৃতি পাওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত ॥ উল্লেখ্য, ফিফার আইন অনুসারে স্বীকৃতি পাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো কিন্তু একই শ্রেণীর নয়। এগুলোর মধ্যে আবার শ্রেণীবিভাগ আছে। এগুলো হচ্ছেÑ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ টায়ার। ‘টায়ার’ বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে স্বীকৃত প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ। তাছাড়া প্রীতি ম্যাচ খেললে সেটা হবে ‘ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীত ম্যাচ।’ আবার কোন প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট হলে সেটা হবে ‘ফিফা আন্তর্জাতিক ম্যাচ।’ আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টটির ম্যাচগুলো কোন ক্যাটাগরির স্বীকৃত ফিফা ফ্রেন্ডলি হবে? বাফুফে কি এ ম্যাচগুলোর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে? সোহাগ জানান, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ম্যাচগুলো যেন ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের স্বীকৃতি পায়, এ জন্য ইতোমধ্যেই ফিফার কাছে বাফুফে আবেদন করেছে। সেই সঙ্গে আমন্ত্রিত দলগুলোর কাছেও আবেদন ফরম পাঠানো হয়েছে।’ সোহাগ আরও জানান, এই ম্যাচগুলো যদি ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের মর্যাদা পায়, তাহলে সেটা প্রতিটি দেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও জাপানের সঙ্গে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ৭টি ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু বিবেচনা নেয়া হয় জাতীয় দলের খেলা ম্যাচগুলো। তবে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসির) র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হয়। সেটা হচ্ছে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে জাতীয় দলের এবং বাকি ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্লাব দলের ম্যাচগুলো পর্যালোচনা করা। দুই ভেন্যুর ফ্লাডলাইট সংস্কার ॥ সোহাগ জানান, আগামী সপ্তাহেই বাফুফের একটি প্রতিনিধি দল আবারও সিলেট জেলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যাবে। ওই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ফ্লাডলাইট সংস্কারের কাজ চলছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অর্থ পাওয়ায় ফ্লাডলাইটের জন্য যে ১২০০ লাক্স আলো দরকার, সেটা হয়ত দেয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আলো পাওয়া যাবে ১০০০ লাক্স। আর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের সংস্কার কাজ এগিয়ে চলছে।
×