ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের অর্থ শর্তেই আটকা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের অর্থ শর্তেই আটকা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শর্তের কারণেই আটকে আছে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের (এমসিএফ) অর্থ প্রাপ্তি। দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টার পরও গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফান্ডে যুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। সুশাসন সংক্রান্ত শর্তটি পূরণ করতে পারলেই এর সদস্য হওয়ার বিষয়টি আরও সহজ হতো বলে মনে করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ফলে কোয়ালিফাই করতে না পারায় এই ফান্ডে যুক্ত করা হয়নি। ফলে এমসিএফ থেকে অনুদান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। সূত্র জানায়, ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরের সময় ওই ফান্ডে অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে অনুরোধ জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন সরকারের প্রতিনিধি। যার কারণে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু শর্ত পূরণ না হওয়ায় এই ফান্ডে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও বর্তমান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান জনকণ্ঠকে বলেন, আগে আমি এই বিষয়টি দেখতাম সে হিসেবে বলতে পারি এই ফান্ডে যুক্ত হতে হলে ২১টি নির্দেশক পূরণ করতে হয়। তার মধ্যে ইতোমধ্যেই ১১টি নির্দেশক পূরণের ক্ষেত্রে সবুজ তালিকায় রয়েছে। চলতি বছর বাকিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গভর্নেসের বিষয়টিতে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ আপাতত থ্রেসহোল্ড কান্ট্রি হিসেবে কোয়ালিফাই করতে পারবে বলে মনে করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবরের দিকে এমসিএফের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ড গঠন করে এবং এটি পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)। বর্তমান এ কর্পোরেশনের পরিচালনা বোর্ডের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন হিলারি ক্লিনটন। ফান্ড গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। বেশ কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশ এ ফান্ডে যুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের আওতায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে নির্বাচিত দেশগুলোকে সহায়তা করে থাকে। এর একটি হচ্ছে থ্রেস হোল্ড অর্থাৎ কম অঙ্কের সহায়তা। এই প্রোগ্রামের আওতায় সাধারণত ১০ কোটি থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে। অন্যটি হচ্ছে কমপ্যাক্ট অর্থাৎ বড় অংকের সহায়তা। এর আওতায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান দেয়া হয়ে থাকে। ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়া মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ড থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে। এ দেশটি শুরুতে কম অঙ্কের অর্থায়ন দিয়ের সহায়তা পাওয়া শুরু করেছিল। এখন কমপ্যাক্ট প্রোগ্রামে যুক্ত হয়েছে। এই ফান্ডের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যুক্ত করতে প্রতিবছর বৈঠক করে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি)। ২০১২ সালের ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এমসিসির বৈঠক। এতে অংশ নেয়ার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরস্তু খান বৈঠক অংশগ্রহণ করেন। সূত্র জানায়, মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশক পূরণ করে কোন দেশকে যোগ্য প্রমাণ করতে হয়। এক্ষত্রে আগে ১৭টি নির্দেশক থাকলেও সর্বশেষ ২০১২ সালে ২১টি নির্দেশক যুক্ত করা হয়। নির্দেশকগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে আর্থিক উন্নয়ন, দুর্নীতি রোধ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, সুশাসন, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং দেশে যেসব কমিশন রয়েছে যেমন, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন এগুলোর স্বাধিনতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে যে পর্যায়ে রয়েছে এ অবস্থায়ও অনেক দেশ মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বলেও জানা গেছে।
×